বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৩০ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী:
ভারতের সীমান্তঘেষা ছয় পাড়া নিয়ে রাজশাহীর চরমাঝাড়দিয়াড় গ্রাম। এই গ্রামে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার মানুষের বসবাস।
এই জনগোষ্ঠির স্বাস্থ্যসেবায় রয়েছে একটি মাত্র কমিউনিটি ক্লিনিক (চর মাঝাড়দিয়াড় কমিউনিটি ক্লিনিক)।
মাত্র একজন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) থাকলেও দুর্গম ওই এলাকায় যাতায়াত সমস্যার কারণে তিনি সপ্তাহে ১-২ দিন অফিস করেন। দীর্ঘ ৮ বছরেও ফ্যামেলি ওয়েলফেয়ার অ্যাসিসটেন্ট (এফডাবøুএ) ও হেল্থ অ্যাসিস্টেন্ট (এইচএ) এর দুটি পদ ফাঁকা।
গতকাল রোববার সরেজমিন গিয়ে চিকিৎসার এমন বেহাল দশাই ফুটে উঠেছে। ক্লিনিকে গিয়ে দেখা গেছে, অসহায় মানুষ জ্বর-সর্দি, শরীরে ব্যথা আর মাথা ব্যথায় ওষধি নিতে ক্লিনিকে সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। আর সিএইচসিপি মোছা. সাবিনা সুলতানা এসব ওষুধ বিতরণ করছেন। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতেই ওষুধ হাতে নুর ভানু নামে ষাটোর্ধ্ব বয়সী এক নারী ক্লিনিকের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসলেন।
কেমন চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেনÑ জানতে চাইলে আবেগাপ্লত হয়ে বললেন, ‘এখানে শুধু জ্বর-সর্দির ওষুধ কিংবা প্রসূতি মা ও শিশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়া কোনোকিছুই মেলে না। তাও আবার সপ্তাহে ১-২ দিন।’ সপ্তাহে ১-২ দিন কেন জানতে চাইলে বৃদ্ধা ওই নারী বলেন, দুর্গম এলাকা হওয়ায় আপা (সিএইচসিপি) মাত্র ১-২ দিনই আসেন।
জোহরা নামের এক বাসিন্দা বলেন, রাস্তাঘাটের বেহাল দশা। গর্ভবতী কোনো মায়ের হঠাৎ কোনো সমস্যা হলে রাজশাহী শহরে নিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। বেহাল রাস্তা ও নদী পাড়ি দিতে গিয়ে অনেক গর্ভবতী নারী ও নবজাতকের জীবন প্রদ্বীপ নিভে যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে- ২০১৩ সালে চরমাঝাড়দিয়াড় কমিউনিটি ক্লিনিকটি স্থাপন করা হয়। প্রথম কিছুদিন এই ক্লিনিকে স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত কর্মীরা ঠিকমতই আসতেন। তবে ক্লিনিকটিতে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত একমাত্র সিএইচসিপি মোছা. সাবিনা সুলতানা ঠিকমত অফিসে না আসায় সপ্তাহে মাত্র এক-দুই দিন খোলা পাওয়া যায়। ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়- যেখানে- সেখানে পড়ে আছে জিনিসপত্র। কয়েকটি রুম থাকলেও একটি রুমে গাদাগাদিভাবে চিকিৎসা দিচ্ছেন সিএইচসিপি সাবিনা সুলতানা। চর মাঝাড়দিয়াড় কমিউনিটি ক্লিনিক সাপোর্ট কমিটির সদস্য মোসা. রিতা খাতুন বলেন, ‘চিকিৎসা ভালই হয়। প্রতি সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবার সিএইচসিপি সাবিনা সুলতানা আসেন। তবে তার নদী পারাপারের কারণে অনেক সমস্যা হয়। এছাড়া রাস্তা ভালো না। তাই তিনি প্রতিদিন আসেন না।
তিনি আরো বলেন, ক্লিনিকের পাশেই ডাক্তারের (চিকিৎসক) থাকার একটি ঘর ছিলো। তবে সেখানে ডাক্তার না থাকায় ঘরটি আর নেই।
ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত সিএইচসিপি মোছা. সাবিনা সুলতানা বলেন, জেলার পবা উপজেলার দারুশা এলাকায় আমার বাড়ি। প্রতিদিন দুর্গম এই এলাকায় এসে চিকিৎসা সেবা দেয়া সম্ভব নয়। তাই সপ্তাহে ২-৩ দিন আসি। তবে এই এলাকার জনগণকে আমার মোবাইল নম্বর দেয়া আছে। ফোনে কোনো পরারর্শ কেউ চাইলে আমি দিই। তিনি আরো বলেন, ক্লিনিকে আমি ছাড়া অন্য কেউ নেই। দীর্ঘ দিন থেকে ফ্যামেলি ওয়েলফেয়ার অ্যাসিস্টেন্ট (এফডাবøুএ) ও হেল্থ অ্যাসিস্টেন্টের (এইচএ) পদ ফাঁকা রয়েছে। তবে শাহানা বেগম নামে স্থানীয় একজন নারী স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে আমাকে কাজে সহায়তা করেন।
শাহানা বেগম বলেন, আমি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার পর অর্থাৎ ২০১৩ সাল থেকেই কোনো পারিশ্রমিক ছাড়াই কাজ করে যাচ্ছি। ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার সময় আমাদের ৫ কাঠা জমি মাত্র ৫৪ হাজার টাকায় ক্রয় করে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। তখন থেকেই আমি বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করে যাচ্ছি। যদি কখনো আমাকে এখানে নিয়োগ দেয়া হয়- এই আশায়। কিন্তু প্রায় ৮ বছর অতিবাহিত হলেও কেউ আমার জন্য এগিয়ে আসেনি।
হরিপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের (চর মাঝাড়দিয়াড়) সদস্য মো. শামীম শেখ বলেন, অবহেলিত এই এলাকার রাস্তাঘাটের একেবারে বেহাল দশা। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তায় হাঁটু পর্যন্ত কাদা উঠে যায়। এখানকার মানুষের জীবন-মান উন্নয়নের জন্য রাস্তার সংস্কার অত্যন্ত জরুরি। সেই সাথে একেবারে ভঙ্গুর এই চিকিৎসা মান দ্রæত উন্নয়ন করা এখন সময়ের দাবি হয়ে পড়েছে।
এ ব্যপারে রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, চর মাঝাড়দিয়াড় ক্লিনিকে দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মীর ব্যাপারে আমি খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।