শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৬ পূর্বাহ্ন

News Headline :
ইউপি চেয়ারম্যানের উপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন মারিশ্যা-দীঘিনালা সড়কের মাটি সরে গিয়ে দূর্ভোগে জনগণের সেবা দেওয়ার জন্যই সরকার আমাকে পাঠিয়েছেঃ-নওগাঁর নবাগত ডিসি রাজশাহীতে শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় ৫ দিনের রিমান্ডে শুটার রুবেল পাবনায় সাংবাদিকের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত ও মতবিনিময় করলেন নবাগত জেলা প্রশাসক মধুপুরে বৈষম্যবিরোধী ও কোটা আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে  বিএনপির দোয়া  মাহফিল অনুষ্ঠিত  পাবনার হেমায়েতপুরে কারামুক্ত বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংবর্ধনা ও আঞ্চলিক কার্যালয়ের উদ্বোধন বাঘাইছড়িতে বিএনপির দুই নেতা বহিষ্কার ডোমারে সীরাতুন্নবী (সাঃ) মাহফিল অনুষ্ঠিত পাবনার সুজানগরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পথসভা অনুষ্ঠিত

স্মরণকালের প্রচন্ড তাপদাহ ও গরমে বিপর্যস্ত রংপুরের জনজীবন

Reading Time: 3 minutes

হারুন উর রশিদ সোহেল,রংপুর:
ভরা বর্ষা মৌসুমের মধ্যভাগে এসেও চৈত্র-বৈশাখের মতো তাপদাহ ও গরম বেড়েছেই চলছে। স্মরণকালের প্রচ- গরম আর তাপদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে রংপুরসহ উত্তরের জনজীবন। গতকাল বৃহস্পতিবার একদিনে প্রচ- দাবদাহ আর গরম বাতাসের ফলে তাপমাত্রা ৩৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করেছে। এর আগে বুধবার তাপমাত্রা ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। যা সাম্প্রতিক সময়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। তবে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, যেভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে করে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যেতে পারে।
এদিকে স্বরণকালের প্রচ- তাপদাহ ও গরমের কারণে রংপুর নগরীসহ উত্তরের এই বিভাগের আট জেলায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সড়ক ও দোকানপাট সমুহে মানুষের উপস্থিতি কমে গেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সকল ক্ষেত্রেই স্থবিরতা বিরাজ করছে। ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া, হিট স্ট্রোকসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষজন। গত তিন দিনে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত অনন্ত ৩০জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ অবস্থায় চিকিৎসকরা গরমে প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। অন্যদিকে গরম ও তাপদাহের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন কৃষক, রিকশা চালক ও শ্রমজীবিরা চরম বিপাকে পড়েছেন।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা হাসপাতাল গুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ জন গরমে সর্দি, কাশি ও জ্বরসহ নানা রোগ নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন। অনেক রোগী আবার চিকিৎসাসেবা নিয়ে সুস্থ হয়ে চলে গেছেন। এছাড়াও প্রতিদিনই হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে বেশীর ভাগ রোগীই নিম্ন আয়ের বলেও জানা গেছে। চিকিৎসকরা এই গরমে কোন প্রয়োজন ছাড়া বাহিরে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে রংপুর অঞ্চলে অস্বাভাবিক আবহাওয়া বিরাজ করছে। প্রচ- তাপদাহ ও গরম বাতাসের ফলে তাপমাত্রা ৩৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করেছে। এর আগে বুধবার তাপমাত্রা ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। যেভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে করে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি বলেন, সূর্য কিরণ লম্বালম্বিভাবে আসায় গরম তীব্র অনুভব হচ্ছে। বিশেষ করে গরম বাতাস স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করছে। এ তাপমাত্রা বৃদ্ধি আরও ২ থেকে ৩ দিন অব্যাহত থাকতে পারে।
রংপুরের জেলা সিভিল সার্জন ডা. শামিম আহাম্মেদ বলেন, গত কয়েকদিনে রংপুর নগরীসহ বিভাগজুড়ে প্রচ- গরম অনুভব হচ্ছে। এ অস্বাভাবিক আবহাওয়ায় প্রয়োজন ছাড়া কাউকে বাড়ি থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দেওযা যাচ্ছে। বিশেষ করে স্কুলের শিক্ষার্থীদের আরও সতর্কভাবে চলাফেরা করতে হবে। দুপুরের পর কোনও অবস্থাতেই যেন বাইরে তাদের না থাকতে হয় সেভাবেই শিক্ষকদের পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। অন্যদিকে এ সময় বেশি করে পানি পান, ঠা-া জাতীয় পানীয় বিশেষ করে লেবুর শরবত, ডাবেরপানি বেশি করে পান করার পরামর্শ দেন তিনি।
এদিকে প্রচন্ড তাপদাহের কারণে রংপুর নগরীসহ উত্তরের আট জেলা ও বিভিন্ন উপজেলা শহরের সড়কগুলোতে মানুষের উপস্থিতি কম। বড় বড় শপিং মলগুলো খদ্দের শূন্য হয়ে পড়েছে। তবে এ গরমে স্বল্প আয়ের মানুষ বিশেষ করে ক্ষেতমজুর ও শ্রমিকরা হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে চিকিৎসকরা জানান।
নগরীর সেনপাড়া এলাকা কথা হয় রিকশা চালক সামসুল হক ও ইউনুস আলীর সাথে। তারা জানান, গরমে যাত্রী নেই। সকাল থেকে ৫০ টাকা ভাড়া মারতে পারি নাই। সারাদিন থাকে অনেক গরম। মানুষ রিকশায় উঠেতে চায় না। যাত্রী নেই তাই বসে আছি।
রংপুর সরকারী কলেজের অর্নাসের শিক্ষার্থী এনামুল ইসলাম মুরাদ ও বুড়িরহাট আনন্দলোক ডিগ্রী কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান মিজান জানান, গত কয়েকদিনের রোদ ও গরমে তারা নাজেহাল। কোচিং ও প্রাইভেট রোদ-গরম উপেক্ষা করে যেতে হচ্ছে। এতে পড়াশুনায় ব্যাঘাত ঘটছে। কষ্ট বাড়ছে।
নগরীর মর্ডাণ মোড় এলাকার মোখলেছুর রহমান ও কেরানীরহাট এলাকার সাইফুল ইসলাম জানান, গরমে অতিষ্ঠ মানুষ। যারা গরীব মানুষ তাদের অবস্থা আরও খারাপ। প্রতিদিন কাজ করে ক্ষেতে হচ্ছে। এ গরমে এসব মানুষের অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
রংপুর নগরীর শাহ সালেক মার্কেট দোকান মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ জানান, প্রায় এক সপ্তাহ থেকে গরমের ফলে মানুষ মার্কেটে আসতে পারছে না। এ কারণে ব্যবসায় বেচাকেনা অনেক কম। মানুষ বাসা বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না। অনেক রোদ আর প্রচন্ড গরম রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে মানুষের সমস্যা হচ্ছে। এজন্য ক্রেতার সংখ্যা অনেক কম। এমন পরিস্থিতি থাকলে ব্যবসায় ব্যবসায় সমস্যা হবে। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রচ- গরমের কারণে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত তিন দিনে অনন্ত ৩০জন রোগী হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, গরমে অনেকেই হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন। তাই এ সময় সবাধানে চলাফেরা ও বেশি বেশি পানি পান করতে হবে।
রংপুর জেলা প্রশাসক আসিব আহসান জানান, গরম ও রোদ বেশি হওয়া মানুষের সমস্যা হচ্ছে। ভ্যাপসা গরমে সর্দি, কাশি ও জ্বরসহ বিভিন্ন রোগ বেশি দেখা যাচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা ও উপজেলার হাসপাতালে খবর নেওয়া হচ্ছে। আর গরমে রোগী ভর্তি ও তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে পরামর্শ হচ্ছে, বেশি করে ঠান্ডাজাতিয় খাবার খাওয়ার।

Please Share This Post in Your Social Media

Design & Developed BY Hostitbd.Com