মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৬ অপরাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
ফারুক হোসেন, নিজস্ব সংবাদদাতা:
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলায় অন্যের নামে বরাদ্দ হওয়া আশ্রয়ন প্রকল্পের একটি ঘর জোর করে দখল করে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। দখলকারী ব্যক্তির নাম মকবুল শেখ। পরিবারসহ তিনি ঘরে অবস্থান নেওয়ায় ঘরটি বরাদ্দ পাওয়া ভূমিহীন রহম মোল্লা পরিবারসহ সেখানে উঠতে পারছেন না। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার করমজা ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের আফড়া গ্রামে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, সরকারের আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় সাঁথিয়া উপজেলার আফড়া গ্রামের সরকারি জায়গায় ভূমিহীনদের জন্য চারটি ঘর নির্মাণ করা হয়। এবারের ঈদুল ফিতরের উপহার হিসেবে ঘরগুলো চারটি ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরিবারগুলোর প্রধানের নামে দুই শতাংশ জায়গাসহ ঘরের কাগজপত্র ইতিমধ্যেই রেজিস্ট্রি হয়েছে। যে চারটি পরিবার ঘর বরাদ্দ পেয়েছে তার মধ্যে রহম মোল্লার পরিবারও রয়েছে। নিজের কোনো জায়গা-জমি না থাকায় পরিবারসহ তিনি আফড়া গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় দোচালা ভাঙ্গা ঘরে তুলে বাস করেন।
এদিকে যে সরকারি জায়গায় আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে সেখানে বাস করতেন মকবুল শেখ। তাঁর দাবি, প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার আগে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁকে ঘর দেওয়া হবে বলে কথা দেওয়া হয়েছিল। সেই আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ওই জায়গা থেকে তাঁর ঘর সরিয়ে নেন। কিন্তু ঘর নির্মাণের পর বরাদ্দের তালিকায় তাঁর নাম আসেনি।
এদিকে স্থানীয় লোকজন ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, মকবুল শেখ সরকারি জায়গায় ঘর তুলে বাস করলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি ভূমিহীন নন। উপজেলার আফড়া গ্রামে তাঁর কৃষিজমি রয়েছে। এ ছাড়া তাঁর পরিবার বেশ সচ্ছল বলে এলাকায় পরিচিত। আর এ কারণেই তাঁর নামে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। স্থানীয়রা দ্রুত এর একটা সমাধান চাচ্ছেন উপজেলা প্রশাসনের কাছে।
পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে ১০ এপ্রিল সারা দেশে ৩৩ হাজার পরিবার প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহারের ঘর পায়। এরই সঙ্গে উপজেলার আফড়া গ্রামের ওই জায়গায় চারটি পরিবারের মধ্যেও ঘর বরাদ্দ হয়। কিন্তু বরাদ্দের তালিকায় নিজের নাম দেখতে না পেয়ে মকবুল শেখ পরিবারের লোকজন নিয়ে একটি ঘর দখল করে নেন। এর পর থেকে তিনি পরিবারসহ সেখানেই বাস করছেন। এদিকে যে ঘরটি দখল করে নেওয়া হয় সেটি বরাদ্দ হয়েছে প্রকৃত ভূমিহীন রহম মোল্লার নামে। ঘর বরাদ্দের পর পরিবারসহ তিনি সেখানে উঠতে গিয়ে দেখেন তাতে মকবুল শেখের পরিবার বাস করছে। এ সময় মকবুল শেখের পরিবারের লোকজন রহম মোল্লার পরিবারের লোকজনকে গালাগালি ও হুমকি-ধামকি দিয়ে তাড়িয়ে দেন। এর পর থেকে রহম মোল্লা ঘরের দখল পাওয়ার আশায় উপজেলা প্রশাসন, ইউপি চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে ধরনা দিয়ে ফিরছেন।
রহম মোল্লা বলেন, ‘আমি খুব দরিদ্র মানুষ। প্রদানমন্ত্রীর ঘর নিয়্যা ম্যালা স্বপ্ন দেখছিল্যাম। কিন্তু সেই ঘরে মকবুল শেখের লোকজন উঠপ্যার দেয় না। আমরা প্রশাসনের সাহায্য চাই।’
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রহম মোল্লার নামে বরাদ্দ হওয়া ঘরে বাস করছেন মকবুল শেখের পরিবার। নবনির্মিত এই ঘরের পাশেই রয়েছে মকবুল শেখের ছেলের নির্মাণ করা ৩০ হাত একটি আধা পাকা সুদৃশ্য ঘর। তবে সেই ঘরটিও পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায়। স্থানীয় কয়েকজন জানান, মকবুল শেখের কৃষিজমি রয়েছে। এই জমির কিছু অংশ বছরখানেক আগে সে ১৭ লক্ষ টাকার একটি বাড়ি বিক্রি করেছেন।
এ ব্যাপারে মকবুল শেখের স্ত্রী সাজেদা খাতুন বলেন, ‘৩০ বছর ধইর্যা আমরা এই জায়গায় আছি। আমাগরে কুনু যাওয়ার জায়গা নাই। ঘর দেওয়ার কথা কয়া তারা আমাগরে ঘর ভাঙাইছে। এখন ঘর না দেওয়ায় বাধ্য হয়া এই জায়গায় উঠছি।’
সাঁথিয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘মকবুল শেখ এলাকার একজন সচ্ছল ব্যাক্তি। তিনি কোনোভাবেই ঘর পাওয়া যোগ্য নন। বরং তিনি এখনও সরকারি জায়গা দখল করে ঘর তুলে আছেন। মকবুল শেখ জোর করে রহম মোল্লার নামে বরাদ্দ হওয়া ঘর দখল করে আছেন বলে অভিযোগ পেয়েছি। দুই-এক দিনের মধ্যেই আমি নিজে গিয়ে রহম আলীকে ঘর বুঝিয়ে দিয়ে আসবো।’