মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৯ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
শাহরিয়ার মিল্টন, শেরপুর:
শেরপুরে ৩০ হাজার কোরবানীর পশু অবিক্রিত রয়ে গেছে। এবার কোরবানীর জন্য ৮৫ হাজার ৫৫০ টি কোরবানীর পশু প্রস্তুত করা হয়েছিলো। এতে বেকায়দায় পড়েছে জেলার খামারিরা। আবার কাঙ্খিত দাম না পেয়ে অনেক খামারীর এখন মাথায় হাত। তবে অবিক্রিত পশু বিভিন্ন া দিবস ও অনুষ্ঠানে বিক্রি হবে বলে প্রত্যাশা জেলা প্রানী সম্পদ বিভাগের। শেরপুর সদর উপজেলার লছমনপুরে জিহান ডেইরি ফার্মের মালিক রেহানা ইদ্রিস ব্যাংক ঋণ নিয়ে দেড়শটি বড় ষাড় গরু প্রস্তুত করেছিলেন কোরবানীর হাটে বিক্রির জন্য। প্রত্যাশা ছিলো ষাড় বিক্রি করে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করে লাভবান হবেন এ খামারি। ভালো দাম পাওয়ার আশায় ঢাকার বাটারার একশ ফিট সাঈদ নগর গরুর হাট ও মিরপুর গরুর হাটে দেড়শটি ষাড় গরু নিয়ে যায়। দীর্ঘ ১০দিন অপেক্ষার পরও পানির দামে ২৭টি গরু বিক্রি করা হয়। বাকী ১শ ২৩টি গরু ফেরত আনতে হয়। এতে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে এ খামারি। এভাবেই জেলার অধিকাংশ খামারি ও পাইকাররা গরু বিক্রি না করেই ফেরত এনেছে। জিহান ডেইরি ফার্মের ম্যানেজার মুকুল হোসেন বলেন, আমাদের মালিক ব্যাপক লোকসানে পরে গেছে। এবার গরুর দাম ছিলো কম। আর আশানুরূপ বিক্রিও করতে পারিনি। আমরা বিক্রির আশায় শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু ক্রেতোরা গরুর দামই করে না। কমদামে ২৭ টি গরু বিক্রি করে আসা যাওয়ার খরচ তুলে এনেছি। যদি খামার মালিকরা এভাবে লোকসান খাই তাহলে আমাদের মতো কর্মচারীরা কিভাবে কাজ করবে।
একদিকে জেলায় চাহিদার চেয়ে কোরবানী হয়েছে কম। ঢাকাসহ অন্য স্থানেও পশু তেমন একটা বিক্রি হয়নি। তাই চাহিদার চেয়ে বেশী গরু জেলার কোরবানীর হাটে আমদানী হওয়ায় অনেক কম দামে পশু বিক্রি করতে হয়েছে। আবার অনেকেই হতাশ হয়ে বাড়ী ফিরে নিয়ে গেছে তাদের কোরবানীর পশু। এদিকে বেশী দামে কাঁচা ঘাস, খড়, ভূসি, ভূট্টার গুড়া ও খৈলসহ কিছু ভিটামিন খাইয়ে পশু মোটাতাজা করায় পশু উৎপাদন করতে খরচ হয়েছে বেশী। দাম পেয়েছে কম। এতে হতাশ ছোট-বড় খামারি ও কৃষকরা। চরশেরপুরের গরুর পাইকার হামিদ মিয়া জানান, আমি ৫ টি গরু ঢাকায় নিয়েছিলাম,১ টি গরু বিক্রি করতে পেরেছি। দাম কম বলায় বাকি ৪ টি গরু ফেরত এনেছি। কামারচরের গরু খামারি মোঃ হারুন বলেন, দুটি গরু ঢাকা নিয়ে একটিও বিক্রি করতে পারিনি। দাম কম বলে। বাজিতখিলার মাইনুল হোসেন বলেন, শেরপুরের নওহাটা গরুর হাটে আমার একটি বড় গরু তুলেছিলাম। কিন্তু দাম কম হওয়ায় বিক্রি করিনি। ছোট ও মাঝারি গরুর দামই ভালো গেছে। এখন গরুটিকে আরও একবছর পালতে হবে। খোয়ারপাড়ের হযরত বলেন, এবার বড় গরুর দাম একবারে কম গেছে। আমার গরুটি তিন লাখ টাকা হতো। কিন্তু শেষের দিন কমদামে দুই লাখ টাকাতে বিক্রি করেছি। এতে আমার অনেক লোকসান হয়েছে। খাবারের যে দাম। কিভাবে খামারিরা টিকবে। জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্যমতে, এবার ঈদে জেলায় কোরবানীর পশুর চাহিদা ছিলো ৫৬হাজার ৪শ ৪৯টি। আর জবাই হয়েছে মাত্র সাড়ে ৫৪ হাজার পশু। জেলায় এবার মোট ২৫টি কোরবানীর হাট ৫টি অনলাইন প্লাটফর্মে কোরবানীর পশু বিক্রির নানাভাবে প্রচারনা চালানো হয়েছিলো। শেরপুর জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এবার জেলায় ৩০ হাজারের উপরে কোরবানীর পশু অবিক্রিত রয়েছে। আমরা আশা করি যে অবিক্রিত পশুগুলো রয়েছে তা আমাদের সারাবছর নানা দিবস ও অনুষ্ঠানে বিক্রি হয়ে যাবে। আমাদের সারাবছরই মাংসের একটা চাহিদা আছে। খামারি ভাইদের আমি চিন্তা না করতে বলবো। খাদ্যের দাম বেশি থাকায় এবার খামারিদের লাভটা কম হয়েছে। আর তাদের বিক্রির পরিমানটাও কম হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা থাকবে খামারিদের জন্য। আমরা আশা করবো পরবর্তীতে খামারিরা এ ক্ষতি পুসিয়ে ওঠবেন।