শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:১৯ অপরাহ্ন
Reading Time: 3 minutes
বায়েজিদ বোস্তামী, পাবনা বিশেষ প্রতিনিধি :
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে নানা অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ করার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও মুঠোফোনে নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে সলিমপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে তথ্য দেন কয়েকজন ব্যাক্তি এরপর সলিমপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের দিকে নজর দেওয়া হয়। টানা কয়েকদিনের অনুসন্ধান ও এলাকাবাসির অভিযোগে জানা গেছে, ঈশ্বরদী উপজেলার জয়নগরে অবস্থিত সলিমপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে কর্মরত উপ-সহকারি মেডিক্যাল অফিসার ফারজানা ইয়াসমিন সঠিকভাবে দায়িত্ব পালণ করেন না। নিয়মানুযায়ী সকাল ৯টা থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত অফিস করার কথা থাকলেও এই নিয়মের তোয়াক্কা করেন না তিনি। এ কারনে মেলেনা চিকিৎসা সেবা ,দেওয়া হয়না ঔষধ। সেখানে দায়িত্বে থাকা অফিস সহায়ক কাম নিরাপত্তা প্রহরীর বাড়ি ঐ এলাকায় এবং তিনি জমিদাতা বংশের সন্তান হওয়ায় চাকরী করেন বাড়ির পাশের এই সরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে। ঔষধ চুরি, চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সাথে অশালীন আচরণসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সরেজমিনে বেলা ১২ টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি খোলা রয়েছে। তবে সেখানে কেউ নেই। কিছুক্ষণ পর এক ব্যাক্তি এসে পরিচয় দেন তার নাম রেজাউল। তিনি এখানকার অফিস সহায়ক কাম নিরাপত্তা প্রহরী। অফিস খোলা রেখে এভাবে চলে গিয়েছেন কেন জানতে চাইলে বলেন, তিনি বলেন পাশের দোকানে চা খেতে গিয়েছিলেন। এখানকার উপ-সহকারি মেডিক্যাল অফিসার কোথায় জানতে চাইলে পরিষ্কার করে কিছুই বলতে পারেননি তিনি। পরে অবশ্য তাকে কল দিয়ে ডেকে আনা হয়। সেদিন শনিবার থাকা সত্বেও ইউনিয়ন পরিষদে ব্যাক্তিগত কাজে গিয়েছিলেন বলে দাবী করেন উপ-সহকারি কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার ফারজানা ইয়াসমিন। পরদিন আবার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের সামনে দাড়িয়ে এক ব্যাক্তির কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহের সময় অফিস সহায়ক কাম নিরাপত্তা প্রহরী রেজাউল সরদার এসে ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, আপনি এখানে আসছেন কেন? এখানে সেবা না পেলে এলাকার চেয়ারম্যান মেম্বার আছে আপনার কি? আপনি বেশকিছু দিন ধরে এসে এগুলো করতেছেন, আপনি চাচ্ছেন টা কি? রাস্তার উপর দাড়িয়ে প্রতিবেদক কাজ করতে পারবে কিনা আর রেজাউল সরদারেরতো অফিসে থাকার কথা তিনি বাইরে থেকে আসলেন কেন বলতেই প্রতিবেদকের উপর চড়াও হন তিনি। এক পর্যায়ে প্রতিবেদক স্থান ত্যাগ করেন। কিছুক্ষণ পর জয়নগর বোর্ড অফিস মোড় নামক জায়গায় ক্ষমতাসীন দলের এক নেতা এবং আরও কয়েকজনসহ প্রতিবেদককে ঘেরাও করে নানা হুমকি দিয়ে উচ্চস্বরে বলতে থাকেন, এমন একজন লোক নেই যে বলবে এখানে সেবা পায়না। এরইমধ্যে এক ব্যাক্তি এই কথার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, আমি সেবা পাইনি আমার বাড়ির আশপাশের মানুষজন পায়নি। স্বাস্থ্য কেন্দ্রতো সবসময় বন্ধই থাকে আর খোলা থাকলেও লোক থাকেনা। পরে ঐ ব্যাক্তিকে সাথে নিয়ে তার বাড়িতে গিয়ে পরিবারের লোকজনসহ তাদের কাছ থেকে সাক্ষাৎকার গ্রহণের সময় মোটরসাইকেল যোগে ছুটে এসে সেখানে নানাভাবে বাধার সৃষ্টি করেন অফিস সহায়ক কাম নিরাপত্তা প্রহরী রেজাউল সরদার। ঘটনাস্থলে থেকে উপজেলা মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ আব্দুল বাতেনকে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি। তার ফোনে মেসেজ পাঠানো হলেও উত্তর দেননি তিনি। পর পর কয়েকদিন তার অফিসে গিয়ে এবং আরও কয়েকবার কল দিয়েও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এরইমধ্যে সলিমপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রের সংবাদ প্রকাশ না করতে নানা মাধ্যমে যোগাযোগ করে প্রতিবেদককে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন সেখানে কর্মরতরা। পরে কোনোভাবেই প্রতিবেককে ম্যানেজ করতে না পেরে এক ইউপি চেয়ারম্যানের আত্বীয় পরিচয়ে প্রতিবেদককে ফোন দিয়ে চাকরী খাওয়ার হুমকিসহ নানা ভয়ভীতি দেখানোর চেষ্টা করেন। স্থানীয় এক ইউপি চেয়ারম্যানও প্রতিবেদককে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশে বিরত রাখতে নানাভাবে চেষ্টা করেন। এরপরও থেমে থাকেনি অনুসন্ধান। ঈশ্বরদীর প্রায় সবগুলো ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রেরই এমন বেহাল দশা। সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঠিক নজরদারির অভাবেই ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোর এমন চিত্র বলে মনে করছেন সচেতন মহল। দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে এ পরিস্থিতি হবে আরও ভয়াবহ। আগামী পর্বে ঈশ্বরদীর লক্ষ্ণীকুন্ডা ও মুলাডুলি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা হবে। এসব ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র দেখভালের দায়িত্বে থাকা উপজেলা মেডিক্যাল অফিসার আব্দুল বাতেনের সাথে এবার দেখা করা সম্ভব হয়েছে। বিস্তারিত ৩য় পর্বে।