শনিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২৮ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 3 minutes
নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা:
পাবনা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীসহ সকল উপজেলায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের কর্মরত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এসব অনিয়মের কারনে ঠিকাদারদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেরাজ হোসেন ও ইস্টেমেটর হেদায়েত করিমের স্বৈরাচারী আচরনের কারনে ঠিকাদারগন বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠতে পারে। এতে করে আইনশৃংখলার অবনতি হতে পারে। এদিকে বেড়া উপজেলায় নিরাপদ পানি সরবরাহে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে অফিসের পিয়ন সামসুলের বিরুদ্ধে। আর এ কাজে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন স্থানীয় এমপি’র বাড়ির কেয়ার টেকার ইব্রাহিম। পিয়ন সামসুল পাবনা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর ইষ্টেমেটর হেদায়েত করিমের মনোনীত ব্যাক্তি। ইস্টেমেটর হেদায়েত করিম জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী প্রধান কার্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ সাইফুর রহমানের নিকট আত্বিয়। মোঃ সাইফুর রহমানই হেদায়েত করিমকে চাকুরী প্রদান করেন বলে এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে। পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জের যত কাজ বের হয় তার সকল কমিশন হেদায়েত করিমের মাধ্যমে পৌছে যায় প্রধান প্রকৌশলী সাইফুর রহমানের কাছে।
জানা যায় বেড়া উপজেলার বৃশালিখা গ্রামে, ৩টি সাব মারসেবল টিউবওয়েল বরাদ্ধ করা হয়। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকল্পের বরাদ্ধ স্থানীয় চাঁদ আলীর নামে ছিল। সেই বরাদ্ধ পিওন সামসুল বাতিল করে স্থানীয় ফখরুলের নামে বরাদ্ধ দেয়। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় হৈ চৈ পড়ে যায়। জানা গেছে অফিসের পিওন সামছুলের সাথে কেয়ারটেকার ইব্রাহীমের গভির সখ্যতা রয়েছে।
আরো জানা যায়, নিরাপদ পানির জন্য, চাঁদ আলী ৭ হাজর ৫শত টাকা জমা দেন। পরে কেয়ারটেকার ইব্রাহিম চাঁদ আলীর কাছে থেকে আরো টাকা দাবি করে। টাকা দিতে অস্বীকৃত জানালে চাঁদ আলীর স্ত্রীর সাথে কেয়ারটেকার ইব্রাহীমের স্ত্রীর ঝগড়া হয়। এরপরেই উক্ত প্রজেক্টের মালামাল গোপনে অন্যের বাড়িতে চলে যায় । আজ বুধবার (৪জুন)সাব মারসেবল পাম্পটি স্থাপনের জন্য মিস্ত্রি এসে কাজ শুরু করলে বিষয়টি জানা জানি হয়ে যায় । পরে স্থাণীয়রা এর জোর প্রতিবাদ জানায় এবং চাঁদ আলীর স্ত্রী উপজেলা অফিসে গিয়ে অভিযোগ দেয়। এরপর তড়িঘরি করে উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ মনজেল হোসেন ঘটনাস্থলে তার সহকারীকে পাঠিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন।
এদিকে একাধিক ঠিকাদার মৌখিক ভাবে অভিযোগ করেন, পাবনা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর যে কোন কাজ কমপক্ষে ১৫% অফিসকে উৎকোচ দিতে হয়। এর কম হলে প্রধান প্রকৌশলীর মাধ্যমে কাজ বাতিল করে রি-টেন্ডার করা হয়। আর এ সকল কাজের মুল হোতা পাবনা অফিসের ইষ্টেমেটর হেদায়েত করিম ও পাবনা জেলা জনস্বাস্থ্য বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মেহেরাজ হোসেন। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় গত বছরের একটি টেন্ডার বাতিলকে কেন্দ্র করে ঠিকাদারদের সাথে অফিস স্টাফদের বাকবিতন্ডায়।
আরো জানা যায়, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে একটি টেন্ডার ওপেন করা হয়। যার অনলাইন টেন্ডার আইডি নং-৫২৪০৮৯। টেন্ডার দাখিলের শেষ দিন ছিল ২৮-১২-২০২০ইং। টেন্ডার ওপের করার পর নির্বাহী প্রকৌশলীর মনোনীত ঠিকাদার জনৈক শিমুল কাজ না পাওয়ায়, কাজটি রি-টেন্ডার করা হয়। এ বিষয়ে সাংবাদিক মোবারক বিশ্বাস নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মেহেরাজ হোসেন এর কাছে রি-টেন্ডারের কারন মোবাইলে জানতে চাইলে তিনি ফোন কেটে দেন। পরবর্তিতে আরেকটি নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে পরিচয় দিলে তিনি আবারও ফোন কেটে দেন। বার বার তাকে ফোন দেওয়ার কারনে, ওইদিন (২২জুন ২০২১) রিটেন্ডার হওয়া ও সুজানগরের একটি প্রকল্পের খোঁজ খবর নিতে তার অফিসে গেলে তিনি প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে সাংবাদিকের সাথে অসৌজন্যমুলক আচরন করেন।
রি-টেন্ডার হওয়া সেই কাজ এর বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারী সকল নিয়ম মেনে খান কর্পোরেশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ১০% পার্সেন্ট লেসে কাজ পায়। নির্বাহী প্রকৌশলীর মনোনীত ঠিকাদার শিমুল কাজ না পাওয়ায়, খান কর্পোরেশন এর প্রতিনিধিকে ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে কাজটি বিক্রি করে দিতে বলেন অফিসের এস্টিমেটর হেদায়েত করিম। যা কোন ভাবেই নিয়মনীতির মধ্যে পড়ে না এবং অনিয়মের শামিল। কাজ বিক্রি করা না হলে রি-টেন্ডারের হুমকি দেন। খান কর্পোরেশন এর প্রতিনিধি বিষয়টি নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মেহেরাজ হোসেন কে অবগত করলে, তিনি এস্টিমেটর হেদায়েত করিম যা বলবে সেই মোতাবেক কাজ করতে হবে বলে ওই প্রতিনিধিকে জানান। পরে খান কর্পোরেশন এর পাওয়া কাজ ইস্টেমেটর হেদায়েত করিমের সহায়তায় প্রধান প্রকৌশলী সাইফুর রহমানকে দিয়ে রি-টেন্ডার করেন নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মেহেরাজ হোসেন। আরো জানা যায়, টেন্ডারের আগেই নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মেহেরাজ হোসেনের সাথে বিশেষ যোগাযোগের মাধ্যমে ৩টি কাজের মধ্যে দুটি নির্মান কাজ শেষ করেন জনৈক ঠিকাদার শিমুল। এ কারনে কাজ পাওয়া খান কর্পোরেশনকে কাজটি বিক্রি করে দিতে এস্টিমেটর হেদায়েত করিম মিডিয়া হিসাবে কাজ করেন। খান কর্পোরেশন কাজটি বিক্রি না করায় প্রধান প্রকৌশলী সাইফুর রহমানকে দিয়ে রি-টেন্ডার করেন, নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মেহেরাজ হোসেন। রি-টেন্ডারে ইতি কর্পোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান কাজ পেলেওে ইস্টেমেটর হেদায়েত করিমের মধ্যস্থতায় পরে তা শিমুল ঠিকাদার কিনে নেন। এই রি-টেন্ডার বিষয়ে তদন্ত করা হলে নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রধান প্রকৌশলী সাইফুর রহমান ও তার আত্মিয় পাবনা অফিসের ইস্টেমেটর হেদায়েত করিমের সকল অনিয়মের তথ্য বেরিয়ে আসবে। নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মেহেরাজ হোসেন এর অনিয়ম ও স্বৈরাচারী আচরনের কারনে ওই প্রতিষ্ঠানের সকল ঠিকাদারের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। সেই সময়ে ইস্টিমেটর হেদায়েত করিম কাজ বিক্রি করে দেওয়া এবং দর দাম ঠিক করার জন্য খান কর্পোরেশনের প্রতিনিধির সাথে মোবাইলে কথোপকথন প্রমান করে ইস্টেমেটর হেদায়েত করিম পাবনা-নাটোর-সিরাজগঞ্জের অঘোষিত নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করে থাকেন। একজন অফিসের এস্টিমেটর টেন্ডারে কাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠানকে কাজ বিক্রি করে দিতে বলেন কিভাবে, প্রশ্ন অন্যান্য ঠিকাদারদের। এবং রিটেন্ডারসহ তার স্বৈরাচারী শক্তি প্রর্দশনের কারনে মুল ঠিকাদাররা টেন্ডারে অংশগ্রহন থেকে বিরত থাকেন। আর এ সুযোগে নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেরাজ হোসেন ও ইস্টেমেটর হেদাযেত করিম তাদের পছন্দমত ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দিয়ে ১৫% কমিশন আদায় করে থাকেন।
উল্লেখ্য জনস্বাস্থ্য প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী সাইফুর রহমানের বাড়ি পাবনা ঈশ্বরদী উপজেলার রুপপুর গ্রামে। আর ইস্টেমেটর হেদায়েত করিমের বাড়ি ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নে। হেদায়েত করিম প্রধান প্রকৌশলীর নিকট আ্ত্মিয় বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেন।