রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১২ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
হারুন উর রশিদ সোহেল,রংপুর:
তিস্তা নদীসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে রংপুর জেলার নিম্নাঞ্চললে প্লাবন অব্যাহত রয়েছে। এতে জেলার চার উপজেলায় কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছে। অন্যদিকে পানির উঠা-নামায় তিস্তা নদীর তীরবর্তী কিছু এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। অনেকে ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পেতে ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। এদিকে বন্যা দুর্গত এসব মানুষের জন্য সরকারীভাওেব ৮৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু এলাকায় স্থানীয় প্রশাসন তা বিতরণ করেছে। তবে বন্যা দুর্গতরা দাবি করেন, তারা খাদ্য- বিশুদ্ধ পানি সংকটে রয়েছেন। সরকারীভাবে যে ত্রাণ দেয়া হয় তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, রোববার ভোর ৬টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ ছিল বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার উপরে। ওই পয়েন্টে বিপদসীমা ধরা হয় ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার। দুপুর ৩টায় পানি কমে গিয়ে বিপদসীমার নিচে ৫২ দশমিক ৪৮ সেন্টিমিটারে প্রবাহিত হচ্ছিল।
রোববার সরেজমিনে দেখা গেছে, বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষজনের মাঝে তীব্র খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। নলকুপগুলো পানির নিচে থাকায় তারা স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে নদীর পানি পান করছেন। জেলার সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে গঙ্গাচড়া উপজেলার ছয় ইউনিয়ন। এছাড়াও পীরগাছা, কাউনিয়া ও মিঠাপুকুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলার তিস্তার নদী তীরবর্তী লহ্মীটারী ইউনিয়নের চর শংকরদহে অনেকেই ত্রাণের প্রত্যাশায় বসে রয়েছেন।শংকরদহ গ্রামে আবারও ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। টিনের চাল, বেড়া, চুলা, গবাদি পশু নৌকায় করে মহিপুর শেখ হাসিনা সেতুর আশপাশে উঁচু স্থানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বাসিন্দারা। গত এক সপ্তাহে ওই গ্রামের প্রায় ১৫টি পরিবার ভাঙ্গনের কারণে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়েছেন। এছাড়াও গঙ্গাচড়া উপজেলার চর ইচলী, সালাপাক, চল্লিশসাল, শংকরদহ, বিনমিনার চর, নোহালীসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ পানি বন্দী হয়ে রয়েছে।
লহ্মীটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, তিস্তা নদীতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত আমার এলাকা। আমরা দীর্ঘদিন ধরে বিনবিনার চর থেকে মহিপুর শেখ হাসিনা সেতু পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার বাঁধ দাবি করে আসছি। এই বাঁধ হলে আমাদের কৃষি জমি, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, মসজিদ-মন্দির, স্কুল-কলেজ রক্ষা পাবে। কিন্তু বাঁধ আজও হয়নি।
গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এরশাদ উদ্দিন বলেন, আমার উপজেলায় ৭’শ পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় আছে। আমরা তাদের চাল, শুকনা খাবার, স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করেছি। তাদের যে কোনো প্রয়োজন আমাদের জানালে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।
এবিষয়ে রংপুর জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন বলেন, এ পর্যন্ত জেলার গঙ্গাচড়ায় ২৫ মেট্রিক টন চাল, কাউনিয়ায় ২০,পীরগাছায় ২০ এবং মিঠাপুকুর উপজেলায় ২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গঙ্গাচড়া উপজেলায় এ পর্যন্ত সাড়ে ৩’শ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়ছে। শনিবার পর্যন্ত গঙ্গাচড়া উপজেলায় সরকারি হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ৪০০টি।অনান্য উপজেলায় তালিকাও প্রস্তুুত করা হয়েছে।