বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০৮ অপরাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
এম.আর রাসেল হোসাইন:
পাবনার ঈশ্বরদীতে চোর সন্দেহে রাব্বি হোসেন চঞ্চল (১৮) নামের এক যুবককে ইউনিয়ন পরিষদ কক্ষে আটকিয়ে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগে সাঁড়া ইউপি চেয়ারম্যান এমদাদুল হক রানা সরদারসহ দোষীদের শাস্তির দাবীতে বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী। আজ ২২ শে মে (রবিবার) সকালে ঈশ্বরদী সাঁড়া ইউনিয়নের ইলশামারি গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। নিহত রাব্বি হোসেন চঞ্চল ঈশ্বরদীর মাঝদিয়া পুরাতন রেললাইন এলাকার জাহিদুল ইসলাম ঘোরতের ছেলে। নিহত রাব্বি হোসেন চঞ্চলের বাবা জাহিদুল ইসলাম ঘোরত অভিযোগ করে বলেন, আমার ছেলে রাব্বি হোসেন চঞ্চলকে চোর সন্দেহে গত শনিবার আনুমানিক রাত ২ টার দিকে ঈশ্বরদীর সাঁড়া ইউনিয়নের ইলশামারি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন মোড়ে শিহাব, ওহাবসহ কয়েকজন আটক করে এবং সেখানে তারাসহ এলাকাবাসী রাব্বিকে মারপিট করে সাঁড়া ইউপি চেয়ারম্যান এমদাদুল হক রানা সরদারকে অবগত করেন। চেয়ারম্যান পরিষদের চৌকিদার আজগার আলীকে পাঠিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চঞ্চলকে সাঁড়া ইউনিয়ন পরিষদে আনেন। খবর পেয়ে আমিসহ আমার ভাই ও ভাতিজাদের নিয়ে চেয়ারম্যান এমদাদুল হক রানা সরদারের নিকট যাই। ক্ষমা চেয়ে ছেলেকে আমার নিকট দেওয়ার জন্য অনুরোধ করি। তখন চেয়ারম্যান বলেছিলেন তোমার হাতে রাব্বিকে দেওয়া যাবে না। সকালে থানায় পাঠানো হবে। এরপর আমাদের উপস্থিতিতেই চেয়ারম্যানের নির্দেশে ইউনিয়ন পরিষদের কক্ষে রাব্বিকে বেদম মারপিট করা হয়। নিরুপায় হয়ে আমরা বাড়িতে চলে আসি।রবিবার সকালে আমার ছেলের (রাব্বি) খোঁজে থানায় এসে জানতে পারি তাকে থানায় দেওয়া হয়নি। এরপর চৌকিদার আজগরসহ কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তখন তারা জানায় রাব্বিকে হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ও পায়ে হেঁটে বাড়ি চলে গেছে। কিন্তু আমার রাব্বিকে কোথায় খুঁজে পাচ্ছিলাম না। এরপর দুপুর একটার দিকে শহরের রেলগেট সংলগ্ন বাস টার্মিনাল সংলগ্ন ঝোঁপের মধ্যে রাব্বি অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে বলে লোকমুখে শুনতে পাই। তখন সেখান থেকে রাব্বিকে উদ্ধার করে ঈশ্বরদী উপজেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
রাব্বির বাবা জাহিদুল আরো বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ কক্ষে আটক রেখে সারারাত ধরে রাব্বিকে মারপিট করা হয়। যখন গুরুতর হয়ে পড়ে তখন তাকে ঈশ্বরদী হাসপাতালে নেওয়া হয়। রাব্বির শরীরের বিভিন্ন জায়গায় সেলাই দেওয়া হয়। এরপর রাব্বির মৃত্যু হলে তারা রাব্বির লাশ ঘটনাস্থলে ফেলে পালিয়ে যায়।
তার ছেলে রাব্বিকে চেয়ারম্যান এমদাদুল হক রানা সরদারের হুকুমে সারারাত ধরে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে চেয়ারম্যানসহ দোষীদের শাস্তি দাবী করেছেন। ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রেজিষ্টার খাতা দেখে ও সেই সময়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ সুত্রে জানা যায়, রবিবার সকাল ৯ টায় ঈশ্বরদীর ইলশামারি গ্রামের সৈয়দ মন্ডলের ছেলে সাদেক আলী পরিচয়ে রাব্বি হোসেন চঞ্চলকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। চঞ্চলের সমস্ত শরীরে আঘাতের চিহৃ ছিলো। নাখ, মুখ, কপাল, মাথা, হাত দিয়ে রক্ত ঝরতে ছিলো। সেই সময় তার অবস্থা ভালো ছিলো না। এমতাবস্থায় তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে সেলাই দিয়ে দেওয়া হয়। এরপর তার সঙ্গে আসা লোকজন উন্নত চিকিৎসার কথা বলে ছাড়পত্র ছাড়াই রাব্বিকে নিয়ে চলে যান। এরপর দুপুর সোয়া একটায় রাব্বিকে মৃত অবস্থায় তার বাবা জাহিদুল ইসলাম ঘোরত আবার হাসপাতালে নিয়ে আসেন। ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, চোর সন্দেহে এলাকাবাসী রাব্বি হোসেন চঞ্চলকে আটক করে গণ পিটুনি দেয়। এরপর হাসপাতালে এনে চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে নেওয়ার পথে রাব্বির মৃত্যু হয়। তখন তারা রাব্বির মরদেহ বাস টার্মিনালের পাশে রেখে পালিয়ে যান। ওসি আরো জানান, লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সাঁড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমদাদুল হক রানা সরদার মুঠোফোনে বলেন, একটি পক্ষ তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। রাব্বি হোসেন চঞ্চলকে ইলশামারী এলাকাবাসী আটক করে মারপিট করেন এবং আমাকে খবর দেয়। তাকে মারপিট করা হয়েছে বলে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার নির্দেশ দিই। রাব্বি হোসেন চঞ্চলকে পরিষদ কক্ষে এনে মারপিট করার কোন প্রমান কেউ দিতে পারবে না বলেও দাবী করেন চেয়ারম্যান রানা সরদার। এদিকে দোষীদের শাস্তির দাবিতে মাঝদিয়া পুরাতন রেললাইন এলাকায় বিকেলে বিক্ষোভ মিছিল করেছে এলাকাবাসী।
সংবাদ ভুমি থেকে সংগ্রহিত