admin
- ১১ ডিসেম্বর, ২০২২ / ১১৬ Time View
Reading Time: 3 minutes
নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর বগুড়া:
বগুড়ার শেরপুরে রেজিস্ট্রি অফিস সংলগ্ন মসজিদকে কেন্দ্র করে ১৯৮৯ ইং সাল থেকে পৌরসভার রাস্তা ও রাস্তার জায়গা দখল করে নিয়মিত সপ্তাহে সাত দিনই বাজার বসে আসছে। শুরুতে রেজিস্ট্রি অফিস বউ বাজার নাম হলেও ১৯৯৮ ইং হতে এটি রেজিস্ট্রি অফিস সকাল বাজার নামেই পরিচিতি পায়। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় শেরপুর উপজেলার রেজিস্ট্রি অফিস বাজারটি মাছের বাজারের জন্য বিখ্যাত হলেও এখানে গরুর মাংস, খাসির মাংস, কাঁচাবাজার সকল কিছুই পাওয়া যায় । বর্তমানে বাজারটিতে নিয়মিত ১৫০টি মাছের দোকান যা কিনা শুক্রবার ও দুই হাটের দিনে দাঁড়ায় ২৩০ থেকে ২৫০ টি পর্যন্ত , ১৬ টি গরু ও ছাগলের মাংসের দোকান, ১০টি মুরগির দোকান , মসলার দোকান ৬ টি এবং কাঁচা শাক সবজির দোকান রয়েছে ১২০ টি । উক্ত বাজারটি পৌরসভার রাস্তার দুই পাশের ফুটপাত ও পৌর ড্রেন ভরাট করে গড়ে তুলেছে একটি সিন্ডকেট। গোপন সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রভাবশালী মহল নিয়ন্ত্রন করছে উক্ত সিন্ডিকেটটি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মৎস্য ব্যবসায়ী বলেন, আমার দোকানের জন্য ব্যবহৃত তিন হাত জায়গা যা রাস্তার মধ্যেই পরে তার জন্য আমাকে দৈনিক দুইশত টাকা করে দেওয়া লাগে। এমন অবস্থা প্রতিটি দোকানের জন্য কিনা তা জিজ্ঞেসা করলে তিনি জানান, যে দোকানগুলো পৌর রাস্তার উপর বসে সে গুলোকে দিতে হয় , তিনি আরও বলেন দৈনিক দুইশত টাকা করে তো দিতেই হয় যদি কোন দিন দোকান না বসাই সেই দিনের টাকা অগ্রিম যে টাকা দেয়া আছে তা থেকে কেটে নেয়া হয়। তিনি জানান, উক্ত সিন্ডিকেটের একজন সদস্যকে বিশ হাজার টাকা অগ্রিম দিয়েছেন এক বছরের জন্য। একজন কাঁচা সবজি বিক্রেতা বলেন , ভাই আমার দিতে হয়েছে ৩০,০০০/= ত্রিশ হাজার টাকা এবং দৈনিক দিতে হয় দুইশত টাকা করে। খাজনা দিতে হয় কিনা জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, খাজনা দিতে হয় না তবে মসজিদের জন্য দোকান প্রতি বিশ টাকা করে দেওয়া হয়। অনেকটা আক্ষেপ করেই তিনি বলেন পৌরসভা থেকে কিচেন মার্কেট অনেক আগেই নির্মাণ কাজ শেষ হলেও এখনও আমাদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়নি আবার কত বছরে যে বরাদ্দ পাব তা আল্লাহ পাকই ভালো জানেন। গরুর মাংস বিক্রেতা হাফিজুল ইসলাম বলেন আমার দোকানটি ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গায় অবস্থিত , কোন খাজনা দেওয়া না হলেও প্রতিদিন বিশ টাকা করে মসজিদের নামে নিয়ে যায় নয়ন নামের এক ব্যক্তি। কথা হয় মসজিদের দায়িত্ব প্রাপ্ত একজন ব্যক্তির সাথে নাম এবং পদবি গোপন রাখার শর্তে তিনি বলেন , মসজিদের নামে প্রতি দোকান থেকেই বিশ টাকা করে তোলা হয় । পূর্বে এই টাকা মসজিদের খাদেম সংগ্রহ করতেন এখন আর খাদেমগণ কেউ এই টাকা তোলেন না , স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি খন্দকার পাড়ার মনিরুলের ছেলে নয়নকে টাকা তোলার দায়িত্ব দিয়েছেন এবং তিনিই টাকাটা তোলেন। তথ্য সূত্রে জানা যায় ৩০১ (তিনশত এক) টি দোকান থেকে বিশ টাকা করে দৈনিক ৬০২০/= ( ছয় হাজার বিশ ) টাকা করে এক বছরে ২১,৯৭,৩০০/= ( একুশ লক্ষ সাতানব্বই হাজার তিনশত) টাকা এবং পৌর রাস্তা , ফুটপাত এবং ভরাটকৃত পৌর ড্রেনের উপর স্থাপিত অবৈধ ২২৩ (দুইশত তেইশ) টি দোকান হতে ২০০/= (দুইশত)টাকা করে প্রতিদিন ৪৪৬০০/= (চুয়াল্লিশ হাজার ছয়শত) টাকা করে এক বছরে উত্তোলন করে ১,৬২,৭৯,০০০ /= ( এক কোটি বাষট্টি লক্ষ ঊনআশি হাজার) টাকা। ২২৩টি অবৈধ দোকানের গড়ে অগ্রিম আদায় ২০,০০০/=(বিশ হাজার) প্রতিটি ৪৪,৬০,০০০/= (চুয়াল্লিশ লক্ষ ষাট হাজার) টাকা। মসজিদের নামে চাঁদা ও অবৈধ দোকান ভাড়া ও অগ্রীম বাবদ আদায়কৃত মোট অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ২,২৯,৩৬,৩০০/= (দুই কোটি উনত্রিশ লক্ষ ছত্রিশ হাজার তিনশত) টাকা। কথা হয় শেরপুর পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী ও তার অভিভাবকের সাথে তারা বলেন, আমার মেয়ে শেরপুর পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের একজন অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী ,এই বাজারটি প্রতিদিন সকাল থেকে শুরু করে দুপুর পর্যন্ত বসে, বিদ্যালয়ের যাওয়া আসার একমাত্র রাস্তা এটি , বাজারটি রাস্তা দখল গড়ে উঠার কারণে বিদ্যালয়ের যাওয়ার পথে বিভিন্ন ধরনের ভোগান্তিতে পরতে হয় , আবার ভয়েও থাকি একা পাঠাতে পারি না । এ বিষয়ে পৌর মেয়রকে বারবার অনুরোধ করার পরও কোন কাজ হয়নি। এ বিষয়ে রেজিস্ট্রি অফিস মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি মোঃ মতিউর রহমান (মতি) এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন , খাদেমদের বেতন ও মসজিদের উন্নয়নের জন্য প্রতি দোকান থেকে কিছু টাকা দান স্বরুপ তোলা হয়, তবে সেটা খুব বেশী নয়। আমাদের মসজিদের বছরে খরচ হয় ৩/৪ লক্ষ টাকা যা সকলে স্ব- প্রণদিত হয়েই দেয় কারো প্রতি কোন জোর জবরদস্তি করা হয় না। এই বাজারকে কেন্দ্র করে একটি সিন্ডকেট গড়ে উঠেছে বলে শুনেছি, তবে আমিও চাই অবৈধ দোকানপাট তুলে দেওয়া হোক।
এ বিষয়ে স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর ফিরোজ আহমেদ (জুয়েল) এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, প্রতি দোকান থেকে ১০/= টাকা করে তোলা হয় বলে জানি তবে আমি কখনো দেখিনি, একটি সরকার দলীয় কিছু ব্যক্তি দোকান প্রতি ২০০/= টাকা করে আদায় করে বলে শুনেছি , আমি অনেক চেষ্টা করেছি উক্ত রাস্তা থেকে দোকান তুলে দিতে কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি।
এ বিষয়ে শেরপুর পৌর প্যানেল মেয়র নাজমুল আলম খোকন বলেন , রেজিস্ট্রি অফিস সকাল বাজার থেকে পৌরসভা তথা সরকারি কোষাগারে কোন অর্থ জমা হয় না, আমরা পৌরসভা থেকে একাধিকবার চেষ্টা করেছি রাস্তার উপর থেকে বাজারটি অপসারণ করে বারোদুয়ারি গরুহাটিতে বাজারটা বসিয়ে পৌরসভার রাজস্ব আয় বাড়াতে। কিন্তূ যখনই অপসারণের জন্য যাওয়া হয় তখনই প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি স্থানীয় জনগনকে উত্তেজিত করে বাধার সম্মুখীন করে। পৌর কিচেন মার্কেট উদ্বোধনে বড় বাধা হয়ে আছে উক্ত মহলটি।
পৌর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অর্থাভাবে বেতন দিতে পারছিনা । তবে আমরা পৌর কর্তৃপক্ষ উক্ত বাজারটি রাস্তার উপর থেকে অপসারণ করতে বদ্ধপরিকর সেভাবেই কাজ করছি।
এ বিষয়ে শেরপুর উপজেলা নির্বাহি অফিসার সানজিদা সুলতানা এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়টি পৌরসভার এখতিয়ারভুক্ত, পৌর কর্তৃপক্ষ চাইলে আমাদের পক্ষ থেকে সব রকম সহায়তা পাবে।