শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৯ অপরাহ্ন

News Headline :
ইউপি চেয়ারম্যানের উপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন মারিশ্যা-দীঘিনালা সড়কের মাটি সরে গিয়ে দূর্ভোগে জনগণের সেবা দেওয়ার জন্যই সরকার আমাকে পাঠিয়েছেঃ-নওগাঁর নবাগত ডিসি রাজশাহীতে শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় ৫ দিনের রিমান্ডে শুটার রুবেল পাবনায় সাংবাদিকের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত ও মতবিনিময় করলেন নবাগত জেলা প্রশাসক মধুপুরে বৈষম্যবিরোধী ও কোটা আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে  বিএনপির দোয়া  মাহফিল অনুষ্ঠিত  পাবনার হেমায়েতপুরে কারামুক্ত বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংবর্ধনা ও আঞ্চলিক কার্যালয়ের উদ্বোধন বাঘাইছড়িতে বিএনপির দুই নেতা বহিষ্কার ডোমারে সীরাতুন্নবী (সাঃ) মাহফিল অনুষ্ঠিত পাবনার সুজানগরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পথসভা অনুষ্ঠিত

বন্যায় রংপুরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত আমন-সবজির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

Reading Time: 3 minutes

নিজস্ব সংবাদদাতা,রংপুর:
উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতে রংপুর অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি বৃষ্টি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুরে ৪০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ডুবে গেছে চরের আমন ও শাক-সবজির ক্ষেত। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে তিস্তাসহ অন্যান্য নদীর তীরবর্তী ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে প্রায় ২০ হাজার মানুষ। পানিবন্দি এসব মানুষ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন, কেউ অন্যত্র চলে গেছেন। বিপাকে পড়েছেন গবাদি পশু পালনকারিরা। এছাড়া ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমার নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে করে বন্যাতদের চরম খাদ্য সংকট ও বাড়িতে পানি উঠার কারণে বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে।রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানাগেছে, শনিবার সকাল ৯টায় ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার এবং কাউনিয়া পয়েন্টে ৪১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এছাড়া উজানের ঢলে ধরলা নদী কুড়িগ্রাম পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৭ সেন্টিমিটার, তালুক শিমুলবাড়ি পয়েন্টে ১ দশমিক ৪৮ সেন্টিমিটার, দুধকুমার নদী পাটেশ্বরী পয়েন্টে ৪২ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র নদী নুনখাওয়া পয়েন্টে ৫৪ সেন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে ৫৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, রংপুর জেলার গংগাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছাসহ নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার কয়েকটি উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে গঙ্গাচড়া উপজেলার নোহালী ইউনিয়নের চর বাগডোহরা, চর নোহালী, বৈরাতি, কোলকোন্দ ইউনিয়নের চিলাখাল, মটুকপুর, বিনবিনার চর, ল²ীটারী ইউনিয়নের চর ইচলী, জয়রাম ওঝা, শংকরদহ, বাগেরহাট, এসকেএসবাজার, চল্লিশাল, গজঘন্টা ইউনিয়নের ছালাপাক, জয়দেব, রাজবল্লভ, মর্ণেয়া ইউনিয়নের চর মর্ণেয়া, নীলারপার, কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের ঢুষমারার চর, পাঞ্জরভাঙ্গা, চরগদাই, গোপিডাঙ্গা, নিজপাড়া ও তালুক শাহবাজপুর, গাজীরহাট, কালীরহাট, টেপামধুপুর ইউনিয়নের চরগোনাই, হরিচরন শর্মা, বিশ্বনাথ চর, বুড়িরহাট চর, আজমখাঁ চর, টাপুর চর, হয়বৎ খা, পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের হাগুড়িয়া হাশিম, শিবদেব এলাকার কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অনেকেই বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। এসব এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। আমনসহ শাক-সবিজর খেত তলিয়ে গেছে। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন। তবে বিপাকে পড়েছে গবাদি পশু পালনকারিরা।
এছাড়াও লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, সিঙ্গিমারী, কালীগঞ্জের ভোটমারী, আমিনগঞ্জ, কাকিনা, পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুÐা, ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম, কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের গতিয়াসাম, চর খিতাবখা, বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চতুড়া, রামহরি ও কালিরহাট এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।গঙ্গাচড়া উপজেলার লহ্মীটারী ইউনিয়নের শংকর দহ এলাকার আবুল কাশেম (৫০) বলেন, প্রায় এক মাস ধরি তিস্তা নদীত ম্যালা পানি আছে। কাইল থ্যাকি পানি হামার গ্রামোত ঢুকছে। আইতোত (রাতে) পানি গ্রামোত ঢুকি পড়ছে। ঘরের ভেতরোত পানি ঢুকি গেইছে। চৌকিত আন্দাবাড়ি করা লাগতোছে। পানি উঠলে হামার ম্যালা কষ্ট হয়।জয়রাম ওঝার কৃষক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, নদীর পাড়ের মাইনষের ম্যালা কষ্ট। সরকার নদীত বান্ধ দেয় না। প্রতি বছর হামার আবাদী জমি নষ্ট হয়, ঘরবাড়ি ভাঙ্গি যায়। কতবার অফিসারের ঘরোক কইছি। কায়ো হামার কতা শোনে না।গঙ্গাচড়ার ল²ীটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, আমার ইউনিয়নে প্রায় দেড় হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। অনেকস্থানে ক্ষেতের ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।কাউনিয়ার টেপামধুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম বলেন, শনিবার ভোর থেকে তিস্তার নদীর পানি অস্বাভাবিক ভাবে বাড়তে শুরু করে। পানি বাড়া অব্যাহত থাকলে তার ইউনিয়নের চর গনাই, বিশ্বনাথ, হয়বৎখা, আজমখা গ্রাম পানি বন্দি হয়ে পড়বে। ইতিমধ্যে চরাঞ্চলের অনেক আমন খেত সহ ফসলি জমি তলিয়ে গেছে।লালমনিরহাটের চর গোবর্দ্ধন এলাকার আজিজুল ইসলাম জানান, রাত থেকে পানি বাড়ছে তিস্তায়। নদীপাড়ের নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে ফসলের ক্ষেত, রাস্তা-ঘাট ও পুকুর। এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি যেতে নৌকা ব্যবহার করতে হচ্ছে। নিম্নাঞ্চলের শত শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার গড়াই পিয়ার এলাকার বাসিন্দা আব্দুল খালেক বলেন, তিস্তা নদীর পানি গতকাল থেকে হুহু করে বারছে। আমরা এখানকার সবাই অনেক দুশ্চিন্তায় আছি। কেননা সবাই আমরা আমন আবাদ করেছি যদি সব নষ্ট হয়ে যায়। পানি বৃদ্ধির কারণে রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে আমাদের।এব্যাপারে রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানিয়েছেন, ভারি বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলের কারণে রংপুরসহ এ অঞ্চলের নদ-নদীর পানি বেড়েছে। তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া ও কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করছে। পানি বৃদ্ধির কারণে নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অনেকস্থানে মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

Design & Developed BY Hostitbd.Com