সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৪:৩৬ অপরাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
হারুন উর রশিদ সোহেল,রংপুর॥
রংপুর নগরীতে বৃষ্টির আশায় দুই রাকাত ইস্তিসকার নামাজ আদায় শেষে বিশেষ মোনাজাত করেছেন মুসল্লিরা। অব্যাহত অসহনীয় গরম আর তাপপ্রবাহে হাঁপিয়ে ওঠা মানুষগুলো এ সময় স্বস্তির বৃষ্টির আকুতি জানিয়ে মোনাজাতে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টায় নগরীর ঐতিহাসিক কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে এ নামাজ আদায় করা হয়। রংপুর জেলা সম্মিলিত ইমাম পরিষদ এ নামাজ ও মোনাজাতের আয়োজন করে। নামাজে ইমামতি করেন সংগঠনের সভাপতি ও কেরামতিয়া জামে মসজিদের খতিব মাওলানা বায়েজিদ হোসাইন। এ নামাজে সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র মাহমুদুর রহমান টিটু, সম্মিলিত ইমাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা হাফিজুর রহমানসহ রংপুর নগরীর পাঁচ শতাধিক বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নেন।
নামাজ শেষে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমাসহ রহমতের বৃষ্টির জন্য দোয়া করা হয়। আগামী ২০ ও ২১ জুলাই দু’দিন সকাল ১১টায় কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠেবৃষ্টি প্রার্থনায় নামাজ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে আয়োজকরা।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মাওলানা বায়েজিদ হোসাইন বলেন, ‘রাসুল (সাঃ) সাহাবিদের জন্য বৃষ্টি প্রার্থনার জন্য নামাজ, খুতবা ও দোয়া করেছেন। রাসুলের সুন্নাহ হিসেবে আজ আমরা নামাজ আদায় করলাম। আমরা আশাবাদী মহান আল্লাহ আমাদের গোনাহ মাফ করে রহমতের বৃষ্টি দেবেন।’
নামাজ শেষে রংপুর সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র মাহমুদুর রহমান টিটু জানান, বর্ষাকালে বৃষ্টির দেখা নেই। আষাঢ় শেষে শ্রাবণ শুরু হয়েছে। স্বস্তির বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। অসহ্য গরম আর দাবদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত। কৃষকের ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শিশু ও বয়স্করা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। হাসপাতালে অনেক মানুষ বিভিন্ন রোগ নিয়ে ভর্তি হয়েছে।
এদিকে প্রায় ১৬ দিন ধরে ভরা বর্ষার এই মৌসুমে মৃদু ও মাঝারি দাবদাহে পুড়ছে রংপুর অঞ্চল। প্রচ- দাবদাহে ফসলি জমি শুকিয়ে ফাটল দেখা দিয়েছে। ব্যাহত হচ্ছে আমন ধানের চারা রোপণসহ অন্যান্য ফসলের চাষাবাদ। এ পরিস্থিতিতে খরা ও অনাবৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে গতকাল মঙ্গলবার সকালে ইস্তিসকার নামাজ আদায় করেছেন রংপুরের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।
রংপুর আবহাওয়া অফিস জানায়, রংপুর বিভাগে ২০২০ সালের জুলাইয়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৮০৪ মিলিমিটার। তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল সর্বোচ্চ ৩৪ দশমিক ০৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর পরের বছর ২০২১ সালে বৃষ্টি হয়েছিল ১৯৬ মিলিমিটার, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪ দশমিক ৪ এবং সর্বনিম্ন ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ২০২২ সালের চলতি মাসে বৃষ্টিপাত হয়েছে মাত্র ১৭ মিলিমিটার। তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে সর্বোচ্চ ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বনিম্ন ২৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তবে আবহাওয়াবিদরা বলেন, এই সময়টাতে স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩২ থেকে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। তবে গেল ১৪ দিনে রংপুর বিভাগে রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। মৌসুমের এ সময়টাতে স্বাভাবিকের থেকে একটু বেশি তাপমাত্রা বাড়লেও তা দুই থেকে তিন দিনের বেশি স্থায়ী হওয়ার কথা নয়। তবে এবার এর ব্যতিক্রম ঘটেছে। টানা ১৬ দিন স্বাভাবিকের থেকে তাপমাত্রা বেশি ছিল ৪ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। আবহাওয়ার এমন পরিবর্তন উত্তরের কৃষির জন্য অশনিসংকেত।