মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ০২:১১ অপরাহ্ন

News Headline :
বাংলাদেশে নাবালিকা ধর্ষণ: একটি পর্যালোচনা নওগাঁয় নাতনিকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে দাদা গ্রেপ্তার আমাদের লড়াই শুধু হাসিনা নয়, যেকোন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে-রাজশাহীতে শিবির সভাপতি রাজশাহী পুঠিয়ায় ভাগ্নী’কে ধর্ষণ চেষ্টাকারী সিহাব গ্রেফতার হোসেনপুরে বৃদ্ধি পাচ্ছে বিবাহ বিচ্ছেদ ইট বৃষ্টির মধ্যে সংঘর্ষ থামাতে দৌড়ালেন শ্যামনগরের ইউএনও রণী খাতুন পাবনা ঈশ্বরদীর লক্ষ্মীকুন্ডায় ৩ ইটভাটায় অভিযান ২ লাখ টাকা জরিমানা এবার রাজশাহীর বাগানগুলোতে ফুটছে আগাম আমের মুকুল সাংবাদিক কল্যাণ তহবিলের বাৎসরিক ফ্যামিলি ডে পালিত জব্দ ট্রাক ছাড়তে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবী! ২০ হাজার টাকা দেওয়ায় হয়রানীর অভিযোগ গোদাগাড়ী থানার ওসি’র বিরুদ্ধে

রাজশাহী অঞ্চলে নিম্ন বিত্তদের কাতারে মধ্যবিত্তরাও

Reading Time: 2 minutes

মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী:

ক্রমাগত বাড়তে থাকা নিত্যপণ্যের দামে জেরবার নগরীর পাশাপাশি গ্রাম-গঞ্জের মানুষ। নিত্যপণ্যের সঙ্গে বাড়ছে অন্যান্য সেবা পণ্যের দামও। এই অবস্থায় কাটছাঁট করতে হচ্ছে সন্তানদের প্রাইভেট, শিক্ষা উপকরণসহ চিকিৎসার খরচ। কমিয়ে দিচ্ছে চিকিৎসারমতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যয়ও। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা ছোট করছে মানুষ। এরপরও মাসিক ব্যয় নিয়ে টিকে থাকা সম্ভব হয়ে আর আসছে না। কারণ ব্যয়ের লাগাম টানা যাচ্ছে না কিছুতেই। প্রতিদিনই বাড়ছে কোনো না কোনো খরচ। ব্যয় কমিয়েও পেরে উঠছে না মানুষ কিছুদিন পর পর নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধিতে ভোক্তার নাভিশ্বাস চরমে উঠেছে। তাই নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দামের হিসাব মেলাতে হিমশিম খাচ্ছে সীমিত আয়ের মানুষ। কেবল নিম্ন বিত্তরাই নয়, কুলিয়ে উঠতে পারছে না মধ্যবিত্তরাও।স্নাতক পর্যন্ত পড়াশোনার পর রাজশাহীর পবা উপজেলায় বেসরকারি সংস্থায় (এনজিও) চাকরি করেন মুরাদ। কিন্তু স্বল্প বেতনে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের তাল মেলাতে তাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তিনি বলেন, যে বেতন পাই তাতে বছর খানেক আগে দুই সন্তান ও স্ত্রীসহ ৪ জনের সংসার মোটামুটি চালানো যেত কিন্তু এখন খুবই কষ্ট হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, বড় সন্তান একটি স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে পড়াশুনা করে। সংসার চালানো কঠি হয়ে পরায় তার প্রাইভেট পড়া বন্ধ করে দিতে হয়েছে। রাজশাহী নগরীর ছোটবনগ্রাম এলাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন শামসুল হক তিনি বলেন, দুই সন্তানের পড়াশোনা, নিজের চিকিৎসা, অসুস্থ বাবা-মাকে নিয়ে অতি কষ্টে জীবন চলছে আমার। পরিবারের খরচ মেটাতে একটি এনজিও থেকে ঋণ করেছি। কারও কাছে মুখফুটে অভাবের কথা বলতেও পারিনা, সইতেও পারিনা।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মজীবী দিনাজপুরের আজহার আলী বিয়ে করেছেন ২০২০ সালের জুন মাসে স্ত্রীকে নিয়ে কাশিয়াডাঙ্গায় ভাড়া বাড়িতে থাকেন। দিনযত গড়াচ্ছে জীবনমান ততই কোণঠাসা হয়ে পড়ছে তার। তিনি বেতন পান ১৭ হাজার টাকা। সংসার দু’জনের হলেও এই আয়ে চলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। টিকে থাকতে প্রতিনিয়তই সংসারের খরচে কাটছাঁট করতে হচ্ছে। তিনি বিয়ের পর এক রুমের একটি বাসা ভাড়া নিয়েছেন। প্রতিমাসেই সাড়ে ৩ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া দিতে হয়। বিদ্যুৎ বাবদ দিতে হয় ৫০০ টাকা। চাল, ডাল, তেলসহ একান্তই নিত্য প্রয়োজীয় দ্রব্য ক্রয় করতে মাসে সর্বনি¤œ কয়েক মাস আগেও সাড়ে ৬ হাজার টাকা খরচ হতো বর্তমানে সাড়ে ৮ হাজার টাকা খরচ হয়। অর্থাৎ বর্তমানে প্রতিমাসে সাড়ে ১২ হাজার টাকা বাধ্যতামূলক খরচ করতে হয়। বেতনের বাকি থাকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। অফিসে যাতায়াত বাবদ আড়াই হাজার টাকা খরচ। এ ছাড়া আনুষঙ্গিক খরচ রয়েছে আরও ২ হাজার টাকা। মাসে করতে পারে না কোন সঞ্চয়। মাস শেষে বেতন পাওয়ার পর আয়-ব্যয় মেলাতে পারেন না আজহার। আজহার বলেন, দ্রব্যমূল্যর এ উর্দ্ধগতিতে জীবন-যাপনের ধরন বদলাতে হচ্ছে। তিনি জানান, আগে প্রতিমাসেই বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যেতেন। বিয়ের পর গত কয়েক মাসের মধ্যে স্ত্রীকে নিয়ে মাত্র একবার গিয়েছিলাম শ্বশুর বাড়িতে। আগে তার খাবার তালিকায় অধিকাংশ সময়ই মাংস থাকতো। কিন্তু এখন তা মোটেই হয়ে উঠেনা। মাছ কেনাও কমিয়েছেন। কমদামি সবজি আর শাক খাবার তালিকায় যোগ হয়েছে। মাঝে মধ্যে ডিম কিনেন। এতে খরচ কিছুটা কমলেও তা পর্যাপ্ত নয়।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশনের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাজার নিয়ন্ত্রণ যে কোনো রাষ্ট্রের সরকারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সার্বিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য আমদানির পাশাপাশি রপ্তানির ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে। এতে শুধু ভোক্তা বাজার নয়, আর্থিক বাজারেও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হবে। শুধু বিভাগীয় শহর বা জেলা পর্যায়ে নয়, উপজেলা ও ক্ষুদ্র বাজারগুলোও মনিটরিংয়ের আওতায় আনতে হবে। শুধু ব্যবসায়ীদের সতর্ক করলেই চলবে না, অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে হবে। ভোক্তাকে বাজার মূল্য বা পণ্য সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। সরকার যদি ব্যবসায়ীদের কঠোর হস্তে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, তাহলে সাধারণ মানুষ নিশ্চিন্তে জীবনযাপন করতে পারবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Design & Developed BY Hostitbd.Com