মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৮ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
নিজস্ব সংবাদদাতা, ঈশ্বরদী, পাবনা :
আলোচিত দীপা আত্মহত্যার দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে ঘটে গেছে নানা ঘটনা। সংবাদপত্র সমূহে নানা সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। দীপার পরিবার দীপা হত্যার বিচার চেয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে। থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। পুলিশ তদন্তের স্বার্থে বিভিন্ন ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। দীপার পরিবার ডজনখানেক ব্যাক্তির নামে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে আদালতে একটি মামলা করেছেন। পাওনাদারগণ দীপার পরিবারের বিভিন্ন সদস্যদের নামে পাওনা টাকা আদায়ের জন্য লিগ্যাল নোটিশ পাঠাচ্ছেন। আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-কে তদন্তভার দিয়েছে। পিবিআই এর তদন্ত কার্যক্রম চলছে। আর বিভিন্ন মহলে চলছে নানা কথার গুঞ্জন।
তার মৃত্যুর কিছুদিন আগে জানা যায় সে বিভিন্ন মানুষের নিকট থেকে উচ্চ হারে মুনাফা প্রদানেরর কথা বলে টাকা নিয়েছেন। কিন্তু এই টাকা সে নির্দিষ্টভাবে কোথায় বিনিয়োগ করেছেন বা কিভাবে এত উচ্চহারে মুনাফা দিচ্ছেন তা কেউই সঠিকভাবে বলতে পারেন না অথবা বলেন নাদীপার পরিবার চায় সুষ্ঠুভাবে তদন্ত হোক, দোষী ব্যক্তিদের সাজা হোক। একজন দারিদ্র পরিবারের মেয়ে এত টাকার দেনা মাথায় নিয়ে আত্মহত্যা করেছে, বিষয়টি কোন মহলই স্বাভাবিকভাবে দেখছেন না। জনমনে কৌতুহল টাকা কোথায় গেল, আর শোকসন্তপ্ত পরিবার চায় হত্যার বিচার। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন মাধ্যমে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে ছদ্মবেশে থাকা মানুষগুলো নাকি নিজেদেরকে আড়াল করতে মামলার ধারা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার লক্ষে দীপার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট নিজেদের পক্ষে নেওয়ার প্রয়াস চালাচ্ছে।
প্রশ্ন উঠেছে জীবন বড় না টাকা? টাকার জন্যই যে দীপা আত্মহত্যা করেছে সেবিষয়ে কারো সন্দেহ নাই। বিভিন্ন মানুষের থেকে এত টাকা নিয়েছেন, কিন্তু দীপা এবং তার পরিবারের কোন উন্নতি লক্ষ্য করা যায় না।
দীপার বাবা রিক্সা-ভ্যান চালক, মামারা রাজমিস্ত্রী, প্লাম্বার, রিক্সা চালনা পেশায় নিয়োজিত। প্রায় সবারই ৩০-৬০ হাজার টাকা বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋন নেওয়া আছে। সেই কিস্তি তারা এখনও শোধ করে যাচ্ছেন। তাহলে এত টাকা নিয়ে দীপা কি করলো?
দীপার কর্মজীবনের শুরু চিকিৎসা সেবার মত মহান পেশার একজন ডাক্তারের সহকারী হিসেবে। অপ্রাপ্ত বয়স থেকেই দরিদ্র পিতার সহযোগিতায় কর্মজীবনে প্রবেশ করে সংগ্রামী নারী দীপা। কর্মের পাশাপাশি সে লেখাপড়া চালিয়ে গেছে বলে জানা যায়। এসএসসি পাশের পর কর্মজীবনে প্রবেশ করলেও তিনি ডিগ্রি পাশ করেছেন। মৃত্যুর একমাস পূর্ব পর্যন্তও সে একই পেশায় এবং একই জায়গায় কর্ম করে গেছেন। তার এই কর্মের পাশাপাশি অন্য কোথাও বা অন্য কোন কর্মের সাথে সে জড়িত ছিল এমন কোন তথ্য পাওয়া যায় না। কর্মে নিয়োজিত থাকাকালীন দীপার বাড়িতে পাওনাদারদের দাবী নিয়ে হাজির হওয়ার কথা শোনা যায় না। মৃত্যুর একমাস পূর্বে আলো জেনারেল হাসপাতাল থেকে ছাটাই হওয়ার পরই পাওনাদাররা দীপার কাছে আসতে থাকে এবং তারপরই ঘটে প্রশ্নবিদ্ধ আত্মহত্যার মাধ্যমে জীবন সংগ্রামী এক নারীর সংগ্রামী জীবনের যবনিকা।জানা যায়, দীপা উচ্চ হারে মুনাফা প্রদানও করেছেন অনেককে। মানুষ দীপাকে কিসের ভরসায় এত টাকা দিয়েছে! এই লগ্নি ব্যাবসার মূল হোতা কি দীপা নিজেই নাকি সে কোন একজন বিশেষ ব্যাক্তির হয়ে টাকা লেনদেন সংক্রান্ত এসব কাজ করেছেন। এতো টাকা নিয়ে দীপার তো আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাওয়ার কথা। অথচ দেনার দায়ে সে আত্মহত্যা করছে। সেটি কারও কাছেই বোধগম্য নয়।
জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, যে টাকার জন্য দীপাকে আত্মহত্যা করতে হলো সেই টাকাগুলো কোথায়? যেহেতু দীপার পৃথক কোন বিনিয়োগের জায়গা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তাহলে কার ব্যবসায় বিনিয়োগ হয়েছে এসব অর্থ? কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান ভোগ করছে এসব অর্থ? কে বা কারা আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে সেটিই এখন তদন্তের বিষয়। আমাদের সামাজিক সুস্থতার জন্য এসব প্রশ্নের উত্তর জানা প্রয়োজন। চিহ্নিত হওয়া প্রয়োজন সমাজের মধ্যে ছদ্মবেশে লুকিয়ে থাকা সেসব খারাপ মানুষদের মুখোশ যাদের অন্যায় অর্থ লিপ্সার বলি হতে হয় দীপার মত একজন জীবন সংগ্রামী নারীকে।