শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৪৫ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
কামরুল হাসান, মহম্মদপুর মাগুরা :
‘আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও, রহিমদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও। বাড়ি তো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি, একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি।… পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের ‘আসমানী’ কবিতার সেই আসমানীকে দেখতে আর রসুলপুর যেতে হবে না। মাগুরার মহম্মদপুর এলেই দেখা মিলবে সেই আসমানীর মত একজন অসহায় লক্ষী রাণীর। জীর্ণ কুঠিরে শীর্ণ কাপড়ে অর্ধাহারে অনাহারে একাকি থাকেন লক্ষী রাণী। যা একেবারেই বসবাসের অনুপযোগী। বর্ষাকালে তার কষ্টের সীমা থাকে না তার। ঘরের মধ্যে বৃষ্টির পানি পড়ায় ঠিকমতো ঘুমাতেও পারেন না। স্বামী-সংসার ও মা-বাাব হারানো ৫০ বছরের বেশী বয়সী লক্ষী রাণী জীর্ণ এই বাড়িতে বসবাস করছেন দুই যুগের অধিক সময় ধরে।
এ জগৎ সংসারে এমন কেউ নেই যে তার একটু দেখভাল করবে। তাই বেঁচে থাকার লড়াইয়ে মৌন সংগ্রাম করে যাচ্ছেন তিনি। জন্ম থেকে দু’টি পা পঙ্গু, কিশোরী বয়সে বিয়ে হয়েছিলো কিন্তু পঙ্গুতের¡ অভিশাপে সংসার করার সৌভাগ্য হয়ে ওঠেনি। বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যে লক্ষী রানীর স্বামী অমল সরকার ফেলে রেখে চলে যায় আর কোন দিন ফিরে আসেননি তিনি। পোড়া কপালে দুঃখ ছাড়া সুখের দেখা কখনো মেলেনি তার। ঘরের বাতিটাও জ্বলেনা কারন অবহেলায় দুরে পড়ে আছে শলিতা ও তেল বিহীন প্রদীপটি। রাত্রে ঘুমানোর জন্য রয়েছে একটি মাত্র ছিড়ে যাওয়া খেজুর পাতার পাটি। তাই নতুন করে খেজুর পাতা সংগ্রহ করে আরেকটি পাটি বানাতে চেষ্টা করছেন। মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার বাবুখালী ইউনিয়নের রুই-ফলোশিয়া গ্রামের অসহায় লক্ষী রাণীর গল্পটি বর্তমান সময়ে বেমানান হলেও সত্য। লক্ষী রাণীর কাছে একটু এগিয়ে গিয়ে কথা বলার সময় তিনি কেঁদে ফেলেন। অশ্রæসিক্ত চোঁখে বলেন, শুনেছি সরকার সবাইরে ঘর বানায়ে দেছে। আমি এই ঘরটাই শুতি পারিনে। আমারে এটটা ঘর দিলি সরকারের কি অয়? আপনারা সরকাররে কয়ে আমারে এটটা ঘর বানায়ে দেন। পঙ্গু লক্ষী রাণী চিকিৎসা ও অন্ন-বস্ত্রের অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কথা বলার পর কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বললেন, ‘কোনো দিন খাবার জোটে, কোনো দিন জোটেই না, মাঝে মাঝে উপোসও থাকতি অয়। আমার খোঁজ কেউ নেয় না।
সরজমিনে রবিবার সকালে লক্ষী রাণীর খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা যায় জরাজীর্ণ ঘরের মধ্যেই রান্নার চুলা। বৃষ্টিতে ধুয়ে গেছে মাটির ডোয়া। একটু ঝড়ো বাতাসেই দোল খায় বসতঘর। দেখে মনে ঘরখানি কখন যেন তার মাথার উপর ভেঙ্গে পড়বে। তার অসহায় অবস্থা দেখে প্রতিবেশীরা চালডাল দিলে মাঝেমধ্যে নিজেই রান্না করেন। অন্যথায় না খেয়ে দিনাতিপাত করেন তিনি। ২৫ বছর আগে রাজবাড়ি জেলার মথুরাপুর গ্রামের অমল সরকর নামের এক ছেলের সাথে বিয়ে হয় লক্ষি রাণীর। বিয়ের কিছুদিন ভালই চলছিল তাদের সংসার। কয়েক মাস না যেতেই হেমন্ত তাকে ফেলে রেখে চলে যায়। সাত বোনের মধ্যে লক্ষি ছিল বড়। অন্য ছয় বোনদের বিয়ের পর সবায় ভারতে চলে যায়। এর কিছুদিন পর মারা যায় বাবা মুকুন্দ সরকার ও মা বিকোশা রাণী সরকার। তারপর থেকে অসহায় জীবন-যাপন শুরু হয় তার। তার দু:খ দুর্দশা দেখে প্রতিবেশী লক্ষণ কুমার বিশ^াস নামের এক লোক দেখাশোনা করেন।
বাবুখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান মীর সাজ্জাদ আলী বলেন এটা আমার দেখার বিষয় না, আমার কাছে আবেদন করলে আমি একটা ব্যাবস্থা করে দিবো। মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রামানন্দ পালের সাথে কথা বললে তিনি লক্ষী রানীর দেখভাল করার আশ্বাস দেন। ইউএনও রামানন্দ পাল বলেন, লক্ষী রাণীর বিষয়ে আমরা তথ্য পেয়েছি। তার বাড়িতে গিয়ে খোঁজ খবর নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।