মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:২৪ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
ইবি প্রতিনিধি-
করোনার হটস্পট হয়ে উঠছে কুষ্টিয়া জেলা। প্রতিদিন হু হু করে বাড়ছে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যু হার। ঝিনাইদহ জেলাতেও চলছে করোনার তাণ্ডব। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী এই দুই জেলায় করোনার তাণ্ডবে ঝুঁকিতে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এই ভয়াবহ সময়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে ব্যর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারটি। ফলে করোনার চিকিৎসা নিতে এসে হতাশ হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এনিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তারা।
জানা গেছে, গত রবিবার (১১ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন আবাসিক শিক্ষক তার পরিবারসহ করোনা আক্রান্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে যান। সেখানে কোন প্রকার চিকিৎসা পাননি বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। পরবর্তীতে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতাল থেকে প্রয়োজনীয় ঔষধ ও ইনজেকশন নিয়ে আসেন। পরে ক্যাম্পাসে এসে ইনজেকশনটি সময়মতো দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলে গেলে লোকজন না থাকায় ইনজেকশন দিতে ব্যর্থ হন তিনি। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষক।
এদিকে মেডিকেল সেন্টারে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সামগ্রী ও লোকবল সংকট রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে ২ জন সাময়িক চিকিৎসক, ১১ জন চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তাসহ মোট ২১ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। তবে করোনাকালীন সময়ে বৃহৎ এই মেডিকেল সেন্টারটি চলছে একজন নার্স ও দুইজন কর্মকর্তা দিয়ে। ফলে করোনার এই সময়ে চিকিৎসার জন্য মেডিকেলে গেলে যথাযথ চিকিৎসা মিলছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক শিক্ষক-কর্মকর্তারা দুই দফায় দাবি জানালেও বিষয়টি কর্তৃপক্ষের সুনজরে আসেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকায় প্রায় ৫ শত শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিবারসহ অবস্থান করেন। ক্যাম্পাস শহর থেকে দূরে হওয়ায় তারাও চরম ঝুঁকিতে দিনাতিপাত করছেন বলে অভিযোগ করেছেন। এ নিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন তারা।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার করোনা চিকিৎসা উপযোগী করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। তাদের দাবি, করোনা আক্রান্তদের আইসোলেশনে থাকার ব্যবস্থা করা, আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবার জন্য মানসম্পন্ন বেড প্রস্তুত করা, পাল্স অক্সিমিটারসহ অক্সিজেন সাপোর্ট দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করা এবং জরুরী রোগী বহনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অ্যাম্বুলেন্সকে আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সে উন্নীত করা।
সংশ্লিষ্টদের দাবি, মেডিকেল সেন্টারটিতে পর্যাপ্ত লোকবল ও চিকিৎসামগ্রীর সংকট রয়েছে। করোনার চিকিৎসা জন্যও পর্যাপ্ত সামগ্রী নেই। ফলে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে পারছেন না। রোগীদের কুষ্টিয়ায় যাওয়ার পরামর্শ দেয়ার মধ্য দিয়েই দায়িত্ববোধ শেষ করছেন তারা। তবে বেশ কিছু চিকিৎসক সাধ্যমতো অনলাইনে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। মেডিকেল সেন্টারটি অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও এসব সংকট উত্তরণে কর্তৃপক্ষের কোন প্রকার সুনজর নেই বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। মেডিকেল সেন্টারে এতজন স্টাফ থাকার পরেও সামান্য ইনজেকশন দেওয়ার মত কেউ নেই। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার মত ন্যূনতম প্রস্তুতিও মেডিকেলে নেই। এটা চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয়। আবাসিক শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পরিবারসহ চরম ঝুঁকিতে দিনাতিপাত করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের চীফ মেডিকেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ড. নজরুল ইসলাম বলেন, মেডিকেলে পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় আমরা পরিপূর্ণ সেবা দিতে পারছি না। সেইসাথে মেডিকেলে করোনা রোগীদের জন্যও পর্যাপ্ত চিকিৎসা সামগ্রী নেই। তবে কিছুদিন আগে মেডিকেলের লোকবল ও করোনার চিকিৎসা সামগ্রীর জন্য কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত দিয়েছে। এখন পর্যন্ত কোন সাড়া পাই নি।