মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৪ অপরাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
শাহরিয়ার মিল্টন ,শেরপুর :
শেরপুর শহরের সজবরখিলা এলাকার হরিজনপল্লীর অদিবাসীরা ভাঙাচোরা ঘর আর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অবহেলিত এ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করলেও এখানে বসবাসকারী প্রায় ২ শতাধিক পরিবারে আধুনিকতার ছোঁয়া তেমন একটা লাগেনি।
স¤প্রতি মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে হরিজনপল্লীর বাসিন্দাদের আবাসন সংকট দূর করতে সরকারিভাবে সাত তলা বিশিষ্ট পাকাভবন নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে শেরপুর সহ কয়েকটি জেলার হরিজনপল্লীতে এসব বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ এলজিইডি’র পক্ষ থেকে জায়গাও পরিমাপ করা হয়েছে। শেরপুর শহরের সজবরখিলা এলাকায় অবস্থিত হরিজনপল্লীর ৩৬ টি পরিবারকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আবাসনের বহুতল ভবন নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই কাজ সম্পন্ন করে নকশা অনুমোদন করা হয়েছে। কিন্তু ভূমি জটিলতার কারণে শেরপুরের হরিজনপল্লীর সরকারি বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ থমকে আছে।
শেরপুর শহরের সজবরখিলা এলাকার ভূমি সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত। যে কারণে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাসখতিয়ানের ওই ভূমি আবাসনের জন্য ব্যবহারের উদ্যোগ না নেয়া পর্যন্ত বহুতল ভবন নির্মাণের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। শেরপুর হরিজনপল্লীর ভূমি জটিলতা নিরসন করে অবিলম্বে সরকারি বহুতল ভবন নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন হরিজনপল্লীর বাসিন্দা সহ নাগরিক সংগঠনের নেতারা। হরিজনপল্লীর বাসিন্দা সমাজনেতা নন্দ কিশোর হরিজন বলেন, আমরা এখানে প্রায় ৩শ বছর ধরে বংশানুক্রমে বসবাস করে আসছি। জায়গাটি জেলা প্রশাসনের খাস খতিয়ানের। দিন দিন এখানকার লোকসংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু তেমন কোনো উন্নয়ন ঘটেনি। প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে আমাদের এখানে সাত তলা ভবন হওয়ার কথা শুনে আমরা খুব আশাবাদী হয়েছিলাম। কিন্তু এখন শুনছি, জমির জটিলতার কারণে নাকি ভবন নির্মাণ আটকে যাচ্ছে। আমরা চাই, সরকারের জমি, সরকার সব জটিলতা নিরসন করে আমাদের এখানে সাত তলা ভবনটি বাস্তবায়ন করা হোক। বিমল বাসফোর বলেন, আমাদের এখানে হেলা ও বাসফোর স¤প্রদায় মিলে প্রায় দুই শতাধিক হরিজন পরিবার রয়েছে। আমাদের নিজস্ব কোনো জমি নেই। সরকারি জমিতে থাকি। ভাঙাচোরো, ঘিঞ্জি পরিবেশে আমরা বউ-বাচ্চা নিয়ে অত্যন্ত অমানবিক পরিবেশে বসবাস করে আসছি। দিন দিন জনসংখ্যা বাড়ছে। প্রধানমন্ত্রীর সাত তলা পাকা ভবন নির্মাণের কথা শুনে আমরা আশ্বস্ত হয়েছিলাম। নিজেরা ভালো, উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখছিলাম। কিন্তু এখন নাকি জমির জটিলতার কারণে ভবনটি নির্মাণে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই, সকল জটিলতা নিরসন করে অবিলম্বে ভবনটি নির্মাণ করা হোক।
নাগরিক প্ল্যাফর্ম জনউদ্যোগ আহŸায়ক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, অনগ্রসর জনগোষ্ঠী হরিজন স¤প্রদায় চরম অবহেলিত, বিছিন্ন, উপেক্ষিত জনগোষ্ঠী। ভূমিহীন ও নিজস্ব বসতভিটাহীন হরিজন স¤প্রদায়। জটিলতা কী আছে, না আছে, সেটা আমরা দেখতে চাই না। আমরা চাই, সকল ধরনের জটিলতা নিরসন করে প্রধানমন্ত্রীর মুজিববর্ষের উপহারের সাত তলা আবাসিক ভবন শেরপুর হরিজনপল্লীতে নির্মিত হোক। বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাধানের জন্য আমরা জেলা প্রশাসন, পৌরসভা সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সদয় পদক্ষেপ কামনা করছি।
এ বিষয়ে শেরপুর পৌরসভার মেয়র গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া বলেন, শেরপুর হরিজনপল্লীর জমি সরকারের খাস খতিয়ানের। ওই জমি পৌরসভাকে বরাদ্দ না দেওয়া পর্যন্ত ৭ তলা ভবনটি নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না। ওই জমি জেলা প্রশাসরে নিকট থেকে কিনে নেওয়ার মতো আর্থিক সংগতি শেরপুর পৌরসভার নেই। যে কারণে নামমাত্র মূল্যে কিংবা সালামির বিনিময়ে পৌরসভার নিকট ওই জমি হস্তান্তর করলে কাজটি দ্রæত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। এ বিষয়ে আমরা জেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলবো। এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মোক্তাদিরুল আহমেদ বলেন, বিষয়টি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কনসার্নে আছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হরিজনপল্লীর বাসিন্দাদের উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে শেরপুর এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, জেলা প্রশাসন ও শেরপুর পৌরসভা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন হলেই ৭ তলা আবাসন ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করা যাবে।