বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:১৮ অপরাহ্ন

News Headline :
ডিমের মূল্যের ঊর্দ্ধগতিতে মধ্যস্বত্ব ভোগীরা বড় সমস্যা- মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ উপদেষ্টা কুষ্টিয়ায় বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ এর ১৩৪তম তিরোধান দিবস ২০২৪ উদযাপনের আজদ্বিতীয় দিন ইবিতে পরীক্ষা দিতে এসে তোপের মুখে ছাত্রলীগ নেতা কুষ্টিয়ায় র‌্যাবের অভিযানে লালন মেলা হতে চুরি হওয়া ১৬টি মোবাইল ফোন উদ্ধার ন্যায় বিচার পেলে আওয়ামী লীগের জীবনের স্বাদ মিটে যাবে-নওগাঁ জামায়াত আমির রাবি’তে পরীক্ষা দিতে এসে ছাত্রলীগের ২ নেতা গ্রেফতার ফুলবাড়ীতে বিএনপি‘র দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ২ পাবনার ঈশ্বরদীতে সন্ত্রাসীদের গুলি ল্যাংড়া বিপু গুলিবিদ্ধ পাবনায় স্বপনের অফিস ভাংচুর করলেন শিমুল সমর্থক হামলা-পাল্টা হামলা পাবনা র‌্যাবের অভিযানে পর্নগ্রাফি মামলার পলাতক আসামী গ্রেফতার

দালাল ছাড়া কাজ হয় না রাজশাহী বিআরটিএ অফিসে

Reading Time: 2 minutes

মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী:
সোহানার রহমান। বাড়ি রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলায়। প্রায় তিন বছর আগে রাজশাহী বিআরটিএ কার্যালয়ে ড্রাইভিংয়ের জন্য পরীক্ষা দিয়েছেন। পরীক্ষায় পাশ করার পরে লাইসেন্সের জন্য ফিও জমা দিয়েছেন ওই সময়। কিন্তু এখনো লাইসেন্স কার্ড হাতে পাননি। কবে পাবেন তাও ঠিক বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কেউ। রবিবার কার্ড নিতে এসে আবার ঘুরে যান সোহানার রহমান। তিনি এসময় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি চার জোড়া স্যান্ডেল খুয়েছি ড্রাইভিংয়ের জন্য। বার বার পরীক্ষা দেয়, আর বার বার ফেল করায়। এভাবে ঘুরতে ঘুরতে যখন হচ্ছিলো না, তখন এক আপাকে ধরেছিলাম। শেষে পরীক্ষায় পাশ করে কার্ডের জন্য টাকা জমা দিয়েছি তিন বছর হতে গেলো। আজ খোঁজ নিতে এসেছিলাম কার্ড এসেছে কি না। কার্ড আসেনি। কার্ড না হওয়ায় আবারও নতুন তারিখ বসিয়ে দিলো।’একই অবস্থা ছিল দুর্গাপুরের রবিউল ইসলামের। গত ২০১৯ সালে ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য আবেদন করেছিলেন তিনি। এক দালালকে ধরে অতিরিক্ত ৫ হাজার টাকা দিয়ে ড্রাইভিং পরীক্ষা দিয়েছিলেন তিনি। তার পরেও তাঁর ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্ড আসছিল না। শেষে রবিবার দীর্ঘ প্রায় ৪ বছর পরে কার্ড হাতে পেয়েছেন তিনি।রবিউল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘যারা দালাল ধরেছে, তাদের এত হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে না। আমি পদে পদে হয়রানির শিকার হয়েছি। এ যাবৎভর বিআরটি অফিসে অন্তত এক’শ বার এ্যাসেছি। অবশেষে দুই জায়গায় টাকা দেওয়ার পরে কার্ড পেলাম।’পবা উপজেলার জাফর আলী বলেন, ‘দালাল ধরেছি। কয়েক দফা কার্ডের খবর নিতে এসেছি এই বিআরটিতে। আজও এসে দেখি কার্ড হয়নি। দালালও ফোন ধরে না।’পুঠিয়া উপজেলার আরঙ্গো আলী বলেন, ‘আমি হালকা যানের ড্রাইভিং করার জন্য নওদাপাড়া বাস স্ট্যান্ডের এক ভাইকে ধরেছি। তিনি আমার কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু এখনো লাইসেন্স হাতে পাইনি।’স্থানীয় এক ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এই অফিসে দালালমুক্ত সাইনবোর্ড থাকলেও দালাল ছাড়া কোনো কাজ হয় না। এখানে সব থেকে পাওয়ারফুল (শক্তিশালী) ব্যক্তি হলো পিয়ন আলী হোসেন। তাঁকে ম্যানেজ করতে পারলেই সবকাজ হয়ে যায়। আলীর নিযুক্ত অন্তত ৫০ জন দালাল আছে। ওই দালালরা নিয়ন্ত্রণ করে গোটা বিআরটিএ। আর নেতৃত্ব দেয় আলী। একেকটা ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ৫-১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। এই টাকার ভাগ যায় কর্মকর্তার পকেটেও। প্রতিদিন দুপুরে এই কার্যালয়ে রান্নাও হয় সেই টাকার ভাগ থেকে। সেই রান্না করা খাবার খান সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী।
বাগমারা উপজেলার শরিফুল ইসলাম নামের একজন বলেন, ‘এখানে ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে যদি চান, তাহলে তাহলে দালাল ধরে টাকা দিতে হবে। তবেই লাইসেন্স পাবেন আপনি। তাছাড়া আপনার কাগজই জমা নিবে না। নানা অজুহাতে কাগজ বাতিল করে দিবে এরা।’তানোরের মন্ডুমালা এলাকার মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ড্রাইভিং লাইসেন্সর আবেদন করার পরে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি। পরে রেজাল্ট এ দেখি আমি ফেল। অথচ আমার দেখে যে পরীক্ষা দিয়েছে সে পাশ করেছে। পরে আমি তার পরামর্শে এই অফিসের এক পিয়নের দালালকে টাকা দিয়ে পাশ করি। এখানে টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না। টাকা দিলে পাশ, না হলে ফেল। টাকা দিলে পলীক্ষায় অংশ নিলেই পাশ হয়। না দিলে যতবার পরীক্ষা দিবেন, ততবার ফেল করবেন।’একটি সূত্র জানায়, রাজশাহী বিআরটিএ কার্যালয়ের সকল কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ অফিস পিয়ন আলী হোসেন। তাই আলীকে ছাড়া এখানে কোনো কাজ হয় না। আলীকে টাকা দিলে সব কাজ হয়। আলীর নিযুক্ত দালাল আছে এখানে অন্তত ৫০ জন। ওই দালালরা নিয়ন্ত্রণ করে গোটা বিআরটিএ।’তবে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আলী হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এমন অভিযোগ ঠিক না। আমাকে কেউ টাকা দেয় বলতে পারবে না। আমার নামে মিথ্যা অপবাদ ছড়ানো হচ্ছে।
জানতে চাইলে রাজশাহী বিআরটিএ কার্যালয়ের মোটরযান পরিদর্শক শরফুদ্দিন বলেন, ‘কোনো অনিয়ম এখানে হয় না। কাগজ ঠিক থাকলেই ড্রাইভিং লাইসেন্স হয়।’সহকারী পরিচালক আব্দুল খালেক বলেন, ‘পরীক্ষা সঠিকভাবে নিয়েই এখানে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হয়। কেউ বাইরে টাকা দিলে আমাদের কিছু করার নাই। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Design & Developed BY Hostitbd.Com