বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০২ অপরাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
শাহরিয়ার মিল্টন,শেরপুর :
রবি শস্য মৌসুমে কৃষি ও খাদ্যসমৃদ্ধ অঞ্চল শেরপুরে রেকর্ড পরিমাণ জমিতে সরিষা চাষে দ্বিগুণ লাভের আশা করছেন জেলার কৃষকরা। দিগন্তজোড়া মাঠে মাঠে হলুদের সমারোহ। হলুদ ফুলের মৌ-মৌ গন্ধে ফুলে ফুলে উড়ছে মৌমাছি। ক্ষেতের পর ক্ষেত ছেয়ে গেছে হলুদে। ফুলে ফুলে মৌমাছির মধু আহরণে ব্যস্ত আনাগোনা ও প্রকৃতিতে হলুদ বর্ণে শোভা পাচ্ছে শেরপুরের বিস্তীর্ণ সরিষার মাঠ। ছড়িয়েছে চারদিক সুবাস। পরিবেশকে করে তুলেছে মোহনীয়। অন্যদিকে সেই মোহনীয় পরিবেশ ও হলদে আভার পরশ নিতে ক্ষেতে ছুটছেন উৎসুক অনেকেই। এদিকে সরিষা ফুলের ছবি তুলতে ভিড় করছেন নানা বয়সী মানুষ।
জেলা খামারবাড়ী সূত্র জানায়, সরকার গত কয়েক বছর ধরে তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বর্তমান বাজারে ভোজ্য তেল সয়াবিন, পাম ওয়েল ও সরিষা তেলের নিয়ন্ত্রণহীন মূল্য বৃদ্ধি ও চলতি রবি শস্য মৌসুমে সরকারের বীজ ও সার প্রণোদনার কারণে চাষিরা সরিষা চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে পড়ায় এবার রবি শস্য মৌসুমে বুক ভরা আশা নিয়ে সরিষা চাষ করেছেন কৃষকরা। বিশেষ করে দেশে আমদানি নির্ভর ভোজ্য তেলের দাম ক্রমেই বাড়তে থাকায় দেশীয় সরিষার আবাদ বৃদ্ধিতে কৃষক পর্যায়ে প্রণোদনা ও প্রদর্শনী মাঠ বৃদ্ধি করে যাচ্ছে। ফলে গত ৫ বছরে জেলায় সরিষার আবাদ দ্বিগুণেরও বেশি জমিতে হলেও এর উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৪ গুণ। জেলায় এ বছর সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। চলতি মাসের মধ্যেই সরিষার ফলন ঘরে উঠে যাওয়ার আশা করছে কৃষি বিভাগ।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ৭১৫ হেক্টর জমিতে, এতে ফলন হয়েছিল ৭ হাজার ১৪৪ মেট্রিক টন। এরপর ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৬ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে ৮ হাজার ৫১২ মেট্রিক টন, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে ৯ হাজার ৭৪০ মেট্রিক টন, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭ হাজার ৮২২ হেক্টর জমিতে ১১ হাজার ২৯ মেট্রিক টন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১২ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে
১৭ হাজার ২১ মেট্রিক টন এবং চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৮ হাজার ১৮২ হেক্টর জমিতে ও ফলন আশা করা হচ্ছে ২৫ হাজার ৬৩৭ মেট্রিক টন। তবে চলতি বছর জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে সরিষার আবাদ হয়েছে ১৮ হাজার ৫৬১ হেক্টর জমিতে। এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ২৫ হাজার ৯৮৫ মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়েছে।
শেরপুর সদর উপজেলার লছমনপুর এলাকার কৃষক করিম মিয়া জানান, আমন ধান কেটে এবার ৫ একর জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। কৃষি বিভাগ এক কেজি বীজ ও ২০ কেজি সার দিয়েছে। ভালো আবাদ হয়েছে। আশা করছি বাম্পার ফলন হবে। আরেক কৃষক ফজলু হাসান জানান, তিনি সরকারি প্রণোদনায় দেড় একর জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। আমন ধানের পর স্বল্প সময়ে সরিষার আবাদ হওয়ায় তিনি বছরে ৩টি ফসল আবাদ করে লাভবান হচ্ছেন। নকলা উপজেলার কায়দা গ্রামের সরিষাচাষি শরিফুল জানান, যেসব জমিতে পানি জমে থাকায় সময়মতো আমনের চারা রোপণ করা যায়নি সেসব জমিতে সরিষার আবাদ বেশি হয়। সরিষা আবাদ খুবই লাভজনক।
এ ব্যাপারে শেরপুর জেলা কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক ড. সুকল্প দাস বলেন, সরকার দেশে ভোজ্য তেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে সরিষা ও তেলজাতীয় ফসল আবাদের ওপর জোর দিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে জেলার ৩০ হাজার কৃষককে প্রণোদনা হিসেবে বিনামূল্যে সরিষার বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে গত এক বছরেই দ্বিগুণ উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি জনসংখ্যা অনুপাত হিসেবে ৬০ ভাগ সরিষার চাহিদা পূরণ হয়েছে। তবে আগামী বছর যদি ফলন ২৬ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত করা যায় তবে জেলার শতভাগ চাহিদা পূরণ হবে ।