মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৮ অপরাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
হারুন উর রশিদ সোহেল, রংপুর ব্যুরো:
এক সময় প্রমত্ত তিস্তা নদীর ছিল প্রলয়ঙ্করী রূপ। তীর ভাঙা পথচলার মধ্যে ভাসিয়ে নিত শহর-বন্দর গ্রাম। তিস্তার করাল গ্রাসে বিলীন হয়ে যেত ফসলি জমি, লোকালয় ও হাটবাজার। ঠিক আজ থেকে তিন যুগ আগের কথা। এভাবেই পুরোপুরি বিলীন হয়ে গিয়েছিল গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের মধ্যতারাপুরের ডাইরপাড়া গ্রাম। নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল গ্রামটির বসতবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা আর দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ। উপজেলা সদর থেকে সোজা উত্তর দিকে মাইল দুয়েক দূরে ছায়াঢাকা, পাখিডাকা মধ্যতারাপুরে ডাইরপাড়া গ্রামের অবস্থান। গ্রামটিতে বাস করত নানা শ্রেণি-পেশা ও ধর্মের মানুষ। মাঠে ফলত সোনার ফসল। শান্তিতেই কাটছিল ডাইরপাড়ার মানুষের গ্রামীণ জীবন। কিন্তু সেই শান্তি কেড়ে নিয়েছিল প্রলয়ঙ্করী তিস্তা। আজ থেকে প্রায় ৩ যুগ আগে আশির দশকের মধ্যভাগে সবকিছু গ্রাস করে নেয় তিস্তা। সেই সঙ্গে বিলীন হয়ে যায় গ্রামের মেঠোপথ। বসতবাড়ি হারিয়ে যে যেখানে পারে ঠাঁই নেয় মাথা গোঁজার। ঠিক যেন ‘সকাল বেলার আমির রে ভাই ফকির সন্ধ্যাবেলা’ লোকগানের মতো। অধিবাসীদের মধ্যে যারা একসময় শ্রমিক খাটাতেন ভাঙনের কবলে পড়ে তারা নিজেরাই হয়ে পড়েন শ্রমিক। আশির দশকের শেষ দিকে নির্মিত হয় ডালিয়া তিস্তা ব্যারাজ। শান্ত হয় প্রমত্ত তিস্তা। পলি জমে ধীরে ধীরে জেগে ওঠে চর। আবার গড়ে ওঠে মধ্যতারাপুর ডাইরপাড়া গ্রাম। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অধিবাসীরা আবার ফিরতে শুরু করেন নিজ ভূমিতে। ফলাতে শুরু করেন সোনার ফসল। যার যার মতো বুঝে নেন বাড়ির সীমানা। কিন্তু বাড়িতে কিংবা ফসলের মাঠে যাওয়ার নেই কোনো রাস্তা। কষ্ট হয় শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়া। রাস্তার অভাবে বাড়িতে গাড়ি, মাইক্রো না ঢোকায় ছেলেমেয়েদের ভালো ঘরে বিয়ে দিতে পারেন না তারা। অধিবাসীদের সমস্যা দূরীকরণে নেওয়া হয় দখলে থাকা মেঠোপথগুলো উদ্ধারের ব্যবস্থা। গেল বছর স্থানীয়দের সাথে নিয়ে ইউপি সদস্য জাহিদুল ইসলাম নকশা অনুযায়ী লাল নিশান দিয়ে চিহ্নিত করেন সেই হারিয়ে যাওয়া তিন মেঠোপথ। স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে মাটি কেটে শুরু হয় রাস্তার নির্মাণকাজ। পরে, কর্মসৃজন প্রকল্পের আওতায় ধীরে ধীরে চলতে থাকে কাজ। সরেজমিন দেখা যায়, মানচিত্র অনুযায়ী মোড়-গোলজার খলিফার বাড়ি-ঈদগাহ মাঠ পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা, মতিনের বাড়ি-কবরস্থান পর্যন্ত প্রায় ৫০০ মিটার এবং মতিন খলিফার বাড়ি থেকে নূরুজ্জামানের বাড়ি পর্যন্ত ২০০ মিটার মানচিত্র অনুযায়ী বিলীন হয়ে যাওয়া রাস্তা বের করার পর গত বছরেই অল্প অল্প করে মাটি দিয়ে ভরাট করার ফলে রূপ ধারণ করেছে রাস্তার। বাকি অংশে কাটা হচ্ছে মাটি। মাস কয়েক আগে দু’ধারে লাগানো হয়েছে সারি সারি ইউক্যালিপটাস গাছের চারা। রাস্তা দিয়ে চলতে দেখা যায় পথচারী ও ঘোড়ার গাড়ি। স্থানীয়রা বলছেন, রাস্তাটি উঁচু করতে পারলে একদিকে মাঠ থেকে কৃষকদের ফসল আনা, কবরস্থান, ঈদগাহ মাঠে যেতে সুবিধা হবে, অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়া-আসা এবং ভালো পরিবারে ছেলেমেয়েদের বিয়ে দিতে পারবেন তারা। আর এজন্য প্রয়োজন স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সহযোগিতা। ইউপি সদস্য জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘তিস্তার ভাঙনে তিন যুগ আগে রাস্তাগুলো বিলীন হয়। কয়েক বছর পর জেগে ওঠে চর। গড়ে ওঠে জনবসতি। মাঠে মাঠে ফলছে ফসল। ইচ্ছে থাকলেও রাস্তাঘাটের অভাবে ছেলেমেয়েদের ভালো ঘরে বিয়ে দিতে পারেন না অভিভাবকরা। রাস্তা বের করতে সবাই সহযোগিতা করছেন। বন্যা থেকে রক্ষা পেতে উঁচু করা দরকার রাস্তাগুলো। এজন্য উপজেলা এলজিইডি এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সহযোগিতা প্রয়োজন। রাস্তাটির কাজ সম্পন্ন হলে ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে যাতায়াতে সুবিধা হবে জানিয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. ওয়ালিফ মন্ডল বলেন, তারাপুরের ডাইরপাড়া গ্রামের রাস্তাটি জনগুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় আমরা গতবারই ইজিপি কর্মসূচির দ্বারা কাজ শুরু করেছি। রাস্তাটি বন্যা সহনশীল করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান ও মেম্বারের সাথে পরামর্শ করে কাজ করব।