মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩০ অপরাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
হারুন উর রশিদ সোহেল,রংপুর:
তিস্তা নদীর পানি আবারও বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। গত ১০ দিনে তিস্তার পানি এ পর্যন্ত ৫ বার বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। এতথ্য জানিয়েছে রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এদিকে উজানের ঢল এবং ভারী বৃষ্টিপাতে আবারও তিস্তাসহ অন্যান্য নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে রংপুর অঞ্চলে আবারও বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন আশঙ্কায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে সার্বিক প্রস্তুুতি গ্রহণ করা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় রংপুর বিভাগীয় প্রশাসনের আয়োজনে জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অন্যদিকে নদী বিশেষজ্ঞ ও রংপুরের সুধীজনরা, দ্রুত সময়ের মধ্যে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার দাবি জানান। তারা মনে করেন এটি বাস্তবায়ন হলে নদী ভাঙ্গন রোধসহ অর্থনীতিতেও যোগ হবে নতুন দিগন্ত।’রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, উজানের পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিপাতের ফলে গতকাল বুধবার সকালে তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপরে ৫১ দশমিক ৬২ সেন্টিমিটারে প্রবাহিত হয়েছে। এই পয়েন্টে বিপদসীমা ধরা হয় ৫১ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার। গত ২১ জুন তিস্তার পানি বিপদসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর, এর আগের দিন বিপদসীমার ২৮ সিন্টিমটার ওপর, ১৯ জুন বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর, এর আগের দিন ১২ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হয়েছে।
রংপুর বিভগের ৫ জেলার ১২টি উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তা নদী। এতে প্রতি বছরই বন্যা এলে দুশ্চিন্তায় পড়ে নদী পাড়ের মানুষজন। অনেকেই ভাঙ্গনের কবলে পড়েন। কেউ বাড়ি হারান, কেউ জমি হারান,অনেকেই নি:স্ব পড়ে পড়েন।
গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষীটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লা আল হাদী জানান, গত বছরের বন্যায় তার ইউনিয়নে প্রায় আড়াই’শ পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে জমি বসত ভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। এবারও কয়েকদফা পানি বৃদ্ধিতে তার ইউনিয়নের ১০০ বেশি পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আরও বেশ কিছু পরিবার ভাঙ্গনের কবলে পড়তে পারেন বলে তিনি আশংকা করেছেন। এজন্য তিনি বাঁধ নির্মাণসহ তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি জানান।
রংপুরের নদী বিষয়ক গবেষক ও রিভারাইন পিপল কমিটির পরিচালক, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তুহিদ ওয়াদুদ বলেন, প্রতি বছর তিস্তা বেষ্টিত ১২ উপজেলার দুই পাড়ে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হন। এই অঞ্চলে দারিদ্র্যতার প্রধান কারণ হচ্ছে নদী ভাঙন। গত ১০ বছরে ৩ লাখের বেশি পরিবার বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন।
তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, ‘ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় তিন লাখ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প বাস্তায়িত হচ্ছে। মাত্র আট হাজার কোটি টাকার তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব। পদ্মা সেতুর মতো নিজস্ব অর্থায়নে বিজ্ঞানসম্মত তিস্তা পরিকল্পনা বাস্তায়ন হলে এই অঞ্চলে দারিদ্র্যতা কমার পাশাপাশি অর্থনীতিতেও যোগ হবে নতুন দিগন্ত।’
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, ‘এখন বর্ষা মৌসুম। নদীর পানি বাড়ছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রস্তুত রয়েছে।’ এজন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনকে সর্তকর্তা বার্তা পাঠানো হয়েছে।