সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩৪ অপরাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
জুয়েল ইসলাম, তারাগঞ্জ রংপুর:
রংপুরের তারাগঞ্জে সরমংলা নদীর বালু উত্তোলন করে বিক্রি ও খাস জমি দখল করে পুকুর করার অভিযোগ উঠেছে আলমপুর ইউনিয়নের ভীমপুর কোরানীপাড়ার এক প্রভাবশালী শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এতে নদীর ওই অংশে বিরাট গর্ত সৃষ্টি হয়ে আশেপাশের বসতবাড়ি, কৃষি জমি, বাঁশঝাড়, চলাচলের রাস্তা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সরেজমিনে উপজেলার ১ নং আলমপুর ইউনিয়নের ভীমপুর কোরানীপাড়া এলাকার সরমংলা নদীর অংশে গেলে অভিযোগের সত্যতা মিলে। অবৈধ বাংলা ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে নদীর বালু উত্তোলন ও বিক্রি চলছে দেদারসে। রীতিমতো বালুর পাহাড় গড়ে তুলেছেন সয়ার কাজীপাড়া স্কুল এন্ড কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও আসহাবে সুফফা বৃদ্ধাশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা মাহবুব উল হক। স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন থেকে মাহবুব উল হক এলাকাবাসীদের প্রশাসনের ভয়ভীতি দেখিয়ে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করে আসছেন । নদীর খাস জমি দখল করে মাছ চাষ করছেন । এক সময় কমিউনিটি পুলিশের সাথে কাজ করার সুবাদে প্রশাসনের সাথে সখ্যতা বেড়ে যায় অবৈধভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন ও খাস জমি দখলদার মাহবুব-উল হকের। সেই প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে মাহবুব এলাকাবাসীকে জিম্মি করে রেখেছে। ভুয়া বৃদ্ধাশ্রম তৈরির নামে বিশাল সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে বিভিন্ন দাতাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করছেন। নদীগর্ভে বিলীন প্রায় আজাদ কোরানি ও রওশন আরা দম্পতির ঘর। বৃদ্ধ আজাদ কোরানি অভিযোগ করে বলেন, ” মোর বাড়ির পাশে মেশিন বসেয়া নদীর বালা তোলোছে মাহাবুব মাস্টার। সেই মেশিনের পাইপ থাকি পানি বেরায়া মোর বাড়ির পাশ দিয়া যাইতে যাইতে মোর ঘড় সুদ্দায় ভাঙ্গি নিয়া যাওচে। আর কয়দিন গেইলে ঘড় পরি যাইবে । মাহবুবক কান্দি কাটি কয়াও সে বালা তোলা বন্ধ করে নাই । একমাত্র সম্বল ঘরকোনা না থাকলে বুইড়া বয়সে হামরা কোটে থাকমো?” কৃষক মুশফিকুর রহমান বলেন, মাহবুব নদী থেকে বালা তোলে আর বিক্রি করে । আবার সৈয়দপুরেও নিয়ে যায়। সেখানে বিল্ডিং করতেছে এই বালা দিয়ে। এদিকে আমার আবাদি জমি ভেঙ্গে নদীতে চলে যায় যায় অবস্থা। নিষেধ করলে প্রশাসনের হুমকি দেয় । শাইলবাড়ী মাদ্রাসার শিক্ষক রুবেল ইসলাম বলেন, সমাজের লাঞ্ছিত, বঞ্চিত, অবহেলিত ও দুস্থ বৃদ্ধ ব্যক্তিদের ফ্রি থাকা খাওয়া, চিকিৎসা, ওষুধপত্র, পোশাকসহ সার্বিক সেবা প্রদানের একটি বিশাল সাইন বোর্ড ঝুলিয়েছেন মাহবুব সাহেব। কিন্তু ৫ বছর থেকে সেই জায়গায় নদীর বালুর যাওয়া আসা ছাড়া কিছুই দেখি না আমরা। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে অনুদান সংগ্রহ করলেও একটি ইটও নাই ওই জমিতে। মূলত ওই সাইন বোর্ড ব্যাবহার করে বালুর ব্যবসা করা আর অনুদান খাওয়াই তার একমাত্র উদ্দেশ্য । ওই এলাকার দিনমজুর আইয়ুব আলী বলেন , “বালার গাড়ি নিয়া যাইতে – আসতে মোর ঘরত নাগে দেয় । বাঁধা দিলে ঠ্যাং ভাঙ্গি পঙ্গু করি থুবার চায় । নিরুপায় হয়া, গাড়ি যখন যায় ঘর থাকি বেড়ে পালে যাই ।” আলমপুর ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম রাসেল বলেন, নদীর বালু উত্তোলনের বিষয়টি লোকমুখে জেনেছি। আমি সরেজমিনে গিয়ে দেখে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল মিয়া বলেন, কিছু দিন আগে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এ ছাড়া নদী থেকে অবৈধ ভাবে চর ও ফসলি জমি কেটে বালু উত্তোলন, খাস জমি দখলদারদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে। ওই বালু বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।