মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৮ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
মোঃ হেলাল উদ্দিন সরকার,ধুনট বগুড়া:
জুতা স্যান্ডেল সেলাই, তৈরী করা একজন নারীর পক্ষে অসম্ভব! তাও আবার মুসলিম পরিবারে! সমাজে অনেক পেশার সঙ্গে নারী পাশাপাশি কাজ করতে দেখা গেলেও, ব্যাক্তিগত ভাবে জুতা স্যান্ডেল সেলাই, তৈরী করা এমন পেশায় ধুনটে কোনো নারীর সম্পৃক্ততা দেখা যায় না। এতে বলা যায় সরুগ্রামের মুনজেরাই প্রথম এ পেশায় এসে অসম্ভবকে সম্ভব করলেন – প্রকৃত অর্থে জয়িতা হলেন।
হঠাৎ করেই বগুড়া জেলার ধুনটে বিএডিসি মার্কেটের সেটেলমেন্ট গলিতে” সবার স্যুজ” কারখানায় মুনজেরার সাথে দেখা হয়ে গেলো। বোরকা হিজাব পরে মুসলিম ধর্মে নারীর পর্দা ফরজ মেনে জুতা স্যান্ডেল সেলাই করছে। মুনজেরার পুরো নাম মোছাঃ মুনজেরা খাতুন (৩৫)। বাবার বাড়ি ধুনটের সরুগ্রামে, মোঃ মোনতাজ মন্ডলের মেয়ে। বিয়ে হয়েছে ধুনটের কালের পাড়া গ্রামে মোঃ রেজাউল করিমের সাথে। মুনজেরার তেইশ বছরের সংসারে স্বামী ও আড়াই বছরের এক মেয়ে মোট তিনজন। স্বামী রেজাউল করিম কে নিয়ে মুনজেরার তেইশ বছরের সংসার। বিয়ের পরপরই টানাটানির সংসারে মুনজেরার দিন আর চলেনা – তাই মামা সহিদের হাত ধরে এপেক্স ফুট ওয়্যার লিমিটেড কোম্পানিতে মাসিক ছয়শত টাকা বেতনে চাকরিতে যোগদান করেন। সাথে স্বামীকেও নিয়ে আসেন, শুরু হয় চাকুরী জীবন। মুনজেরা চাকরি করেন আর ভাবেন এভাবে দুইজন মিলে মাসে বারো শো টাকায় কিভাবে সংসার চালাবেন! ভবিষ্যতও বা কি হবে! তাই মনেমনে স্থির করেন ভালোভাবে কাজ শিখতে হবে বুঝতে হবে। এভাবেই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতে থাকেন মুনজেরা। স্বামীর সাথে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেন, স্বামী রেজাউল অভয়দেন মুনজেরাকে। এখান থেকেই সংগ্রাম শুরু হয় মুনজেরার। অনেক পেশা থাকতে কেনো মুনজেরা এ পেশা বেছে নিলো! উত্তরে মুনজেরা বলেন গার্মেন্টস এর পরিবেশ তার ভালো লাগেনি, তাছাড়া তার পরিবারের অনেকেই এই কোম্পানির সাথে জড়িত এবং ভবিষ্যতে তার এই পেশাকে কাজে লাগিয়ে কিছু একটা করা যাবে। তাই লক্ষ স্থির করে এগোতে থাকে মুনজেরা। অবশেষে কাজ ভালোভাবে শিখে নিয়ে, অনেক কষ্টে একলক্ষ টাকাও জমিয়ে ফেলে। চাকরি ছেড়ে দিয়ে স্বামীকে নিয়ে চলে আসেন ধুনটে – শুরু করেন তার ভবিষ্যৎ গড়ার সংগ্রাম, স্বপ্ন পুরনের যুদ্ধ। ইতিমধ্যে চলে যায় চৌদ্দটি বছর। এখন সকল খরচ বাদ দিয়ে মাসে প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা তার হাতে রয়ে যায়। মূলধন এখন কতো! শুরুটাতো ছিলো একলক্ষ, মুনজেরা একটু হেসে বিনীতভাবে বললেন – অনেক, পুরোটা বলতে পারবোনা। স্থানীয় জুতা স্যান্ডেল বিক্রেতা তাদের নিকট থেকে পাইকারি ভাবে ক্রয় করে নিয়ে যায়, পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা স্যাম্পল দিয়ে অগ্রীম অর্ডার দেন। মুনজেরা আরোও জানান এ পেশায় নারীদের সম্পৃক্ততা নাই, তাই নিরবিচ্ছিন্নভাবে সে এই ব্যবসা করতে পারছেন। নিজেকে পর্দার মধ্যে রেখে সকল কাজকর্ম করছেন এবং করা যায় মুনজেরা সেটার উদাহরণ।
মুনজেরার ইচ্ছে তার মেয়েকে মাদ্রাসায় পরাবেন, পড়া শেষে তার এই ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কাজে লাগাবেন। মুনজেরার কারখানার পাশে রাফি মাইকের দোকানের রফিকুল বলেন, মুনজেরার একনিষ্ঠ পরিশ্রম আর সততা তাকে এখন এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। ধুনটের সিনিয়র সাংবাদিক গিয়াসউদ্দিন টিক্কা বলেন, মুনজেরার সাথে তার স্বামীর মধুর সম্পর্ক তাই তারা দু’জন মিলে পরামর্শক্রমে সততার সাথে কাজ করছে বলে – আজ তারা এতো দুর আসতে পেরেছে।
পরিশেষে মুনজেরা তার বয়সী সকল মুসলমান নারীর উদ্দেশ্য বলেন, কেউ যদি চায় – পর্দা করে, নিজেকে ঠিক রেখে পুরুষের পাশাপাশি কাজ করা যায় স্বপ্ন পুরনও করা যায়। সেক্ষেত্রে চাই সৎ মনোবল, ইচ্ছে, নিষ্ঠা আর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা।