বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:১০ অপরাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
নিজস্ব সংবাদদাতা, ঈশ্বরদী পাবনা:
সাত কোটি তিয়াত্তর লক্ষ বিয়াল্লিশ হাজার বায়াত্তর টাকা ব্যয়ে ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া জিসিএম হতে আটঘরিয়া উপজেলা হেডকোয়াটা পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ।
স্থানীয়রা প্রতিবাদ করেও সুফল পাচ্ছেন না । নিম্নমানের ইট, খোয়া, বালি দিয়ে ঠিকাদার কাজ করছেন অভিযোগ স্থানীয়দের। সরকারী প্রকল্পের আওতায় এলজিইডি ঈশ্বরদীর তত্ত্বাবধানে চলছে এই নির্মাণ কাজ ।
অভিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হলো পাবনার মেসার্স জিনাত আলী জিন্নাহ লিমিটেড কনস্ট্রাকশন ফার্ম। ঈশ্বরদী উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক দাশুড়িয়া জিসিএম হতে আটঘরিয়া উপজেলা হেডকোয়াটা পর্যন্ত । সড়কটি মেরামত ও সড়কের পার্শ্ব প্রসস্থতার জন্য সরকারী প্রকল্পের আওতায় ৭ কোটি ৭৩ লাখ ৪২ হাজার ৭২ টাকা বরাদ্ধ দেয়। এলজিইডি ঈশ্বরদীর তত্ত্বাবধানে শিডিউল অনুযায়ী সড়কটি ১৮ ফুট চওড়া ও ৬ ইঞ্চি খোয়া এবং ৪০ মিলি কার্পেটিং, ১৮ ইঞ্চি সাববেচ দিয়ে মেরামত করার কথা রয়েছে। প্রথম পর্যায়ে খোয়া ঢালাইয়ের সময় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ৩ ইঞ্চি রাবিশ খোয়া দিয়ে প্রায় ৩.০০ কিলোমিটার রাস্তার খোঁয়া ঢালার কাজ শেষ করেছে। রাস্তাটির কাজ পান পাবনার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিনাত আলী জিন্নাহ লিমিটেডের কনস্ট্রাকশন ফার্ম। কাজের শুরুতেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠিানটি ভালমতো রোলার না করেই তড়িঘড়ি করে নিম্নমানের খোয়া (পোড়া মাটি) ব্যবহার করেছেন। এতে এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে সড়কের কাজে বাঁধা দেন। রাস্তার দুর্নিতির খবর প্রকাশের পর ২-৩ মাস মাস কাজ বন্ধ থাকে এবং বর্তমানে পূনরায় অবশিষ্ট তিন কিলোমিটার রাস্তার কাজ শুরু হয়।
উপজেলার সুলতানপুর, বয়রা, বাড়াহুসিয়া, খালিশপুর ও পাড়াশিধাই গ্রামের অনেকেই অভিযোগ করে জানান, ঠিকাদার সরকারি ছুটির দিন শুক্র ও শনিবারে দিনের বেলায় ট্রাক ট্রাক রাবিশ খোয়া (পোড়ামাটি) এনে তড়িঘড়ি করে ভেঙে ছিটিয়ে দিচ্ছে রাস্তায়। নাম মাত্র রোলার করেই শেষ।
রবিবার (১৫ মে, সরকারি ছুটিরদিন) সকালে এলাকার লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে কাজে বাঁধা দিলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তার ০২ টি ট্রাক ভর্তি রাবিশ খোয়া নিয়ে পাবনাতে ফেরত যায় এবং গভীর রাতে আনা অন্য ৫ ট্রাক রাবিশ খোয়া রাস্তায় ছিটিয়ে রোলার করে।
পাড়াশিধাই গ্রামে লেবু নামের এক যুবক স্বাক্ষাতকারে বলেন, এই রাস্তা মানুষের চলাচলের অযোগ্য। তিন নাম্বার পঁচা ইটের আদলা এনে রাস্তায় দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন ইঞ্জিনিয়ার রাস্তায় এসে কন্টাকটারের ম্যানেজারের সাথে কানে কানে ফুসফাস করে চলে যায়। আমরা বলেলেও কোন পদক্ষেপ নেয় না।
সুলতানপুর এলাকার যুবলীগ নেতা জুয়েল মন্ডল বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেখানে উন্নয়ন কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সেখানে কতিপয় সরকারী কর্মকর্তা ও ঠিকাদারগণ প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের কাজে বাঁধা সৃষ্টি করছে। তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই সকল ঠিকাদারদের লাইসন্স বাতিল ও অসাধু কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবি জানান। ইব্রাহিম হোসেন নামের ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তি বলেন, রাস্তার কাজ ভালো হচ্ছে না। রাস্তার উপর ৬টি বৈত্যুতিক খুটি ও ১ টি অকেজো সেতু রেখেই কাজ চলছে। এই সকল কাজ সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে করালে ভালো হতো। তজিবর রহমান নামের এক কৃষক অভিযোগ করে বলেন, রাস্তার পার্শ্বে মাটি ভরাটের জন্য আমাদের ফসলী জমি কেটে নিয়েছে। আমরা বাধা দিলেও জোরপূর্বক এ কাজ তারা করেছে।
রবিবার (১৫মে) সকালে বিভিন্ন ইলেকটনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরা সরেজমিনে গিয়ে দেখতে পান এসও সরোয়ার হোসেনের উপস্থিতিতেই কন্ট্রাকটারের লোকজন নি¤œমানের রাবিশ খোয়া দিয়ে রাস্তার কাজ করছে । এসময় এসও সরোয়ার হোসেনকে সংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন রাস্তার কাজ আগের চেয়ে খারাপ হচ্ছে । আমি আর কিছু বলতে চাচ্ছিনা আমার সমস্যা হবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবের সদোত্তর দিতে পারেননি তিনি ।
এলজিইডির কর্মকর্তার উপস্থিতিতে নি¤œমানের ইট খোঁয়া দিয়ে কাজ করায় এলজিউডি কর্মকর্তাদের ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজস আছে বলেও অভিযোগ করেন এলাকাবাসী । তারা বলেন এ রাস্তা আমরা চাইনা।
উল্লেখ্য, গত ডিসেম্বর মাসে ৩ কি.মি রাস্তা মেরামতে ব্যাপক অনিয়ম আর দূনীতির খবর প্রকাশ হলে রাস্তার পিডিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ রাস্তা পরিদর্শন করে গেলেও তার সঠিক কোন সমাধান আসেনি। রাস্তার সেই রাবিশ খোয়াও সড়ানো হয়নি।
এ ব্যাপারে এলজিইডি ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী এনামুল কবির জানান, নিম্নমানের খোয়া দেওয়ার অভিযোগে আমি একশন নিয়েছি। পরবর্তীতে সঠিক মানের ইট খোয়া দিয়ে কাজের জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটিকে বলেছি । এরপরও যদি এমন কাজ হয় তার বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে ।