বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৩ অপরাহ্ন
Reading Time: 3 minutes
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিঃ
খাগড়াছড়ি জেলা সদরের দাঁতকুপিয়ায় জমির দখল নিতে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, সদর উপজেলার কমলছড়ি ইউপি’র মধ্য দাঁতকুপিয়া এলাকার মৃত ইদ্রীস আলীর ছেলে মো. আবুল খায়ের(৪০) এর সাথে একই এলাকার দক্ষিণ ইসলাম নগরের মৃত আজিজুল হকের ছেলে আব্দুল লতীফ(৪৫) এর বসতভিটা জমির মালিকানা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ ব্যাপারে আদালতে একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। মামলা সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ গত ৪/৫/২২ইং মামলার বাদী আবুল খায়েরের অভিযোগে প্রকাশ, তার পিতার কবুলিয়াতের সম্পত্তির বসত বাড়িতে মামলার বিবাদীগণ বেলা ২টার দিকে অনধিকার প্রবেশ করতঃ জোর পূর্বক পাহাড়ের মাটি কাটাসহ ১৫/২০টি বাঁশ কেটে চুরি করে নিয়ে যায়। এতে অপরাপর আসামিগণ সহযোগিতা করে। এসময় বাদী বাঁধা দিলে দু’পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। বাদীকে মারতে উদ্যত হয়। সাক্ষীগণের উপস্থিতিতে মারতে না পারলেও আসামীরা বাদীকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এ ঘটনায় পরদিন খাগড়াছড়ি বিজ্ঞ আমলী আদালতে মো. আবুল খায়ের বাদী হয়ে সদর উপজেলার দাতঁকুপিয়া এলাকার মৃত আজিজুল হকের ছেলে আব্দুল লতীফকে হুকুমের আসামি করে তার পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশী ৫জনের নামে মামলা দায়ের করেন। সরেজমিনে এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মূলতঃ বাদী আবুল খায়েরের দেয়া জমাবন্দি ও অন্যান্য কাগজপত্রে ২৫৯নং দাঁতকুপিয়া মৌজার ৯৫নং দাগের ৪একর ৩ৃয় শ্রেণির ভূমি ৯১৪/৮২-৮৩নং বন্দোবস্তী মামলামূলে মালিক মো. আক্রাম আলীর ছেলে মো. ইদ্রিস আলী। যার বসতবাড়ি জমির চৌহদ্দি- উঃ-আঃ মালেক, দঃ-হরণ আলী, পূঃ-রাস্তা, পঃ- কিচিং।
এখান থেকে প্রায় অর্ধ কিলোঃ দূরত্বে, ২৫৯নং দাঁতকুপিয়া মৌজার ৭৩নং হোল্ডিং এর ৪একর ৩য় শ্রেণির জমির ৮৯২/৮২-৮৩নং মামলা মূলে ৩চৌহদ্দীতে বন্দোবস্তী প্রাপ্ত মালিক মো. মেনাজ উদ্দিননের ছেলে ইসমাইল খলীফা। যার ২একর ৭৫শতক আবাদী জমির চৌহদ্দি- উঃ-পাহাড়ের শিরা, দঃ-ইয়াকুব, পূঃ-ইমান আলী, পঃ- কিচিং। পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী কাছেম আলী হাওলাদারের ছেলে ইয়াকুব আলী হাওলাদারের বন্দোবস্তীমূলে ১/৭২হোল্ডিং এর ৪একর জায়গা। যার আবাদি জমির চৌহদ্দি- দঃ-বাদশা মিয়া, উঃ- মো. রব, পূঃ-কিচিং, পঃ-ইসমাইল খলিফা। বর্তমান এই দুই মালিকের আবাদী জমির চৌহদ্দীর ভিতরে কিছু অংশে ২০০৭ইং সালে তৎকালীন এলাকার ১১সদস্য বিশিষ্ট শান্তি কমিটির সভাপতি এলাকার হেডম্যান ও সেক্রেটারি আবদুল আজিজ আকন্দ (সাবকে চেয়ারম্যান) ও সদস্যদের স্বাক্ষরিত অনুমতিতে অব্দুল লতীফ ঘরবাড়ি নির্মাণ করে ও বাঁশ-গাছ লাগিয়ে পরিবার- পরিজন নিয়ে বসবাস করে আসছেন। সে অনুযায়ী প্রতীয়মান হচ্ছে, মো. আবুল খায়ের উদ্দেশ্য প্রনোদিত হয়ে তার পিতার বসতভিটা জায়গা হতে প্রায় অর্ধ কিলোঃ দূরত্বে অন্য মালিকের জায়গা তার পিতার দাবি করে দ্বন্দ্ব-সংঘাত সৃষ্টি করে ৬জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।
এলাকায় দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিরসনে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসারের কার্যালয় আপোষ-মিমাংসার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য গত ২৬জুন’২২ এলাকার সোবহান লিডারকে দায়িত্ব দিলে আবুল খায়ের হরণ আলীর বসতভিটার উত্তর পাশে ২৫শতক জায়গা বুঝে নিলে আর কোন দাবী থাকবেনা মর্মে অঙ্গীকার করেন। কিন্তু আবুল খায়ের হরণ আলীর জায়গা লতীফের বসবাসরত জায়গার পাশে বলে এখান থেকে ২৫শতক জায়গা দাবী করে। যদিও হরণ আলী সরেজমিনে গিয়ে তার জায়গা লতিফের বাড়ি থেকে অর্ধ কিলোঃ দূরত্বে মন্নাফ ও ইদ্রিস আলীর মাঝখানে বলে জানান। ভুক্তভোগী আবদুল লতিফ জানান, আমাকে মিথ্যা অভিযোগে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এই এলাকায় আমার কোন জায়গা-জমি না থাকায় আমাকে (২০০৭ইং) সালে এলাকার গন্যমান্যগণ কিছু জায়গায় বসতবাড়ি করার জন্য চিহ্নিত করে দেন। তখন থেকে ওই জায়গায় পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করে আসছি। নিজের প্রয়োজনে বাঁশ-গাছ লাগাই। সম্প্রতি দীর্ঘ ১৪/১৫ বছর পর হঠাৎ ভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা আবুল খায়ের আমার হাতে লাগানো বাগানের বাঁশ কাটতে গেলে বাঁধা দেই। এতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে এই জায়গা তার পিতার বলে দাবি করে মিথ্যা অভিযোগে আমার ও এলাকাবাসীর নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। প্রকৃত ঘটনা আবুল খায়ের আমার বসতবাড়ীর পাশে অন্য এক মালিকের জায়গা তার পিতার কবুলিয়াতের জায়গা দাবী করে জনৈক বারেকের নিকট বিক্রি করতে বুলডোজার দিয়ে বিশাল পাহাড় কেটে সাবাড় করে। এসময় আমরা এলাকাবাসীরা বাঁধা দেই। এতেই সে ক্ষিপ্ত হয়ে নিজে পাহাড় কাটার অপরাধ থেকে পরিত্রাণ পেতে আমদের সকলের নামে একাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।
মামলায় যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সম্পূর্ন মিথ্যা, কাল্পনিক ও ভিত্তিহীন দাবি করেন ভুক্তভোগী আবদুল লতিফ, সোবহান লিডারসহ এলাকাবাসী। তারা বলেন, আব্দুল লতিফের বসতভিটা ও দখলীয় জমি থেকে উচ্ছেদে ব্যর্থ হয়ে এখন মামলাসহ নানামুখী ফন্দিফিকির করছে আবুল খায়ের গং। কল্পিত ঘটনা দেখিয়ে দায়েরকৃত মামলার মাধ্যমে আইন আদালতকেও প্রশ্নের মুখোমুখী করবে তারা।
লতীফের দীর্ঘ দিনের বসবাসরত বসতভিটা দখলে নিতে তাদের মধ্যে বিরোধকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে আমাদেরকে সন্ত্রাসী সাজানোর নানামুখী ফন্দিফিকির করছে। নতুন কোন ইস্যু টেনে আরেকটি মামলার অপচেষ্টা চালাচ্ছে যা এলাকার সবাই অবগত। এদিকে, মামলার বাদি মো. আবুল খায়ের বলেন, সেখানে তাদের পৈত্রিক বাড়িঘর। আমাদের বসতভিটার বাঁশ কাটতে গেলে লতীফ বাঁধা দেয়। এসময় তাদেরকে ইন্ধন দেয় এলাকাবাসী। বাস্তব ঘটনাটি তুলে ধরে আইনের আশ্রয় নিয়েছি। মামলা দিয়ে হয়রানি উদ্দেশ্য নয়। সত্য মিথ্যা তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেবে আদালত। এ প্রসঙ্গে কমলছড়ি ইউপি’র ৯নং ওয়ার্ড সদস্য খোকন চাকমা বলেন, দীর্ঘদিনের জমিজমার বিরোধ নিয়ে মো. আবুল খায়ের নামের এক ব্যক্তি মামলা করেছেন বলে জানতে পেরেছি। খায়ের ও লতীফ সবাই আমার কাছের মানুষ। কিন্তু এ ব্যাপারে কেউ আমার নিকট সুরাহা চায়নি। এই মামলাগুলোর সবটাই মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। কমলছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান সুনিল চাকমার নিকট এব্যাপারে জানতে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।