শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৭ অপরাহ্ন
Reading Time: 4 minutes
নরেন্দ্র মোদী: ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে হামলা চালালো কারা?
নিজস্ব প্রতিবেদক:
[হামলায় বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর ২০-২৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়। তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগে সেবা দেয়া হয়]
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরের প্রতিবাদে করা বিক্ষোভ মিছিলে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে আহত হয়েছে ২০-২৫ জন।
বিক্ষোভকারীরা বলছেন, সরকারি দলের সহযোগী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ এই হামলা চালিয়েছে। ছাত্রলীগ অবশ্য বলছে, তারা এ ঘটনা সম্পর্কে জানে না।
২৩শে মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে মোদীর সফরের প্রতিবাদে প্রগতিশীল ছাত্র জোটের নেতৃত্ত্বে বিক্ষোভ করে বেশ কয়েকটি বাম দলের ছাত্র সংগঠন।
[২৩শে মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে মোদীর সফরের প্রতিবাদে প্রগতিশীল ছাত্র জোটের নেতৃত্ত্বে বিক্ষোভ করে বেশ কয়েকটি বাম দলের ছাত্র সংগঠন]
বিক্ষোভে তারা, নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফর বাতিলের দাবি তোলে।
বেলা সাড়ে চার টার দিকে বিক্ষোভ মিছিলটি টিএসসি থেকে শুরু হয়ে শাহবাদ ঘুরে আবার টিএসসি-তে এসে সমাবেশ শুরু করে।
[বিক্ষোভ মিছিলটি টিএসসি থেকে শুরু হয়ে শাহবাদ ঘুরে আবার টিএসসি-তে এসে সমাবেশ শুরু করে]
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি এবং প্রগতিশীল ছাত্র জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আল কাদেরি জয় বলেন, টিএসসিতে মোদীর কুশপুত্তলিকা দাহের কর্মসুচী থাকলেও ছাত্রলীগের ১০-১২ জন কর্মী এসে কুশপুত্তলিকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
সেসময় বাম ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা তাদের ধাওয়া দিলে জবাবে তারা ঢিল ছোড়ে। পরে ছাত্রলীগের অন্য সদস্যরাও এসে তাদের নেতাকর্মীদের উপর মারধর করতে থাকে বলেও জানান আল কাদেরী জয়।
[বাম দল গুলোর নেতাকর্মীদের কাছ থেকে কুশপুত্তলিকা ছিনিয়ে নেয় অপর পক্ষ]
এতে বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর ২০-২৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়। তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগে সেবা দেয়ার পর হামলার প্রতিবাদে সন্ধ্যা সাতটার দিকে আরেকটি প্রতিবাদ মিছিল করা হয়।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মাসুদ রানা বলেন, ছাত্রলীগ কুশপুত্তলিকা ছিনিয়ে নিলেও পরে অবশ্য তারা আরেকটি কুশপুত্তলিকা বানিয়ে সেটি দাহ করেছেন।
[বিক্ষোভকারীদের উপর লাঠি-সোটা, চেয়ারসহ নানা জিনিস নিয়ে হামলা চালানো হয়]
তিনি বলেন, টিএসসিতে সমাবেশ করার সময় ছাত্রলীগ তাদের উপর হামলা চালায়। এ হামলার সাথে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় এবং মহানগরের নেতাকর্মীরা যুক্ত বলে অভিযোগ তুলেছেন তিনি।
মি. রানা বলেন, প্রগতি বর্মন তমা নামে এক নেতা আহত হওয়ার পর তার মাথায় সেলাই দিতে হয়েছে। পরে তাকে বাসায় নেয়া হয়।
[মোদীর সফর বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত এক বিক্ষোভকারীকে সহায়তা করছেন তারই দুই বন্ধু যারা নিজেরাও বিক্ষোভ করছেন]
এ বিষয়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি এবং প্রগতিশীল ছাত্র জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আল কাদেরি জয় বলেন, ভারত সাম্রাজ্যবাদী দেশ যারা বাংলাদেশের নদীসহ অন্য নানা বিষয়ে দখলদারিত্ব চালাচ্ছে এবং ভারতের গুজরাটসহ বিভিন্ন দাঙ্গায় মোদীর সম্পৃক্ততা রয়েছে। যার কারণে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর আদর্শের সাথে মোদীর সফরের বিষয়টি সাংঘর্ষিক।
বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মুস্তাফা বলেন, ছাত্রলীগের সদস্যরা লাঠিসোটা, চেয়ার, টেবিল নানান কিছু নিয়ে হামলা চালায়।
[এ হামলায় বাম দলগুলোর নেতাকর্মী ছাড়াও ৭ জন সাংবাদিকও আহত হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন]
এ হামলায় বাম দলগুলোর নেতাকর্মী ছাড়াও ৭ জন সাংবাদিকও আহত হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
বাম দলগুলোর নেতাকর্মীরা বলছেন, হামলার পেছনে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন- ছাত্রলীগ জড়িত।
অবশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সেক্রেটারি সাদ্দাম হোসাইন বলছেন, তারা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন।
[এ ঘটনায় কোন মামলা হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ। কাউকে আটকও করা হয়নি]
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন এ ঘটনায় কাউকে আটক বা কোন মামলা হয়নি। তবে কেউ অভিযোগ করলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন তারা।
এদিকে বাম ছাত্র সংগঠনগুলো ২৫শে মার্চ টিএসসি থেকেই আরেকটি মশাল মিছিল বের করার কর্মসুচী ঘোষণা করেছে।
২৬শে মার্চ ঢাকা সফরে আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তবে এরই মধ্যে তার সফর বাতিলের দাবিতে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হয়েছে।
[মোদীর ঢাকা সফরের প্রতিবাদে বিক্ষোভে সহিংসতায় আহত হন অনেকে]
সম্প্রতি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং সরকার-ঘোষিত মুজিব বর্ষ উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরকে ঘিরে প্রতিবাদ বিক্ষোভ দানা বাঁধছে। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের দুই মেরু, ডান এবং বাম উভয় দিক থেকে আপত্তি জানানো হচ্ছে।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ বলছে, ভারতের মুসলমানদের উপর নির্যাতনের দায় ব্যক্তি নরেন্দ্র মোদীর ওপরে পরে, এবং সেজন্য তারা তাঁকে বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তী বা মুজিব বর্ষ উপলক্ষে এই দেশে স্বাগত জানাবেন না।
[হেফাজতে ইসলামের সংবাদ সম্মেলন করে মোদীর সফর বাতিলের আহ্বান জানায়]
একই সাথে, বাংলাদেশের বেশ কিছু বামপন্থী সংগঠন ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর নিয়ে জোর আপত্তি জানিয়ে বলছে, ‘শুধু একটা রাজনৈতিক দলকে খুশি করার’ জন্য নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফর তাদের কাছে কাম্য না।
তবে বাংলাদেশ সরকার এইসব প্রতিবাদকে মি. মোদীর সফরের প্রতি হুমকি হিসেবে দেখছে না। ঢাকায় একজন মন্ত্রী বলেছেন, মি. মোদীর সফরের সময় কোন রকম বিক্ষোভ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ‘জনগণকে সাথে নিয়ে মোকাবেলা করবে’।