শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৫ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
শাহরিয়ার মিল্টন,শেরপুর :
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কাঁকরকান্দি ইউনিয়নের মধ্যমকুড়া গ্রামের ঐতিহাসিক সুতানাল দীঘিতে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও দুই দিনব্যাপী বর্শি দিয়ে মাছ শিকার উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার (২১ ও ২২ সেপ্টেম্বর) দেশের বিভিন্ন জেলার সৌখিন মাছ শিকারীদের অংশ গ্রহনে এক মিলন মেলায় পরিনত হয় সুলতান দীঘি এলাকা। কৃর্তপক্ষ জানান, এবার ২০ হাজার টাকা করে ৬৭টি টিকিট ১৩ লাখ ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।ঐতিহাসিক সুতানাল দীঘি খননের সঠিক কোনো ইতিহাস আজো জানা যায় নি। তবে ১৩৫১ সালে সামন্ত রাজার ভালোবাসার নির্দশন হিসেবে তার স্ত্রী কমলা রাণী বা রাণী বিহরণীর ি নামে এই বিশাল দীঘিটি খনন করা হয় বলে স্থানীয়রা জানান। ঐতিহাসিক এই সুতানাল দীঘিতে প্রতি বছর সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর মাসে টিকিটের মাধ্যমে মাছ শিকার উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ৮/১০ ফুট গভীরতার ৬০ একর জমির বিশাল এই দীঘির বর্তমানে ১৯ একর ৭৪ শতাংশ পকুরে মাছ চাষ করা হয়। আর দীঘিরপাড়ের বাসিন্দা ১১৮টি পরিবারের সদস্য নিয়ে গঠন করা হয়েছে সুতানাল দীঘি পরিচালনা কমিটি। বিশাল এই দীঘির মাছ খেতে সুসাদু হওয়ায় মাছ শিকারের জন্য দেশের বিভিন্ন জেলার সৌখিন মাছশিকারীরা মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, সিএনজি, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলযোগে ছুটে আসেন এখানে। সামিয়ানা কিংবা তাবু টানিয়ে রাতদিন মাছ শিকার করেন তারা। আর মাছ শিকার দেখতে ছুটে আসেন হাজার হাজার উৎসুক মানুষ। এসময় বেশি মানুষের আগমনে এখানে গড়ে উঠে অস্থায়ী চা পানের দোকানপাট। হাজার হাজার টাকা বিক্রি হয়ে থাকে এসব দোকানগুলোতে। গত দুই বছরের চেয়ে এবার অনেক বেশি মাছ শিকারী অংশ গ্রহন করেছেন বলে সমিতির সদস্যরা জানান।সুতানাল দিঘি পরিচালনা সমিতির সভাপতি আক্তার হোসেন বলেন, এই দীঘিতে দেশীয় প্রজাতির রুই, কাতল, মৃগেল, ব্রিকেট, সিলভার কার্প ও কার্পিও মাছসহ নানা জাতের মাছ সমিতির মাধ্যমে চাষ করা হয়। এখানে ১ কেজি থেকে শুরু করে ১৫/২০ কেজি ওজনের মাছ রয়েছে। টিকিটের মাধ্যমে শুধুমাত্র বর্শি এ মাছ শিকার উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। মাছ চাষের বিক্রিত লভ্যাংশের টাকা সমিতির সদস্যদের মাঝে সমহারে বন্টন করা হয়। মাছ শিকার উৎসবের সময় দীঘির চারপাশে মাচাং তৈরি করে প্রতি মাচাং এর জন্য ২০ হাজার টাকা করে টিকিট বিক্রি করা হয়। একেকটি মাচাংএ ৮/১০ টি বর্শির সাহায্যে মাছ ধরতে পারেন শিকারীরা। এ বছর গাজীপুর, শেরপুর, টাঙ্গাইল, জামালপুর, নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ জেলার সৌখিন মৎস শিকারীরা টিকিট কিনে মাছ শিকার করেছেন। তিনি আরো জানান, এবার ২০ হাজার টাকা করে ৬৭টি টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। এভাবে আরো কয়েক ধাপে মাছ শিকারের টিকিট বিক্রি করা হবে।টাঙ্গাইলের মৎস শিকারী আবদুল আজিজ বলেন, আমরা পাঁচজন মিলে প্রতিবছর এই দীঘির মাছ শিকার করতে আসি। এবারও ২০ হাজার টাকা দিয়ে টিকিট কিনেছি। ইতোমধ্যে মাঝারি আকারের কিছু মাছ শিকার করেছি। টিকিট কেনার ২০ হাজার টাকার মাছ শিকার করতে পারবেন কি না? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন টাকা নয়, মাছ শিকার করা হলো আমাদের নেশা। তাই অনেকটা শখ করেই আমরা মাছ শিকার করতে আসি।কাকরকান্দি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নিয়ামুল কাউসার বলেন, দুরদুরান্তের মাছ শিকারীদের অংশ গ্রহনে প্রতি বছর সুলতান দিঘিতে এক মিলন মেলায় পরিনত হয়। এছাড়া জেলাার ঐতিহাসিক স্থান হওয়ায় বছরের প্রায় প্রতিদিনই উৎসুক মানুষ কিংবা পর্যটকরা ছুটে আসেন এই দীঘিটি দেখতে। এখানে সুন্দর মনোরম পরিবেশে শিকারীরা মাছ শিকার করেন। তবে তিনি বলেন, এই দীঘিতে আসার কিছু অংশ ও পুকুরের চারপাশের রাস্তা এখনো কাঁচা রয়েছে। এসব রাস্তা পাকাকরণ করা হলে মাছ শিকারী কিংবা পর্যটকরা এখানে এসে স্বাচ্ছন্দ্যে মৎস্য শিকার ও ভ্রমন করতে পারতেন।