শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৭ অপরাহ্ন
Reading Time: 3 minutes
মাসুদ রানা রাব্বানী,রাজশাহী:
নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষের মাংসের চাহিদা মেটে ব্রয়লার ও সোনালী মুরগি দিয়ে। তবে বাজার থেকে ক্রেতারা যে সোনালী মুরগি কিনে খাচ্ছেন। সেটি কি আদৌ সোনালী মুরগি? নাকি অন্য জাতের মুরগি?জানা গেছে, দেখতে সোনালী মুরগি হলেও এটি আসলে সোনালী মুরগি না। বাজারে বিক্রি করা এই মুরগি সোনালীর চেয়ে বড় ও ওজনে বেশি। ক্রেতারা বলছেন, এর মাংসের স্বাদ নেই। কিছুটা ব্রয়লার মুরগির কাছাকাছি।পোল্ট্রি মুরগি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে খুব কম সোনালী মুরগি পাওয়া যায়। সোনালীর চাহিদা বেশি। মাসে দুই থেকে তিনদিন কিছু বিক্রেতার কাছে সোনালী মুরগি পাওয়া যায়। পুরো মাসই সোনালীর নামে বিক্রেতারা ক্রেতাদের কাছে ভিন্ন জাতের মুরগি বিক্রি করছেন। শুধুমাত্র বাজারে সোনালীর নামে আট জাতের মুরগি কেনা-বেচা হয়। এই আট জাতের মুরগিগুলো শুধু মাত্র বিক্রেতারাই চেনেন।ক্রেতাদের কাছে সব জাতই সোনালী নামে পরিচিত। মুরগিগুলো দেখতে সোনালীর মত। কিন্তু সোনালী না। এই মুরগিগুলো হচ্ছে- ক্লারবার্ড, ক্লাসিক, কয়লার, সুপার বার্ড, সুপার হাই ব্রিড, হাই সুপার, ফিপিএফ-৩, হাইব্রিড সোনালী।মুরগি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ব্রয়লার মুরগির মাংস দ্রæত বৃদ্ধি পায়। সেই তুলনায় সোনালী মুরগির মাংস কম বৃদ্ধি পায়। সোনালী আকারে ছোট। যদিও বা তাদের লালন-পালনের সময়কাল অনেকটাই একই। তবে ব্রয়লারের তুলনায় সোনালী মুরগিতে কিছুটা মুনাফা কম। আবার সোনালীর তুলনায় বেশি মুনাফা ক্লারবার্ড বা ক্লাসিক জাতের মুরগি পালনে। ব্রয়লার মুরগি সাধারণত দুই থেকে আড়াই কেজির উপরে হয়। সোনালী মুরগির নামে বাজারে চলা ক্লাসিক মুরগি ওজন হয় ৮০০ গ্রাম থেকে ১ কেজির কাছাকাছি। তবে সোনালী মুরগির ওজন ৪০০ গ্রাম থেকে ৬০০ গ্রাম হয়ে থাকে। সোনালী মুরগির সবচেয়ে বেশি চাহিদা রোস্ট হিসেবে।রাজশাহী নগরীর বিনোদপুর, কাটাখালী, তালাইমারী, সাহেব বাজার, খড়খড়ি বাজারের মুরগি ব্যবসায়ীরা জানান, দীর্ঘদিন থেকে সোনালী মুরগি পাওয়া যায় না। কোন কোন সময় পাওয়া যায়। তবে তুলনায় অনেক কম। সোনালী মুরগি আকার ও ওজনে কম হওয়ায় এর চাহিদা বেশি। যারা বেশি টাকায় দেশী মুরগি কিনতে পারেন না। আবার ব্রয়লার মুরগি খান না। তারাই বেশি সোনালী মুরগি কিনে থাকেন। কিন্তু সোনালী মুরগির সরবরাহ না থাকায় ক্লাসিকসহ বিভিন্ন মুরগি তারা বিক্রি করে থাকেন। বাজারে ক্লাসিক মুরগিগুলো সোনালী মুরগির নামে প্রচলিত রয়েছে।রাজশাহীর বিনোদপুর বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী ওবাইদুর রহমান বলেন, প্রায় আট থেকে নয় মাস হলো সোনালী মুরগি পাইনি। সাবার কাছে একই অবস্থা। কারও কাছে সোনালী মুরগি নেই। সবাই ক্লাসিক মুরগি বিক্রি করছে। সোনালী মুরগির নামে ক্লাসিক মুুরগি বিক্রি করছে সবাই। জয়পুরহাট সোনালী মুরগির উৎপাদন কেন্দ্র। সেখানেই সোনালী মুরগি নেই। এছাড়া আশপাশের খামারিরাও ক্লাসিক মুরগি পালন করে থাকেন। আমাদের কাছে সেই মুরগিগুলো তারা বিক্রি করে তারপর আমরা ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করি।সোনালী মুরগি ক্রেতা সঞ্জয় কুমার। তিনি জানেন না সোনালী মুরগির নামে কি মুরগি কিনছেন। তবে তিনি দোকানে এসে বিক্রেতার কাছে সোনালী মুরগি চেয়েছেন। আর বিক্রেতা ক্লাসিক মুরগি দিয়েছেন। মুরগির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, এই মুরগিকে (ক্লাসিক) তিনি সোনালী হিসেবে চেনেন।রাকিবুল ইসলাম নামের মুরগি খামারী বলেন, সোনালী মুরগির বাচ্চা তেমন পাওয়া যায় না। আর সোনালী মুরগি তেমন বৃদ্ধি পায় না। এই কারণে খামারিরা সোনালী মুরগি পালন করতে চান না। সোনালীর কয়েকটা হাই ব্রিড জাত রয়েছে সে মুরগিগুলো দ্রæত বৃদ্ধি পায়। ওজনের দিক থেকেও বেশি। বেশি মুনাফার জন্য আমরা এই মুরগি পালন করে থাকি।রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. জুলফিকার মোঃ আখতার হোসেন বলেন, প্রাইভেট কোম্পানিগুলো ক্লারবার্ড বা ক্লাসিক মুরগিগুলো উৎপাদন করছে। এতে সোনালী মুরগির চেয়ে তুলনামূলক মুনাফা বেশি। যেখানে সোনালী মুরগি দেড় মাসে ৬০০ গ্রাম থেকে ৭০০ গ্রাম হবে। সেখানে ক্লাসিক মুরগি ৮০০ গ্রাম থেকে সাড়ে ৮০০ গ্রাম হবে। তবে সোনালী মুরগি একেবারেই নেই তা কিন্তু নয়। সোনালী মুরগি চাষ হচ্ছে। তবে তুলনায় অনেক কম।তিনি বলেন, সোনালী মুরগির মাংসে এক ধরনের স্বাদ রয়েছে। কিন্তু ক্লাসিক মুরগির মাংসের ক্ষেত্রে স্বাদে ভিন্নতা রয়েছে। খামারিদের সোনালির চেয়ে ক্লাসিক মুরগি পালনে বেশি মুনাফা হচ্ছে। তাই তারা এই মুরগি পালনের দিকে বেশি ঝুঁকছে। তবে একসময় খামারীরা আবার সোনালী মুরগি পালনে ফিরে যাবে বলে মনে করেন তিনি।জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মাসুম আলী বলেন, সোনালী মুরগির নামে অন্য মুরগি বিক্রি হচ্ছে বিষয়টি আমাদের জানা নেই। তবে বিষয়টি আমাদের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে জানালে বা চিঠি দিলে আমরা অভিযান পারিচালনা করব। আমরা তাদের সাথে নিয়েও অভিযান পরিচালনা করতে পারি।