শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:৫৫ অপরাহ্ন

News Headline :
মানববন্ধনের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন শ্যামনগরে গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে সড়কে ভ্যান চালকের মৃত্যু রাজশাহীর মোহনপুরে মদ পানে ৩ জনের মৃত্যু, গ্রেফতার ২ রাজশাহী মহানগর বিএনপি’র সাতটি থানার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা যানজট নিরসন দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে আরএমপি’র মতবিনিময় সভা শ্যামনগরে এবার কৃষকরা আমন ধানের আশানুরুপ ফলন পেয়েছে পাবনায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ জন নিহত ১জন আহত শাজাহানপুরে বিএনপি’র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করে ছাত্রদলের দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত মান্দায় বিল উন্মুক্তের দাবিতে জেলেদের সংবাদ সম্মেলন সভাপতির স্বৈরাচারী আচরন স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতিতে পাবনা শহর সমাজ সেবা কার্যালয়ের কার্যক্রম স্থবির

পাবনায় সুদের টাকার জন্য সাড়ে ৯ লাখ টাকার চুরির মামলা পুলিশের অতি উৎসাহের কারন কি?

Reading Time: 5 minutes

নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা:

বন্ধকিকৃত স্বর্ণের আসল টাকা জমা দিয়ে, সুদের টাকা বাকি রেখে সোনার দোকান থেকে গহনা নিয়ে চলে যায় রাধানগর ঈদগাহ মাঠ পাড়ার মোশারোফ হোসেনের ছেলে মুন্না। এদিকে সময় মত সুদের টাকা দিতে না পারায় মিথ্যা চুরির মামলা করেছে পাবনা তাতী সমবায় মার্কেটের স্বর্ণ ব্যাবসায়ী তানিয়া জুয়েলার্সের মালিক জহুরুল ইসলাম ওরফে সুদে জহুরুল। শুধু তাই নই, টাকা দিতে দেরী হওয়ায় মুন্নার স্ত্রী মুক্তা খাতুনকে অনৈতিক কাজের প্রস্তাব দেয় মামলার বাদী জহুরুল ইসলাম। এদিকে পুলিশ মামলার প্রধান আসামীকে গ্রেফতার না করে আসামীর শশুরকে গ্রেফতার করে পুলিশ কি সুদে ব্যবসায়ী জহুরুলের অনৈতিক ইচ্ছা পুরনের রাস্তা প্রসস্ত করে দিচ্ছেন? প্রশ্ন ক্ষতিগ্রস্থদের? যদি তাই হয়, তাহলে কি ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্থরা।
স্বর্ণ ব্যাবসায়ী জহুরুলের আদালতের দায়ের করা মামলার বিবরণে জানা যায়, গত সেপ্টেম্বর মাসের ১১ তারিখে রাধানগর ঈদগাহ মাঠ পাড়ার মোঃ মোশারোফ হোসেনের ছেলে মুন্না(৩২) আব্দুল হামিদ রোডের তাতী মার্কেটে অবস্থিত তানিয়া জুয়েলার্স থেকে ১১ভরি ১২আনা স্বর্ণ যার মুল্য ৯লাখ চল্লিশ হাজার টাকা ক্রয় করার জন্য আসেন। স্বর্ণগুলি আসল কিনা তা যাচাই করার জন্য মামলার ১নং আসামী পাশর্^বর্তি কুইন জুয়েলার্সে দেখানোর জন্য নিয়ে যায়। কুইন জুয়েলার্স থেকে স্বর্ণ ও দাম সঠিক থাকার পরও তা আবারও যাচাইয়ের জন্য অন্য দোকানে দেখানোর কথা বলে স্বর্ণগুলি নিয়ে পালিয়ে যায়। মামলায় উল্ল্যেখ করা হয়, ঘটনার সময় মুন্নার স্ত্রী মুক্তা খাতুন ও তার শশুর মুক্তার বিশ্বাস দোকানের বাইরে অবস্থান করছিলেন। এ ঘটনায় পাবনার বিজ্ঞ অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ৩ জনের নাম উল্ল্যেখ করে একটি পিটিশন মামলা দায়ের করেন। পরে আদালতের নির্দেশে পাবনা সদর থানায় গত ২৩ সেপ্টেম্বর ৩৮০/৩৪ পেনাল কোড ধারায় একটি মামলা রুজু করা হয়। মামলা নং ৫১/৭০৪, তাং-২৩-০৯-২০২২ইং। মামলার আসামী হলেন, পাবনা সদর উপজেলার পৌর রাধানগর ঈদগাহ মাঠ পাড়ার পুলিশ সদস্য মোশারোফ হোসেনের ছেলে মুন্না(৩২), তার স্ত্রী মোছা: মুক্তা খাতুন(২৭) ও মুন্নার শশুর ফরিদপুর উপজেলার হাদল ইউনিয়নের মৃত মোবারক বিশ্বাসের ছেলে মুক্তার বিশ্বাস (৫৫)।
এ মামলায় গত শুক্রবার(১১ নভেম্বর)দিবাগত গভীর রাতে, ২নং আসামী মুক্তা খাতুনের বাবাকে পাবনা সদর ও ফরিদপুর থানা পুলিশ গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরন করে।
ঘটনার বিস্তারিত জানতে, স্বর্ণ ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনের সাথে মুঠো ফোনে কথা হয়। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, মুক্তা ও তার স্বামী মুন্নাকে আমি চিনি। তারা বিভিন্ন সময় আমার কাছে স্বর্ণ বন্ধক রেখে টাকা নিয়েছিল। সর্বশেষ প্রায় বছর খানেক আগে কয়েকধাপে স্বর্ণ বন্ধক রেখে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা নিয়েছিল। পরে টাকা পরিশোধ করে বন্ধককৃত স্বর্ণ তারা নিয়ে যায়। এরপর যতটুকু জানি মুক্তা ও মুন্না আমার এখান থেকে স্বর্ণগুলো তুলে নিয়ে তানিয়া জুয়েলার্সে বন্ধক রাখে। এরপর কি হয়েছে আমি বলতে পারবো না। তবে মানুষের মুখে শুনেছি তানিয়া জুয়েলার্সের মালিক মুন্নার নামে মামলা করেছে।
এদিকে মুন্না জানায়, আমি তানিয়া জুয়েলার্সে স্বর্ণ বন্ধক রেখে ৩লাখ ৫০ হাজার টাকা গ্রহন করি। দেড় মাস পর মুল সাড়ে ৩ লাখ টাকা প্রদান করে জহুরুল ভাইকে বলি লাভের টাকা স্বর্ণ বিক্রি করে অথবা অন্য উপায়ে ম্যানেজ করে আপনাকে দিবো। এরপর জহুরুল ভাই মুল টাকা নিয়ে স্বর্ণগুলো আমাকে ফেরত দেয়। স্বর্ণগুলো বিক্রির জন্য পার্শ্ববর্তি কুইন জুয়েলার্সে যায় এবং সেখানে ভাল দাম না পাওয়ায় আমার কর্মস্থল গাজিপুরে চলে আসি। এরপর ওয়াদামত লাভের টাকা দিতে না পারায় জহুরুল আমাকে বিভিন্ন সময় ফোনে হুমকি দিতে থাকে। আমি বলি আসল টাকাতো আপনাকে দিয়েছি। লাভের টাকা একটু দেরি হলেও আপনাকে দিয়ে দিবো। এরপর জহুরুল আমার স্ত্রীকে বিভিন্ন সময় কু-প্রস্তাব দেয়। আমার স্ত্রী মুক্তা খাতুন আমাকে বিষয়টি অবহিত করে এবং আমার স্ত্রী জহুরুলের কু-প্রস্তাবে রাজি না হয়ে, ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে বকাবকি করে। তারপর জানতে পারলাম, জহুরুল আমার স্ত্রী মুক্তা খাতুন, আমার শশুর মুক্তার সেখ ও আমার নামে চুরির মামলা করেছে।
তানিয়া জুয়েলার্সের মালিক জহুরুলের কাছে এর আগেও কয়েকবার স্বর্ণ বন্ধক রেখেছি। এর প্রমানও আমার কাছে আছে। অনেকটা ভাল সর্ম্পকের কারনে এবং সুদের হার কম নেওয়ায় আমি তার কাছে আমার গহনা বন্ধক রাখি এবং আমার স্ত্রী’র গরু-ছাগল বিক্রি করে গত ৯ই সেপ্টেম্বর সাড়ে ৩ লাখ টাকা ম্যানেজ করি। তারপর জহুরুল ভাইকে গিয়ে বলি আমি আপনার আসল টাকা নিয়ে এসেছি। আপনি আমার গহনাগুলো ফেরত দেন। আমি কিছু গহনা বিক্রি করে আপনার লাভের টাকা দিয়ে দিবো। পরে স্বর্র্ণ বিক্রি করতে গেলে ন্যায্য দাম না পাওয়ায় আমরা দুজনে ঢাকায় চলে আসি এবং জহুরুল ভাইকেও বলে আসি, আমি যে কোন উপায়ে টাকা ম্যানেজ করে আপনার লাভের টাকা দিয়ে দিবো। আমার স্ত্রী তার কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। মামলার ২নং আসামী মুক্তা খাতুনও বাদীর দেওয়া কু-প্রস্তাবের কথা স্বীকার করেন।
এদিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রাসেল এর কাছে জানতে চাওয়া হয়, আপনি আসামী ধরতে যাওয়ার সময় তার পরিবারের কাছে বলেছিলেন, গ্রেফতারকৃত মুক্তার বিশ্বাসকে ঘটনার সময় ওই দোকানের ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে। এছাড়া ওসি সাহেব মুন্নার মোবাইলে কল দিলে মুন্না ওসি সাহেবের কাছে স্বীকার করে, টাকার বিশেষ প্রয়োজনে আমি এই কাজ করেছি। কথাগুলো সত্যি কিনা? এ ছাড়া আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি ছিল কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, মোবাইলে এসব কথা বলা সম্ভব না। আপনি থানায় আসেন, সামনা সামনি সব বলবো।
একাধিক ব্যাক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জহুরুলের বিরুদ্ধে একাধিক নারী কেলেংকারীর অভিযোগ রয়েছে। জহুরুল তার এলাকায় এক শিশুর সাথে দৈহিক সর্ম্পক্য স্থাপন করে গোপনে অনেক টাকা জরিমানা দিয়ে ওই ঘটনা থেকে মুক্তি পায়। এ ছাড়া সে স্বর্ণ ব্যবসার আড়ালে স্বর্ণ বন্ধক রেখে সুদের ব্যবসা করে। এই সুদের ব্যবসার কোন বৈধ অনুমতি নেই। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এমন অবৈধ রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব সুদে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করে থাকে খোদ আইন শৃংখলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যগণ। স্থানীয় বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠিও সুদে ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রনে থাকে। সুদের ব্যবসা নিয়ে কোন ঝামেলা হলেই আইনশৃংখলাবাহিনী ও সন্ত্রাসীরা সুদে ব্যবসায়ীদের পক্ষ নিয়ে তাদেরকে সহযোগিতা করে থাকেন। একাধিক স্বর্ণ ব্যসায়ীর কাছ থেকে জানা গেছে, যে অভিযোগের ভিত্তিতে মামলাটি হয়েছে পাবনা সোনাপট্রিতে এমন ঘটনার নজির নেই বললেই চলে। ১টি বা ২টি স্বর্ণের চেইন যার ওজন ১ বা ২ ভরীর বেশি না, বিশেষ সম্পর্কের কারনে কতিপয় ক্রেতাদের আমরা তাদের দেখা শুনা বা যাচাইয়ের জন্য স্বর্ণ দিয়ে থাকি। জমানত ছাড়াই ১০/১২ ভরী স্বর্ণ কাউকে দেখার জন্য দিবো, এত অভাবে পাবনার স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা পড়েনি। কিসের জন্য পুলিশ একটি মিথ্যা মামলাকে গুরুত্ব দিয়ে আসামী গ্রেফতার করতে আগ্রহি হয়ে গেলেন, সেটাও তদন্তের বিষয়। এছাড়া মামলার বিশেষ প্রয়োজনে যদি আসামী গ্রেফতার করতেই হয়, তবে মুল প্রধান আসামী মুন্নাকে গ্রেফতার করার কথা। খোঁজ নিয়ে গোপন তথ্যে আরো জানা যায়, বাদী মোঃ জহুরুল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রাসেলকে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে মামলাটিকে সত্য হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে কাজ করে যাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় মামলার ৩নং আসামী বৃদ্ধ মুক্তার বিশ্বাসকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইতিপুর্বেও মিথ্যা মামলাকে সত্য হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে বাদীর থেকে উৎকোচ নিয়ে পাবনা সদর থানা পুলিশ আদালতে চার্যশিট দিয়েছে।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম এর কাছে জানতে চাওয়া হয়, আপনি কি প্রধান অভিযুক্ত আসামী মুন্নার সাথে মোবাইলে কথা বলেছিলেন কিনা এবং আসামী মুন্না সোনা চুরির কথা আপনার কাছে স্বীকার করেছিল কি না? তিনি মুঠোফোনে এই প্রতিনিধিকে জানান, আমার সাথে কারো কোন কথা হয়নি। আপনি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই রাসেলের সাথে কথা বলেন।
এদিকে মামলার ৩নং আসামী মুক্তার বিশ্বাসকে গ্রেফতারের সময় ফরিদপুর থানার এসআই ফারুক তাকে চর থাপ্পর মারেন। ফরিদপুর থানার ওসির কাছে জানতে চাওয়া হয়, বিনা ওয়ারেন্টের কোন আসামীকে চড়-থাপ্পর মারা মানবধিকার লংঘিত হয় কি না? তিনি বলেন, মামলাটি পাবনা সদর থানার। পাবনা সদর থানার ওসি ইনচার্য আমিনুল ইসলাম ও পাবনা সদর সার্কেল রোকুনুজ্জামান স্যার আমাকে ফোন করে বলে, আপনার থানা এলাকায় পাবনা সদর থানার একটা টিম অপারেশনে যাবে, আপনি তাদেরকে সার্বিক সহযোগিতা করবেন। এরই প্রেক্ষিতে ওই দিন রাতে আমি এসআই ফারুককে পাবনা সদর থানার টিমকে সহযোগিতা করার জন্য পাঠিয়েছিলাম। ফরিদপুর থানার টিম যাবে সদর থানাকে প্রটেকশন দেওয়ার জন্য। যা কিছু করবে সেটা সদর থানার অভিযান টিম করবে। আমার থানার টিম কারো গায়ে হাত দেবার কথা নই এবং সেখানে কি পরিস্থিতিতে কারো গায়ে হাত তোলা হয়েছে সেটাও আমি জানি না। তবে আপনি যখন বিষয়টি আমাকে বললেন, আমি আমার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাবো।
থাপ্পর মারার বিষয়ে এসআই ফারুকের মুঠো ফোনে কল করা হলে তিনি বলেন, আমি সে দিন কারো গায়ে হাত তুলিনি। তাকে জানানো হয়, মারার বিষয়ে প্রমান আছে। তিনি বলেন প্রমান যেখানে পারেন সেখানে গিয়ে দেখান, বলে লাইন কেটে দেন।
ঘটনার বিস্তারিত জানতে মামলার বাদী জহুরুল ইসলামকে মুঠোফোনে কল করা হলে, তিনি অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেন এ প্রতিনিধিকে। এক পর্যায়ে বলেন, একটি মামলা হয়েছে। পাবনা সদর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম সাহেব আমাকে আরো ২টি মামলা করতে বলেছে। নিরপেক্ষ তদন্ত করা হলে বেরিয়ে আসতে পারে থলের বেড়াল অভিমত একাধিক স্বর্ণ  ব্যবসায়ীসহ সাধরণ মানুষের।

Please Share This Post in Your Social Media

Design & Developed BY Hostitbd.Com