বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:২৪ পূর্বাহ্ন

News Headline :
ডিমের মূল্যের ঊর্দ্ধগতিতে মধ্যস্বত্ব ভোগীরা বড় সমস্যা- মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ উপদেষ্টা কুষ্টিয়ায় বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ এর ১৩৪তম তিরোধান দিবস ২০২৪ উদযাপনের আজদ্বিতীয় দিন ইবিতে পরীক্ষা দিতে এসে তোপের মুখে ছাত্রলীগ নেতা কুষ্টিয়ায় র‌্যাবের অভিযানে লালন মেলা হতে চুরি হওয়া ১৬টি মোবাইল ফোন উদ্ধার ন্যায় বিচার পেলে আওয়ামী লীগের জীবনের স্বাদ মিটে যাবে-নওগাঁ জামায়াত আমির রাবি’তে পরীক্ষা দিতে এসে ছাত্রলীগের ২ নেতা গ্রেফতার ফুলবাড়ীতে বিএনপি‘র দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ২ পাবনার ঈশ্বরদীতে সন্ত্রাসীদের গুলি ল্যাংড়া বিপু গুলিবিদ্ধ পাবনায় স্বপনের অফিস ভাংচুর করলেন শিমুল সমর্থক হামলা-পাল্টা হামলা পাবনা র‌্যাবের অভিযানে পর্নগ্রাফি মামলার পলাতক আসামী গ্রেফতার

প্রধানমন্ত্রীর বিভাগীয় জনসভা প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির হিসেব মেলাচ্ছেন রংপুরের মানুষ

Reading Time: 3 minutes

হারুন উর রশিদ সোহেল,রংপুর:
গত ২ আগস্ট রংপুর জিলা স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত হওয়া বিভাগীয় জনসভায় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিভাগীয় মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণ দিয়েছেন। দীর্ঘ সাড়ে চার বছরেরও বেশি সময় পর প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে দলীয় নেতা-কর্মীদের পাশপাশি স্থানীয় জনগণের প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি। উঠেছিল বিভিন্ন দাবি। প্রধানমন্ত্রী সফর শেষে রংপুরের মানুষজন প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তির হিসেব মিলাতে শুরু করেছেন।রংপুরের মানুষের অন্যতম দাবি ছিল তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন। জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটা বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা করব। প্রধানমন্ত্রী এমন ঘোষণায় তিস্তা পাড়ের মানুষ অনেকটা আশাষিত হয়ে উঠে। যারা তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে আন্দোলন করে আসছেন তারাও আশাবাদি প্রধানমন্ত্রী যেহেতু বলেছেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবাযন করবেন। বাস্তবায়নের ঘোষণা দেখায় প্রধানমন্ত্রী শে হাসিনাকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে তিস্তা বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ। একই সাথে ৭ দিন ব্যাপী আনন্দ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে পরিষদের পক্ষ থেকে। কর্মসূচির মধ্যে গত শুক্রবার বাদ জুম্মা তিস্তা নদীর দুই তীর এবং জনপদের প্রতিটি মসজিদে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তিস্তার দুই তীরের সব উপজেলার আনন্দ শোভাযাত্রা ও সর্বজনের আনন্দ সংহতি অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে সারাদেশের নারী ফুটবলারদের গ্রাম হিসাবে পরিচিত রংপুর সদরের পালিচড়ায় মেয়েদের ফুটবল খেলার জন্য স্টেডিয়াম উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর মুখে পালিচড়া নাম উচ্চারিত হওয়ায় সেখানে বইছে আনন্দের বন্যা। ওই এলাকার লোকজন প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।স্থানীয় কোচ মিসকিন খান বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে চির কৃতজ্ঞ। তিনি পালিচড়ার মত একটি গ্রামে নারীদের ফুটবল উন্নয়নে একটি স্টেডিয়াম দিয়েছেন। এতে খেলাধুলায় মান বাড়বে।
অপরদিকে প্রধানমন্ত্রী শ্যামপুর সুগার মিলস চালুর আশ্বাস দেয়া আনন্দ প্রকাশ করেছেন এলাকার মানুষ ও সুগারমিল সংশ্লিষ্টরা। শ্যামপুর সুগার মিলস এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সম্পাদক আবু সুফিয়ান বলেন, শ্যামপুর সুগার মিল পুনরায় চালু করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার আমাদেরকে আনন্দিত করেছে। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ এ হাসিনার নিকট ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। সেই সাথে দ্রæত সময়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়ন ও চালুর দাবি করছি।একই সাথে রংপুর জিলা স্কুল মাঠ থেকে প্রধানমন্ত্রী রংপুরে ২৭টি প্রকল্প উদ্বোধন ও ৫টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এসব প্রকল্প এলাকার মানুষের মাঝে আনন্দের বন্যা দেখে দিয়েছে। তারা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী সরকারের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
এই জনসভার আগে রংপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, রংপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন, রংপুরে আর্ন্তজাতিক মানের স্টেডিয়াম স্থাপন, শিক্ষাবোর্ড , রংপুর-লালমনিরহাট-পাটগ্রাম-বুড়িমারী মহাসড়ক চার লেনে রূপান্তর, হারাগাছ-লালমনিরহাট সেতু-সড়ক নির্মাণ, রংপুরে আধুনিক রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ ও ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠা, পীরগঞ্জ খালাশপীর কয়লা খনি থেকে কয়লা উত্তোলন, বিশেষ মেগা প্রকল্প, শিল্পকারখানা স্থাপনসহ অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠার দাবি ছিল।রংপুরবাসী মনে করছেন, এসব দাবি পূরণ হলে পুরো রংপুর বিভাগ বদলে যেত। নতুন নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হতো। এতে করে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী তথা আওয়ামী লীগের পক্ষে একটি বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব ফেলতো। একইসঙ্গে তরুণ প্রজন্মের কাছে রংপুরের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা হয়ে উঠবেন ঈর্ষণীয় উদাহরণ থাকতো।
রংপুর-লালমনিরহাটের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরোও উন্নত এবং সহজ করতে তিস্তা নদীর ওপর সড়ক-সেতু নির্মানের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে লালমনিরহাটের কয়েকটি ইউনিয়ন ও রংপুরের হারাগাছবাসী আন্দোলন করে আসছেন। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় ওই এলাকার কয়েকহাজার লোকজন যোগ দিয়েছিলেন। তাদের ধারণা ছিল প্রধানমন্ত্রী হয়তোবা হারাগাছে তিস্তা সেতু ও সড়ক বাস্তবায়নের ঘোষণা দিবেন। কিন্তু সেরকম কোন ঘোষণা না আসায় তারা কিছুটা হতাশ হয়েছে।এব্যাপারে হারাগাছ-লালমনিরহাট সড়ক সেতু বাস্তবায়ন আন্দোলন পরিষদের সভাপতি আতাউল করিম অতুল বলেছেন, বিভাগীয় শহর রংপুরের সাথে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষে তারা দীর্ঘদিন ধরে হারাগাছ-লালমনিরহাট তিস্তা সড়ক-সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আন্দোলন করছেন। এই দাবি আদায়ের লক্ষ্যে তারা প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় যোগ দিয়ে আশা করেছিলাম প্রধানমন্ত্রী হয়ত হারাগাছ-লালমনিরহাট সড়ক-সেতু বাস্তবায়নের ঘোষণা দিবেন। কিন্তুু সেই ঘোষণা আসেনি। এতে তারা হতাশ। তবে তাদের দাবি আদায়ে মাঠে কার্যক্রম অব্যাহত রাখবেন বলে জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর শশুরবাড়ি এলাকা হিসাবে পরিচিত পীরগঞ্জ উপজেলায় খালাশপীর কয়লা খনি থেকে কয়লা উত্তোলন ও ভেন্ডাবাড়িকে পৃথক উপজেলা গঠনের দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। এজন্য স্থানীয়রা বিভিন্ন সময় আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। সেই দাবি বাস্তবায়নের ঘোষণাও আসেনি। এজন্য তারাও হতাশ হয়েছেন।
রংপুরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষে অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠাসহ শিল্প কলকারখানা স্থাপনের কোন ঘোষণা না আসায় রংপুরের মানুষজন হতাশ হয়েছেন।উন্নয়ন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর জনসভা ঘিরে আশায় বুক বেঁধেছিল রংপুরবাসী। তারা বিভিন্ন দাবি বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখছিলো। কিন্তুু উল্লেখ্যযোগ তেমন ঘোষণা না আশায় সাধারণ জনগণের মতো তারাও হতাশায় ভুগছেন। তবে তারা আশাবাদি, যেহেতু প্রধানমন্ত্রী রংপুরের উন্নয়নের দায়িত্ব নিজেই নিয়েছেন, সে কারণে তিনি পর্যায়ক্রমে রংপুরবাসী চাওয়া-পাওয়া পূরণ করবেন।
এদিকে মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, রংপুরে প্রধানমন্ত্রীর বিভাগীয় জনসভা সফল হওয়াতে দারুণ উজ্জীবিত আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, স্বাধীনতার পর কোন জনসভায় এত মানুষের সমাগম ঘটাতে পারেনি কোন দল। রংপুরের ইতিহাসে এটাই সর্ববৃহৎ জনসভা। এতে বিভাগের ৮ জেলার নেতা- কর্মী ছাড়াও কয়েক লাখ মানুষের সমাগম হয়েছে।ক্ষমতাসীন দলটির নেতাকর্মীরা মনে করছেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই জনসভা খুব প্রয়োজন ছিল। কারণ রংপুরের অনেক নির্বাচনী আসনে আওয়ামী লীগের মাঝে বিভক্তি এবং দলীয় কোন্দল ছিল। নেতা-কর্মীদের আশা শেখ হাসিনার আগমনে দলীয় কোন্দল মিটে যাবে। যা আসন্ন সংসদ নির্বাচনে টনিক হিসেবে কাজ করবে এবং আগামী নির্বাচনে পুরো বিভাগের সব আসনে তারা জয়লাভ করবে।
তবে সাধারণ মানুষজন বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর জনসভা ঘিরে অনেক আশা ছিল। প্রত্যাশা ছিল। কিছু পূরণ হয়েছে। অনেকখানি অপুরনীয়ই থাকলো।
এব্যাপারে রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক আবুল কাশেম বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী আন্তরিকভাবে রংপুরের মানুষকে ভালোবাসেন। এজন্য তাঁর জনসভায় লাখ লাখ মানুষ উপস্থিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীকে সম্মানিত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী রংপুরের জন্য অনেক কিছু করেছেন। দিয়েছেন। ভবিষ্যতেও দিবেন। তাই আমরা এখন প্রাপ্তির আনন্দে রয়েছি।

Please Share This Post in Your Social Media

Design & Developed BY Hostitbd.Com