বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৩০ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
নয়ন দাস, কুড়িগ্রাম :
দুই শারীরিক প্রতিবন্ধীর কাছে থেকে পর্যায়ক্রমে ২৫ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েও তাদেরকে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর বরাদ্ধ না দেয়ার অভিযোগ উঠেছে এক ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা’র (তহলিশদার) বিরুদ্ধে। দুই শারীরিক প্রতিবন্ধী ভিক্ষা করে, সাহায্যের বাছুর বিক্রি করে একটি স্থায়ী ঠিকানা পাওয়ার আশায় টাকা প্রদান করেছিলেন তহশিলদারকে। পরে অনেক ঘূরেও ঘড় বরাদ্দ না পেয়ে প্রতারণা শিকার ওই দুই প্রতিবন্ধী সুবিচার চেয়ে মঙ্গলবার (২৯জুন) উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ধরণিবাড়ী ইউনিয়নে মামার বাড়ীতে বেড়াতে এসেছিলেন দুই শারীরিক প্রতিবন্ধী এছোব আলী ও মাহমুদা বেগম। এখানে এসে তারা জানতে পারেন সরকারিভাবে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমিহীনদের বিনামূল্যে ঘর বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। দুই প্রতিবন্ধী থাকেন রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ডাঙ্গীরহাট ইউনিয়নের কিশামত মেনা নগরে। একটি স্থায়ী ঠিকানার জন্য তারা যোগাযোগ করেন ধরণিবাড়ী ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মাসুদ রানার সাথে। তার সাথে আলাপ করে ঘরের কথা বললে প্রতিটি গৃহের জন্য ২০ হাজার টাকা করে দাবী করেন এই কর্মকর্তা এবং টাকার কথা কাউকে বলতে নিষেধ করেন। এরপর ওই দুই প্রতিবন্ধী নানাভাবে চেষ্টা করে তালিকায় নাম ওঠাতে ব্যর্থ হন। পরে এছোব আলী তার ভিক্ষার জমানো স য় ভেঙে ১০ হাজার টাকা তহশিলদার মাসুদ রানাকে প্রদান করেন। অপরদিকে মাহমুদা বেগম ব্র্যাক থেকে পাওয়া একটি গরু (বাছুর) ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করেন এবং তার ভিক্ষাবৃত্তির জমানো ৩ হাজার টাকাসহ ১৫ হাজার টাকা মাসুদ রানাকে দেন। দুইজন মিলে ২৫ হাজার টাকা দিলেও পরে বুঝতে পারেন তাদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। পরে টাকা ফেরৎ চাইতে বারবার তহলিদার মাসুদ রানার সাথে সাক্ষাতের চেষ্টা করলেও তাদের সাথে দেখা করেননি ওই ভূমি কর্মকর্তা। ফলে বিচার চেয়ে ইউএনও’র কাছে অভিযোগ দাখিল করেন তারা। অভিযোগে তারা আরও উল্লেখ করেন, ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মাসুদ রানা টাকার বিনিময়ে কুড়িগ্রাম জেলার বাহিরে অন্য জেলা ও উপজেলার বাসিন্দাদের ঘর বরাদ্দ দিয়েছেন। এ সময় তিনি তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। দুই প্রতিবন্ধউ সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, ওই তহশিলদার টাকার বিনিময়ে দিনাজপুর জেলার আবু বক্করের ছেলে আমিনুল ইসলাম (গৃহ নং-৫) ও নাগেশ্বরী উপজেলার দুইজনকে (গৃহ নং-৩ ও ৬) ধরনীবাড়ী ইউনিয়নে আশ্রয়ন প্রকল্পের গৃহ প্রদান করেছেন। অভিযোগকারীর মামা সাহিদুল ইসলাম জানান, দুই শারীরিক প্রতিবন্ধী এছোব আলী ও মাহমুদা বেগম তার আপন ভাগ্নে ও ভাগ্নি। দুজনের পায়ে সমস্যা। হাঁটতে পারে না। বেশ কিছুদিন ধরে উলিপুরে বসবাস করে। ভিক্ষা করে চলে তাদের জীবন। ধরণিবাড়ী ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মাসুদ রানা সরকারি ঘর দেয়ার কথা বলে দুজনের কাছ থেকে ২৫হাজার টাকা ঘুষ নেয়। মাহমুদা ব্র্যাক থেকে পাওয়া একটা গরু (বাছুর) বিক্রি করে ১২ হাজার টাকা ও ভিক্ষা করা ৩ হাজার টাকা মিলে ১৫হাজার টাকা দেয় তহলিশদারকে। একইভাবে এছোব আলী ভিক্ষা করা ১০ হাজার টাকা দেয় ঘর পাওয়ার আশায়। এ ব্যাপারে ধরণিবাড়ী ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মাসুদ রানা তার বিরুদ্ধে আণিত অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, ওই দুই প্রতিবন্ধীকে বুঝিয়েছি তারা পরের কিস্তিতে ঘর পাবে। কিন্তু ধর্য্য নেই তাদের। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে। ভিন্ন জেলার বাসিন্দা গৃহ নং৫ এবং ভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা গৃহনং-৩ ও ৬ কিভাবে পেলেন জানতে চাইলে বলেন, বাছাই কমিটির আমি একজন মেম্বার মাত্র। এসিল্যান্ড, ইউপি চেয়ারম্যানসহ আরো অনেকে আছেন। চেয়ারম্যান নাগরিক সনদ প্রদান করেন স্থানীয় হিসাবে। সেভাবেই তারা ঘর পেয়েছে। উৎকোচ নেয়ার অভিযোগ মিথ্যা। তবে প্রতিনন্ধী ঐ দুজন তার কাছে ঘরের জন্য আবেদন করেছেন বলে স্বীকার করেন। মুলত মন্দিরের জায়গা নিয়ে বিরোধ তৈরী হওয়ায় ২৪টি ঘর তৈরী করা যায়নি। এ জন্য তারা বাদ পরেছে। তিনি অসুস্থ্য দাবী করে আর বিস্তারিত কথা বলতে রাজি হননি। উলিপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও আশ্রয়ন প্রকল্প কর্মসূচীর সদস্য সচিব সিরাজদৌল্লা বলেন, ইউএনওসহ আমরা প্রকল্প বাস্তায়ন কমিটি। আর উপকারভোগী নির্বাচন করেছেন এসিল্যান্ড অফিসের নেতৃত্বে ইউনিয়ন তহশীলদার। ভিন্ন জেলার অধিবাসীর এখানে ঘর পাওয়ার সুযোগ নেই। অনিয়মের অভিযোগ হয়েছে শুনেছি। এ ব্যাপারে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকল্পের সভাপতি নূর-এ-জান্নাত রুমি অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে জানান, বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।