শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:০১ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 3 minutes
হারুন উর রশিদ সোহেল, রংপুর ব্যুরো :
@ দুই কিলোমিটার ঘুরে যাতায়াত, চরম দুর্ভোগ, @ দ্রুত বেইলি ব্রিজ নির্মাণের দাবি
রংপুরের পীরগাছায় আলাইকুমারী নদী খননের নামে অপরিকল্পিতভাবে ব্রিজের নিচের মাটি কাটার কারণে ভেঙে গেছে ঝুঁকিপূর্ণ একটি ব্রীজ। রোববার রাত ১০টার দিকে রংপুর-পাওটানা সড়কের দামুর চাকলা বাজার এলাকায় ২৭ মিটার দৈর্ঘ্যের ব্রিজটি ভেঙে যায়। এতে বন্ধ হয়ে গেছে যানচলাচল। গত দুই দিন ধরে চলে আসছে এমন পরিস্তিতি। স্থানীয়রা নতুন ব্রিজ নির্মাণসগ ওই স্থানে দ্রæত বেইলি ব্রিজ নির্মাণের দাবিতে জানিয়েছেন।
স্থানীয় লোকজন দাবি, নদী খননের নামে অপরিকল্পিতভাবে ব্রিজের নিচের মাটি কাটার কারণে এটি ভেঙে গেছে। ফলে প্রায় ২ কিলোমিটার ঘুরে সুন্দর বাজার থেকে চোত্তাপাড়া মধুরাম হয়ে দামুর চাকলা পর্যন্ত চলাচল করছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষজনসহ পথচারী ও যানবাহনের চালকরা। তারা এই পরিস্থিতির জন্য তদারকির অভাব ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দায়ি করেছেন। তবে পীরগাছা উপজেলা প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম বলছেন, বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আলাইকুমারি নদী খননে কোন ধরণের প্রটেকসন ছাড়া অপরিকল্পিতভাবে ব্রীজের নিচ থেকে মাটি কেটে নেয়। সেই সঙ্গে পানি ছেড়ে দেওয়ায় পিলার ধসে ব্রিজ ভেঙ্গে যায়। তিনি বলেন, ‘ওই স্থানে নতুন ব্রিজের জন্য টেন্ডার হয়েছে। তবে ঠিকাদার নির্ধারণ হয়নি। যত দ্রæত কাজ শুরু করা যায়, তার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’ বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে ‘ব্রিজের নিচ থেকে মাটি কাটা হয়নি। পানির ঢলের কারণে এমন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে।’ পীরগাছা উপজেলা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান এ তথ্য জানান। স্থানীয়রা বলছেন, রংপুর-পাওটানা সড়কটি একটি গুরুত্বপুর্ণ সড়ক।এই সড়কটি রংপুরের পীরগাছা, কাউনিয়া ও কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের লোকজন যাতায়াত করেন। দামুর চাকলা এলাকার আলাইকুমারি নদীর ব্রীজটি দীর্ঘদিন ঝূঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। তিস্তা পাওয়ার প্ল্যান্টের সরঞ্জামবাহী অসংখ্য ভারী ট্রাক ওই ব্রিজের ওপর দিয়ে চলাচলের কারণে ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে। এছাড়াও প্রতিনিয়তই ঢাকাগামী বাস ও পণ্যবাহি ট্রাক যাতায়াত করে। সম্প্রতি আলাইকুমারী নদী খননের সময় অপরিকল্পিতভাবে ব্রীজের নিচ থেকে মাটি কাটার কারণে ব্রীজটি আরোও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে। রোববার রাতে ব্রিজটি ভেঙে যায়। এতে স্থানীয়সহ পথচারি ও যানবাহন চালকরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। এদিকে গতকাল সোমবার সকালে প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও এখনো যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব হয়নি। এখন ওই স্থানে দ্রæত বেইলি ব্রিজ নির্মাণের দাবিতে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। পীরগাছা উপজেলা প্রকৌশল দপ্তর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুর-পাওটানা সড়কের দামুর চাকলা বাজারের পশ্চিম পাশে আলাইকুমারী নদীর ওপর ১৯৮২ সালে ২৭ মিটার দৈর্ঘ্যের ওই ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়। ২০২১ সালে তিস্তা পাওয়ার প্ল্যান্টের সরঞ্জামবাহী অসংখ্য ভারী ট্রাক ওই ব্রিজের ওপর দিয়ে চলাচলের কারণে ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। সম্প্রতি উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে ওই ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে একই স্থানে ৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩৬ মিটার একটি ব্রিজ নির্মাণের টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এদিকে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগেই গতকাল রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ব্রিজের ওপর দিকে একটি নৈশ কোচ ও একটি ভারী ট্রাক যাওয়ার পর ব্রিজে ফাটল দেখা দেয়। এর ৩০ মিনিট পর ব্রিজটি ভেঙে নদীতে পড়ে যায়। ফলে ওই সড়ক দিয়ে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। এদিকে সোমবার সকালে পীরগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ মাহবুবার রহমান, ইউএনও নাজমুল হক সুমন, ভাইস চেয়ারম্যান আরিফুল হক লিটন, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউর রহমান, উপজেলা প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম, ইউপি চেয়ারম্যান আবুল বাশার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
স্থানীয় দামুর চাকলা বাজারের ব্যবসায়ী বাদশা মিয়া, ফারুক মিয়া, কলেজছাত্র মেরাজ সরকার ও সাতদরগা বাজারের লুৎফর রহমান, ফুলবানুসহ কয়েকজন জানান, তিস্তা পাওয়ার প্ল্যান্টের ভারি যানবাহন ওই ব্রিজের ওপর পারাপারের কারণে এটি এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। আলাইকুমারি নদী খননের সময় অপরিকল্পিতভাবে ব্রিজটির নিচ থেকে মাটি কাটার কারণে পিলার ধসে ব্রিজ রোববার রাতে ভেঙ্গে যায়। তা না হলে আরও কয়েক বছর কিছুই হতো না। অতিদ্রæত একই স্থানে একটি বেইলি ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানান তাঁরা। এব্যাপারে পীরগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ মাহবুবার রহমান বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা বিষয়টি দেখছেন। এ ছাড়াও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সঙ্গে কথা বলে দ্রæত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নাজমুল হক সুমন বলেন, ‘বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হবে। আর বিষয়টি জেলা প্রশাসকসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। অভিদ্রæত যান চলাচল স্বাভাবিক করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’