সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২৯ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
মোঃ হেলাল উদ্দিন সরকার,ধুনট বগুড়া :
বগুড়া জেলা ধুনট উপজেলা গোসাঁইবাড়ি ইউনিয়নের জোড়খালী মধ্যেপাড়া মোঃ মুকুল হোসেন (২৫) নামে এক কাঠ মিস্ত্রীর দুটো কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে। একটি কিডনি কেউ দান করলে অসহায় কাঠমিস্ত্রী মুকুল মায়ার পৃথিবীতে হয়তো কিছুদিন বেঁচে থাকতে পারবে। মায়ার বন্ধন দুটি মেয়ের বাবা ডাকটি আরোও কিছুদিন শুনতে পাবে। এ অবস্থায় মা মমতা খাতুন একটি কিডনি দিতে রাজি হলেও স্ত্রী রাশেদা সন্তান নিয়ে পাড়ি দিয়েছে বাবার বাড়িতে। সরজমিন খোঁজ খবর নিতে জোড়খালী মধ্যেপাড়া গিয়ে জানাযায়, দিনমজুর শহিদুল ইসলাম (৫০) এর বড় সন্তান এই মুকুল হোসেন। দিনমজুর শহিদুলের স্ত্রী ও তিন সন্তান মুকুল, মোকলেছুর, মনির নিয়ে অভাবের সংসারে সুখী পরিবার। মুকুল সবার বড় সন্তান। মোকলেছুর এসএসসি পাশ করে কলেজে পড়ে। মনির সবার ছোট বয়স ১১। মুকুল ছোটবেলায় কিছু লেখাপড়া করে অভাবের সংসারে আর লেখাপড়া করার সুযোগ হয়ে উঠেনি। কাঠমিস্ত্রীর জোগালির কাজ শুরু করে দিনমজুর বাবার অভাবের সংসারে কিছুটা সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করে। অল্প দিনেই মুকুল বেশ ভালো মিস্ত্রি হিসেবে পরিচিতি পায় আশেপাশে। রুজিরোজগার ভালই হতে থাকে। রুজিরোজগার দেখে বাবা শহিদুল শখ করে মুকুলকে বিয়ে করান, শেরপুরের বনমরিচা আহাদ আলীর মেয়ে রাশেদা আক্তার এর সাথে। সবাই মিলে সংসার ভালই চলছিল। ইতিমধ্যে পার হয়ে যায় ছয়টি বছর। মুকুলের সংসারে আসে দুটি কন্যা সন্তান লামিয়া ও রোজা। হঠাৎ বছর খানেক আগে মুকুল অসুস্থ হয়ে পরে। ছয়মাস নানা চিকিৎসা করে অবশেষে জানা যায়, মুকুলের দুটো কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। শহিদুলের মাথায় আকাশ ভেঙে পরে। একের পর এক ডাক্তার দেখাতে থাকে। সঞ্চিত অর্থ ইতিমধ্যে শেষ হয়ে যায়। বিক্রি করেন শেষ সম্বল আঠারো শতক জমি। জমি বিক্রির টাকা দিয়ে ঢাকার শ্যামলি সিকেডি ইউরোলজী কিডনি ডিজিজ হাসপাতাল ডাঃ কামরুল ইসলাম এর নিকট। স্বামীর অবস্থা এ রকম দেখে স্ত্রী রাশেদা বাবা আহাদ আলীকে খবর দেন। আহাদ আলী এসে মেয়ে ও দুই নাতনিকে নিয়ে যাবার সময় বিয়াই শহিদুলকে বলে যায়, মুকুলকে ভালোভাবে চিকিৎসা করার জন্য। বাড়ি যেয়ে মুকুলের চিকিৎসা খরচ বাবদ পঞ্চাশ হাজার টাকা পাঠাবে। টাকা পাঠানো তো দুরের কথা, বিয়ের সময় যে খরচ হয়েছে তা সমেত ফেরত দিতে লোকমুখে খবর পাঠান। মেয়ে লামিয়া ও রোজা অসুস্থ বাবাকে দেখতে চাইলেও এ বাড়িতে আসতে দেওয়া হয়না। দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে শহিদুল এ কথা গুলো বলে থেমে যায়, কন্ঠ কে যেনো রোধ করে দেয়। অশ্রুধারা গড়িয়ে পরে শহিদুলের দুচোখ বেয়ে। কিছুক্ষন দাম নিয়ে শহিদুল আবার বলতে শুরু করে, প্রতি সপ্তাহে দুবার ডায়ালেসিস করতে ও একটা ইনজেকশন দিতে এবং ঔষধ মিলিয়ে দশ হাজার টাকা খরচ – যা ইতিমধ্যে ছয় মাস ধরে করতে হচ্ছে। ডাঃ প্রতিদিন একটা করে কিডনির অপারেশন করে। তার সিরিয়াল একশোপাচেঁ। ষাটোর্ধ অপারেশন হয়েছে। সিরিয়াল আসা পর্যন্ত তার এভাবে প্রতি সপ্তাহে খরচ করতে হবে। কিন্তু কিভাবে সম্ভব এতগুলো টাকা যোগাড় করা। এর পর সবচেয়ে বড় ব্যাপার কিডনি যোগাড় করা। যদিও ক্রশম্যাচিং করে ডাঃ বলেছেন শহিদুলের স্ত্রী মুকুলের মা’র একটা কিডনি প্রতিস্থাপন করা যাবে এবং প্রতিস্থাপন করতে তিন লক্ষ টাকা লাগবে। এখন উপায় কি! মা কিডনি দিতে রাজি হলেও অপারেশন এর টাকা কোথায় পাবে! এলাকার বিত্তবানদের দ্বারেদ্বারে ঘুরে শহিদুল কিছু টাকা যোগাড় করলেও অপারেশন এর টাকা আজও যোগাড় করতে পারেনি শহিদুল। আশা করে পথ চেয়ে বসে আছে কেউ হয়তো পাশে এসে দাঁড়াবে, বাড়িয়ে দেবে সাহায্যের হাত।