বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩২ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 3 minutes
কামরুল হাসান, ময়মনসিংহ :
নেত্রকোনার জেলার মদন উপজেলায় প্রায় দুইশতাধিক ভাতাভোগীদের টাকা চলে গেছে অন্যের মোবাইলে। সুবিধাভোগীদের নগদ অ্যাকাউন্ট খোলার সময় এজেন্টদের উদাসীনতায় নামের সাথে মোবাইল নম্বর ঠিক না রেখে এন্ট্রি দেওয়ায় এই ঘটনাটি ঘটে। উপজেলা সমাজসেবা অফিসে প্রতিদিন এই অসহায় ভুক্তভোগী মানুষ, তাদের হিতাকাঙ্খী ও স্বজনেরা ভিড় করছেন। এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা অফিস ও নগদ এজেন্ট প্রতিনিধির বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন অনেকেই। এলাকাবাসী অনেকেই মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, নগদ এজেন্ট নিয়োগ করেছেন সমাজ সেবা অফিস তাই সকল দায়ভার তাদের এবং এজেন্ট প্রতিনিধিদের নিতে হবে। তবে সমাজ সেবা কতৃপক্ষ বলেছেন, আমরাও বিষয়টি বুঝতে পারছিনা নগদের এজেন্ট প্রতিনিধিরা কিভাবে এত বড় একটি ভুল করতে পারে। নিজেদের মোবাইল নম্বর হয়তবা ভুল প্রদানের কারণে্ও এমন ঘটনাটি ঘটতে পারে। কিন্তু ভোক্তভোগীদের টাকা ফেরত পাওয়ার বিষয়টির এখনো কোন সুরাহা এখনো মিলছেনা। সমাজ সেবা অফিস সূত্রে জানা যায়, মদন পৌরসভাসহ উপজেলার আট ইউনিয়নের মোট সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১০ হাজার ৯৮৯ জন। নগদ অ্যাকাউন্ট খোলা প্রায় শেষ পর্যায়ে । তাদের মধ্যে প্রায় দুইশতাধিক বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ও তালাকপ্রাপ্ত সুবিধাভোগীদের ৬ মাসের ভাতার টাকা অন্যের অ্যাকাউন্টে চলে গেছে।
তিয়শ্রী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফকর উদ্দিন আহমেদ জানান, নগদ এজেন্ট নিয়োগ করেছে সমাজসেবা অফিস। এজেন্টরাই মূলত এমন কাজটি করেছে। আমার ইউনিয়নে বেশ কয়েকজন ভাতাভোগীর এমন সমস্যা হয়েছে। বিষয়টি সমাজসেবা অফিসে জানিয়েছি।
কাইটাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাফায়েত উল্লাহ রয়েল জানান, এটি মূলত একটি সংঘবদ্ধ চক্র। আমার সচিবকে সমাজসেবা অফিসে পাঠিয়ে এই সমস্যার বিষয়টি অবগত করেছি।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ওয়েবসাইটে ভাতাভোগীদের তথ্য এন্ট্রি দিতে হয়। এতে মোবাইল নম্বরও দিতে হয়। নগদ এজেন্ট কোম্পানির প্রতিনিধিদের উদাসীনতায় প্রায় দুইশতাধিক বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ও তালাকপ্রাপ্ত সুবিধাভোগীদের গত অক্টোবর-২০২০ থেকে মার্চ-২০২১ তাদের ৬ মাসের ভাতার টাকা অন্যের অ্যাকাউন্টে চলে গেছে। ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে জানা যায় যে, তারা অপেক্ষা করেও যখন মোবাইলে টাকা পাচ্ছেন না তখন অফিসে যোগাযোগ করে জানতে পারেন অন্য নম্বরে তাদের টাকা চলে গেছে। তখন থেকেই তারা অনবরত ঐ নম্বরগুলোতে যোগাযোগ করছেন। কিন্তু তারা ঐ নম্বরগুলো বন্ধ রয়েছে বলে জানান।
দক্ষিণ বালালী গ্রামের প্রতিবন্ধী সেকুল মিয়ার ভাই হানিফ মিয়া জানান, আমার ভাইসহ আরো প্রতিবন্ধী দুই বাচ্চা । তাদের টাকাও চলে গেছে আরেক জনের মোবাইলে। ফোন করলে বন্ধ পাই। আমরা আমাদের টাকা পাব কিনা বুঝতে পারছি না।
প্রতিবন্ধী ভাতাভোগী বাঘমারা গ্রামের শরিফা আক্তার বলেন, আমি গ্রামীণ নম্বর দিয়েছিলাম, অফিসে এসে দেখি আমার ভাতা চলে গেছে বাংলালিংক নম্বরে। যতবারই ফোন দেই দেখি বন্ধ।
কেশজানি গ্রামের আঙ্গুরা আক্তার একই অভিযোগ করেন, তিনি বলেন অফিসে নম্বর দিছি আমারটা কিন্তু টাকা চলে গেছে আরেক নম্বরে। কতদিন ধইরা অফিসে আইতাছি কিন্তু কিছুত অইতেছে না। আমরা ভাতা না পাইলে ঈদ করুম কেমনে?
এছাড়াও কল্পনা আক্তার, উষারানী বিশ্বশর্মা, আব্দুল বারেক সহ অনেক অসহায় হতাশাগ্রস্থ লোক জনের নিত্যদিনে কাজ সমাজসেবা অফিসে এসে হাজিরা দেওয়া যাতে তারা তাদের ন্যায্য ভাতা পাইতে পারেন ও তাদের পরিবারের সাথে মিলে মিশে ঈদ উদযাপন করতে পারেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শাহজামান আহমেদ বলেন, নগদের অফিসের লোকজন এমনটি করেছে। যে ভুল নম্বরগুলোতে টাকা গেছে কিন্তু বন্ধ রয়েছে ওই নম্বরগুলো পেরোল দেয়া হয়েছে। সেই টাকা ফেরত আসবে, দিতে পারব। আর যে নম্বরের টাকা উত্তোলন করেছে, সেটার কিছু করতে পারব না। এ নিয়ে প্রথম পর্যায়ে অনেক জটিলতা থাকবে। সারা দিন কাজ করছি। ভুলে যাদের টাকা চলে গেছে তাদের বিষয়টি নগদের অফিসে ও আমাদের নেত্রকোনা অফিসে প্রেরণ করেছি। আমরা চেষ্টা করছি।
মদন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বুলবুল আহমেদ জানান, কয়েকজন ভাতাভোগী আমার অফিসে এসেছিল। তাদের কাছ থেকে বিষয়টি জেনেছি। এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছি। বিষয়টি কিভাবে সংশোধন করা যায় প্রয়োজন হলে জেলা প্রশাসক স্যারের সাথে কথা বলব এবং নগদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে বিষয়টি দ্রুত সামাধানের চেষ্টা করা হবে।