admin
- ১ নভেম্বর, ২০২২ / ১৯৩ Time View
Reading Time: 3 minutes
এম আর রাসেল হোসাইন, ঈশ্বরদী পাবনা :
পাবনাসহ ঈশ্বরদীর চাষিরা পেঁয়াজ চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন।পেঁয়াজ চাষ করে কম লাভবান হওয়ায় পেঁয়াজ চাষ নিয়ে এখন সিদ্ধান্তহীনতায় ভূগছেন অনেক চাষী । তারপরও পেঁয়াজ আবাদ চলছে উৎসব মুখর পরিবেশে। কৃষি শ্রমিকরা সূর্য ওঠার আগেই মাঠে হাজির হন। তারা প্রতিদিন পেঁয়াজ লাগিয়ে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা মজুরি পাচ্ছেন। পাশের গ্রাম আবার কেউবা দূরের গ্রাম থেকে পেঁয়াজ লাগাতে আসছেন। শ্রমিকরা ভালো মজুরি পেলেও চাষিদের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় তারা উদ্বিগ্ন। এবার জ্বালানি তেল ও সারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়ে গেছে উৎপাদন খরচ।
সারাদিন কাজ শেষে শ্রমিকরা বাড়ি ফেরেন সন্ধ্যার আগে। মজুরিও পাচ্ছেন ভালো । এলাকার শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী মানুষ পেঁয়াজের মাঠে। বাড়ির নারী ও পুরুষ সদস্যরাও কাজে সহায়তা করছেন। পেঁয়াজ চাষিরা জানান এ সময় কৃষি শ্রমিকের দাম বেড়ে গেছে। উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে জানা যায়, জমিতে পেঁয়াজ চাষ করতে হলে শুরুতেই পেঁয়াজ কেনা, জমি খাজনা, চাষ, সেচ, সার, গোবর, নিড়ানি, শ্রমিক ও উত্তোলন খরচ মিলিয়ে বিঘা প্রতি প্রায় ৪৫ থেকে ৫৫ হাজার টাকা খরচ হয়। এর পাশাপাশি যারা অন্যের জমি খাজনা নিয়ে আবাদ করেন তাদের বিঘা প্রতি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বেশী খরচ হয়ে থাকে। যত দিন যাচ্ছে খরচ ততই বাড়ছে। এছাড়া অনেক ছোট-বড় চাষি চড়া সুদে মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়েও পেঁয়াজ চাষ করেন।
কৃষকরা বলেন, পেঁয়াজ চাষে স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার সরকারি ঘোষণা থাকলেও সাধারণ চাষিরা সে সুবিধা পাচ্ছেন না। অনেকেই চড়া সুদে মহাজনী ঋণ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। গত বছরে চাষাবাদ করে কেউ কেউ চাষাবাদ করেনি এবার, তার মূল কারণই হলো কৃষকরা লাভবান না হওয়ায় পেঁয়াজ চাষ করছে না । সাহাপুর ইউনিয়নের কৃষক আশরাফুজ্জামান উজ্জল সরদার বলেন, আমি একশো বিঘা জমি চাষাবাদ করি। এবারো আমার জমিতে পেঁয়াজ চাষসহ কয়েক রকমের ফসল চাষ করছি। এ চাষাবাদ অবস্থায় কৃষি অধিদপ্তর থেকে কোন প্রতিনিধি সহযোগীতা বা পরামর্শ করেনি। আমার শত বিঘা আবাদ থাকলেও কোন কৃষি অফিসারের সহযোগীতা পাইনি। ছলিমপুর ইউনিয়নের মেহেদী ইসলাম বলেন, আমি কিং জাতের পেঁয়াজ চাষ করছি । সরাসরি পেঁয়াজের গুটি মাটিতে রোপন করেছি, সেগুলা থেকেই গাছ বের হচ্ছে। আমি নিয়মিত পরিচর্যা করছি। দুই বিঘাতে পেঁয়াজ চাষ করছি। সরকারীভাবে সহায়তা পেলে আমার মতো ছোট কৃষকরা সামনে বছর থেকে বেশী করে আবাদ করতে পারবে । লক্ষীকুন্ডার আখতার নামের আরেক কৃষক বলেন, আমি বর্তমানে ৭বিঘা জমি খাজনা নিয়ে পেঁয়াজ আবাদ করছি। বিঘা প্রতি সব খরচ মিলিয়ে আমার ৬০/৬৫ হাজার টাকার মতো খরচ হবে। আমি গত বছর ২৩০০ টাকা মণ বেছন কেনা ছিল ওগুলাই লাগাচ্ছি । গত বছর পেঁয়াজের আবাদ করে দেড় লক্ষ টাকা লোকসান হয়েছে দাম না পাওয়ায়। আমাদের কোন কৃষি অফিসার দেখতেও আসেনা, আমি টেনস এগ্রো কোম্পানীর অফিসার তারেক রহমান ও ডিলারের পরামর্শে চাষাবাদ করতেছি। দাদপুরের লিটন নামের কৃষক বলেন, আমি মুড়িকাটা পেঁয়াজের বেছন কিনে লাগাইছি। আমি পেঁয়াজের বেছন আগে কিনেছিলাম বাড়িতে এনে ২২১৫ টাকা মণ পড়েছিল। পড়ে অন্য কৃষকরা ১২০০-১৬০০ টাকা মণ কিনেছে । এতে আমার খরচটা বেশী সবার চেয়ে। আমি কয়েকবার নিড়াইছি, যতœ করতেছি। প্রতিবছরই আবাদ করি গতবছর কোন লাভ হয়নি পেঁয়াজ আবাদ করে, ৬০০/৭০০ টাকা মণ বিক্রি করেছি। এবারো চার বিঘা আবাদ করেছি ফলে এখন পর্যন্ত কোন সরকারী কৃষি অফিসার যোগাযোগ করেনি । আমরা কৃষক যারা আছি সরকারী সহযোগীতা পেলে ভালো কিছু করতে পারবো । কৃষকদের বিষয়ে টেনস এগ্রো লিমিটেড কোম্পানীর জুনিয়র টেরিটরি অফিসার তারেক রহমান’র কাছ থেকে জানতে চাইলে, তিনি বলেন আমরা যতোটুকু পারি কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সহযোগীতা করে থাকি। কৃষকদের সরাসরি দেখিয়ে দি কোন রোগ হলে কোন ঔষধ ব্যবহার করতে হবে। কৃষক যাতে লাভবান হয় সে প্রচেষ্টাই কাজ করছি কৃষকদের সাথে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর’র মিতা রানী সরকার জানান, এবার মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ হচ্ছে। এটার বেশী চাষ হয় লক্ষীকুন্ডা, সাহাপুর ও ছলিমপুর ইউনিয়ন’র এলাকাগুলোতে । ঈশ্বরদীতে এবার আমাদের এ বছরের লক্ষমাত্রা ৬৮০ হেক্টর, ফলনের টার্গেট ১২.৫৫ মেট্রিক টন, গতবার অর্জন হয়েছিল ৭৩৫ হেক্টর, ফলন হয়েছিল ১২.৫ মেট্রিক টন। কৃষকদের সাথে যোগাযোগ, পরামর্শ ও ট্রেনিং দেয়ার ব্যপারে জিজ্ঞাসা করলে বলেন, কৃষি বিভাগের তরফ থেকে পেঁয়াজ উৎপাদনের পরচা মোতাবেক কৃষকদের পেঁয়াজ চাষে উদ্বুদ্ধ করছি এবং বিভিন্ন প্রদর্শনীর মাধ্যমে নতুন পেঁয়াজের জাত ও দীর্ঘস্থায়ীভাবে সংরক্ষন করার প্রক্রিয়াসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষন দিচ্ছি।