বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:০০ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 3 minutes
নিজস্ব সংবাদদাতা :
পাবনার সিআইডি পুলিশের এক উপ পরিদর্শকের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে নদী ও তার আশ পাশের সরকারী যায়গা থেকে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করার অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী। আর এ কাজটি বিনা বাধায় করাচ্ছেন গোয়েন্দা পুলিশের ওই কর্মকর্তা তার আপন ছোট ভাই চরসাদিপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার জহুরুল হককে দিয়ে। জহুরুল মেম্বার কুষ্টিয়া কুমারখালি উপজেলার চরসাদিপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য এবং গোবিন্দপুর গ্রামের আজিজুল হকের ছেলে। গত ০৩ মে জহুরুল মেম্বারসহ অপর ৪ সহযোগির বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রির অভিযোগে পাবনা সদর থানায় পুলিশ বাদী একটি মামলা করেছে। এছাড়া অভিযানে পাবনা থানা পুলিশ ৭টি বালুবাহী ড্রাম ট্রাক আটক করে। মামলার অপর আসামীরা হলেন, চরকোমরপুর গ্রামের মৃত আনাই মন্ডলের ছেলে মোঃ শহিদ মন্ডল, মনোহরপুর গ্রামের মৃত মোসলেম প্রাং এর ছেলে মোঃ শরিফ, কুষ্টিয়া কুমারখালি থানার গোবিন্দপুর গ্রামের খেরু প্রামানিকের ছেলে মোঃ বাকি(৪৫)
এলাকা ঘুরে জানা যায়, পাবনা শহর থেকে ৭ কিলোমিটার দুরে পদ্মানদী ঘেষা পাবনা জেলার সিমান্তবর্তী চরসাদিপুর ইউনিয়ন। ইউনিয়নটি পদ্মার এপার হলেও কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি উপজেলার অর্ন্তগত। ফলে কুমারখালি থানা পুলিশ মুলত এই ইউনিয়নে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে না বললেই চলে। কোন বড় ধরনের অপরাধ সংঘটিত না হলে কুমারখালি থানা পুলিশ নদীর এ পারে সাদিপুর ইউনিয়নে আসে না। এ সুযোগে কতিপয় সন্ত্রাসী ভুমি খেকো পদ্মা নদী ও তার আশ পাশের এলাকায় সরকারী খাস জমি থেকে ভেকু মেশিন ও নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে পাবনা সহ এর আশে পাশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রয় করে থাকে। যেহেুতু ইউনিয়নটি কুষ্টিয়ার মধ্যে সেহেতু পাবনা থানা পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে সমস্যায় পড়তে হয়। এই সুযোগে কুমারখালি উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের আজিজল হকের ছেলে জহুরুল মেম্বার ও তার সহযোগীরা দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রয় করে আসছে। আর এ কাজে পাবনার প্রশাসনসহ থানা পুলিশ ও স্থানীয় ব্যাক্তি বর্গকে ম্যানেজ করে বিনাবাধায় ব্যবসা করার সুযোগ করে দিচ্ছে জহুরুল হক মেম্বারের বড় ভাই পাবনা সিআইডি অফিসে কর্মরত এসআই আবুল কালাম আজাদ ওরফে কাইউম। তিনি সপ্তাহে একদিন করে তার নিজ বাড়িতে যান। সেখান থেকে বালু বিক্রির গচ্ছিত অর্থ নিয়ে এসে পাবনার রাজনৈতিক নেতাসহ বিভিন্ন স্তরের প্রশাসনকে উৎকোচ দিয়ে ম্যানেজ করে থাকেন। এতে বিনা বাধায় বালু ব্যাবসা পরিচালনা করে যাচ্ছে জহুরুল মেম্বার। আর এই বালু ব্যাবসা চলার ফলে নদীর পাড় থেকে থেকে শুরু করে বাংলাবাজার, লঞ্চঘাট, টেকনিক্যাল মোড়সহ পাবনা শহরে ড্রাম ট্রাকের আওয়াজ ও বালু উড়ার ফলে সাধারন মানুষের জীবন যাপন করা দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে। আরো জানা যায়, পাবনা সদর থানায় দায়ের হওয়া মামলা যাতে দ্রুত ফাইনাল দিয়ে তার ভাইকে নিরাপরাধ হিসেবে প্রামান করা যায় সে জন্য এআই আবুল কালাম আজাদ বিশাল অংকের টাকা নিয়ে তদবির মিশনে নেমেছেন বলে একাধিক ব্যাক্তি জানান। এ ব্যাপারে দোগাছি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাসান জানান, বালুবাহী ট্রাকের যাতায়াতের কারনে অত্র এলাকার রাস্তাঘাট ভেঙ্গে খানা খন্দে পরিনত হয়েছে। সেই সাথে বালু বহনের সময় গাড়ি থেকে বালু উড়ার ফলে রাস্তার পাশের বসবাসরত জনসাধারন মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাদের বাসগৃহে বালু প্রবেশ করে খাদ্য সামগ্রি সহ বাড়ির আসবাবপত্র বালুতে সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। রাস্তার পাশে দোকানদারদের দোকানে এসব ট্রাকের উড়ন্ত বালূ ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে মালামাল নষ্ট হচ্ছে। স্থাণীয়রা এই বালু ব্যাবসা বন্ধের জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন। এদিকে চরসাদিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন মানিক বলেন, অবৈধ বালু ব্যাবসার কারনে কালো টাকার প্রভাবে এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বেড়ে গেছে। সেই সাথে মাদক ব্যবসাও বেড়ে গেছে। আমি কুষ্টিয়া ও পাবনার প্রশাসনের উদেশ্যে বলছি এই অবৈধ বালু ব্যবসা বন্ধ করা হোক। এতে করে এলাকায় শান্তি শৃংখলা বজায় থাকবে। কুমার খালির থানার অফিসার ইনচার্য মোঃ মজিবর রহমান জানান, জহুরুল মেম্বারের নামে বর্তমানে কোন মামলা নেই। তবে চরসাদিপুর ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা এসআই জামাল জানান, আমি জহুরুল মেম্বারের সিডিএম কম্পিউটারে সার্চ দিয়ে কোন মামলা পায়নি। তবে তার সমস্ত পরিচয় সেখানে পাওয়া যাচ্ছে। কারো বিরুদ্ধে মামলা না থাকলে এভাবে সিডিএমএ তথ্য আসার কথা না। তারপরেও আমি আশ পাশের কয়েকটি থানার এলাকায় তার বিষয়ে খোজ খবর নিচ্ছি এবং তার বিরুদ্ধে কোন মামলা আছে কি না তা খতিয়ে দেখছি। এলাকাবাসী জানায়, জহুরুল মাদক ব্যবসাসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত। তার ভাই পাবনা জেলা সিআইডিতে কর্মরত থাকায় পাবনা ও কুমারখালি থানাসহ বিভিন্ন স্থানে প্রভাব বিস্তার করে মাদক ব্যবসা, সস্ত্রাসী কর্মকান্ড ও অবৈধ বালুর ব্যবসা করার সুযোগ করে দিচ্ছেন। জহুরুল মেম্বার কোন অপকর্ম করলে এসআই আবুল কালাম আজাদ তার ক্ষমতা ও অবৈধ টাকার বিনিময়ে তার ভাইকে রক্ষা করে থাকেন।
এদিকে আরো জানা যায়, এসআই আবুল কালাম আজাদ পাবনা সদর উপজেলার ভাড়ারা ইউনিয়নের হুকুম আলী খা নামে একটি হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। ওই মামলাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে স্থানীয় গড ফাদারের ইশারায় নিরাপরাধ ব্যাক্তিদের আসামী করার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে। আরো জানা যায় শহরের প্রান কেন্দ্রে আনন্দ টিভির পাবনা প্রতিনিধি সাংবাদিক সুর্বনা নদী হত্যা মামলারও তিনি তদন্তকারী কর্মকর্তা। জহুরুল মেম্বারের অপকর্ম সহায়তা করার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই আবুল কালাম আজাদ বলেন, এগুলো আমার ভাইয়ের প্রতিপক্ষরা প্রচার করে বেড়াচ্ছে। গত ৩ তারিখে পাবনা থানায় তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবৈধ বালুর বিক্রির জন্য তার ভায়ের নামে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। তবে মামলা মামলার গতীতে চলবে। এখানে আমি কোন হস্তক্ষেপ করছি না। আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগগুলি একেবারেই মিথ্যা।