শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৩ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 3 minutes
শাহরিয়ার মিল্টন,শেরপুর:
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শেরপুর জেলা জাতীয় পার্টির মধ্যে কোন্দল প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। এ নিয়ে নব ঘোষিত জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পাল্টাপাল্টি সভা সমাবেশ করে চলেছেন। গত ১৩ জুন শহরের চকবাজার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে জেলা জাতীয় পার্টির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের এমপি। ওই সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন পার্টির জেলা সভাপতি মো. ইলিয়াছ উদ্দিন। এসময় জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান রহুল আমীন হাওলাদার, বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, সাবেক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মুজিবুল হক চুন্নু, ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অতিরিক্ত মহাসচিব মো. ফখরুল ইমাম, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোস্তফা আল মাহমুদ, রাজনৈতিক উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ সিরাজুল হকসহ জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে জাতীয় পার্টির শেরপুর জেলা শাখার সভাপতি মো. ইলিয়াছ উদ্দিনকে পুনরায় সভাপতি ও দলে সদ্য যোগদানকারী ভূমি ব্যবসায়ী মো. মাহমুদুল হক মনিকে সাধারণ সম্পাদক এবং এস.এম আশরাফকে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি।নতুন কমিটি ঘোষণার পর থেকেই ভূমি ব্যবসায়ী মো. মাহমুদুল হক মনি দলের কতিপয় দু’একজন সুযোগ সন্ধানী নেতা-কর্মীকে সাথে নিয়ে শেরপুর-১ আসনের সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের বিভিন্ন ইউনিয়নে জেলা সভাপতি বা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে নিজেকে এককভাবে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী দাবী করে মত বিনিময় সভা করে জনসাধারণের কাছে দোয়া ও ভোট প্রার্থনা করে যাচ্ছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।এদিকে ২৮ আগস্ট দুপুরে সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির উদ্যোগে শেরপুর টাউনের থানা মোড় এলাকায় ইলিয়াস প্লাজার দ্বিতীয় তলায় নব ঘোষিত সাধারণ সম্পাদক মো. মাহমুদুল হক মনি দলীয় শৃংখলা ভঙ্গ করে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্নসহ দলের চরম ক্ষতি করছেন এমন এজেন্ডায় এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোখলেসুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান, সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এবং জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মো. ইলিয়াছ উদ্দিন।সভায় বক্তব্য রাখেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ আতর আলী, মো. তাজুল ইসলাম হেলাল, মো. নবাব আলী, সাবেক পৌর কাউন্সিলর হারুন জিলানী, জাপা নেতা বাবু মানিক কর্মকার, কাজী শাহনেওয়াজ শাহীন, আবু সাঈদ খোকন, মো ওসমান গনি, তারেক মুহম্মদ আব্দুল্লাহ রানা, মো হাবিবুর রহমান মাস্টার, মো. নুরুজ্জামান, মো. আলতাফ হোসেন প্রমুখ।সভায় বক্তারা, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সংগঠন গোছানো ও নির্বাচনী প্রস্তুতি গ্রহণের উপর গুরুত্ব আরোপ করে শেরপুর সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ড কমিটি গঠনের তাগিদ দেন। বক্তারা আরও বলেন, দলে সদ্য যোগদান করেই জাতীয় পার্টিতে বিশৃংখলা সৃষ্টিকারী কোন নেতা-কমীর স্থান হবেনা বলেও হুশিয়ারী উচ্চারন করেন। বক্তারা, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেরপুর-১ (সদর) আসনে দলীয় একক প্রার্থী হিসাবে জেলা জাপার সভাপতি ও দলের দীর্ঘদিনের কান্ডারী মো. ইলিয়াছ উদ্দিনকে মনোনয়ন দেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় হাই কমান্ডের কাছে দাবি জানান। সভায় সদর উপজেলার ১৪ ইউনিয়নের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং বিভিন্ন উপজেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকগণ উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে গত ২৫ আগস্ট দলে সদ্য যোগদানকারী সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হক মনির আহŸানে শেরপুর সদরের তালুকপাড়ায় এক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেরপুর-১ (সদর) আসনে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি মনোনয়নের প্রত্যাশা ব্যক্ত করে নেতা-কর্মী ও জনগনের সমর্থন কামনা করেন মাহমুদুল হক মনি। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (নাজিউর রহমান মঞ্জু) জেলা সভাপতি আব্দুর রশীদ বিএসসি। সভায় উদয়ন গ্রæপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও শেরপুর জেলা জাতীয় পার্টির সদ্য ঘোষিত সাধারণ সম্পাদক মনি উপস্থিত সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এ বছর চরাঞ্চলে এমপি নিতে না পারলে আগামী ৫০ বছরেও এ এলাকায় এমপি আনতে পারবেন না। ওই সভায় মুঠোফোনে অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির (মো.আনোয়ার হোসেন মঞ্জু) কেন্দ্রীয় ভাইস-চেয়ারম্যান শেরপুর-১ আসনের সাবেক এমপি শাহ মো. রফিকুল বারী চৌধুরী।এ ব্যাপারে জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মো. ইলিয়াছ উদ্দিন বলেন, বিগত দিনে জেলা জাতীয় পার্টিতে কোন ধরণের কোন্দল ছিল না। আর পুরাতন কমিটিও এখনো বাতিল হয়নি। দলে সদ্য যোগ দিয়েই মাহমুদুল হক মনি অর্থনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে একের পর এক দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের কাজ করে চলেছেন। তার (মনি) বহিষ্কার চেয়ে দলের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা অনাস্থা প্রকাশ করেছেন। বিষয়গুলো লিখিত আকারে কেন্দ্রীয় কমিটিকে জানানো হবে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তার (মনি) বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে । মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে মাহমুদুল হক মনি বলেন, জেলার দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের যেহেতু আমাকে জেলার সাধারণ সম্পাদক হিসাবে ঘোষণা দিয়েছেন, ওইদিনই অটোমেটিক পুরাতন কমিটি বাতিল হয়ে গেছে। আমার বিরুদ্ধে দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের অভিযোগ ভিত্তিহীন। বরংচ উনিই (ইলিয়াছ) দলের নিয়ম-কানুন ভঙ্গ করছেন। দল থেকে একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন চাইতে পারেন, এটা দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের মধ্যে পড়ে না।