শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:২৮ পূর্বাহ্ন

News Headline :
ইউপি চেয়ারম্যানের উপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন মারিশ্যা-দীঘিনালা সড়কের মাটি সরে গিয়ে দূর্ভোগে জনগণের সেবা দেওয়ার জন্যই সরকার আমাকে পাঠিয়েছেঃ-নওগাঁর নবাগত ডিসি রাজশাহীতে শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় ৫ দিনের রিমান্ডে শুটার রুবেল পাবনায় সাংবাদিকের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত ও মতবিনিময় করলেন নবাগত জেলা প্রশাসক মধুপুরে বৈষম্যবিরোধী ও কোটা আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে  বিএনপির দোয়া  মাহফিল অনুষ্ঠিত  পাবনার হেমায়েতপুরে কারামুক্ত বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংবর্ধনা ও আঞ্চলিক কার্যালয়ের উদ্বোধন বাঘাইছড়িতে বিএনপির দুই নেতা বহিষ্কার ডোমারে সীরাতুন্নবী (সাঃ) মাহফিল অনুষ্ঠিত পাবনার সুজানগরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পথসভা অনুষ্ঠিত

রংপুরে নোট ও গাইড বইয়ের ছড়াছড়ি

Reading Time: 3 minutes

হারুন উর রশিদ সোহেল, রংপুর ব্যুরো:

@ শিক্ষকদের সঙ্গে আঁতাত করে বই শিক্ষার্থীদের কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে
@ অনেক শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে
@বন্ধে জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে লিখিত আবেদন

রংপুর মহানগরীসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে নিষিদ্ধ নোট ও গাইড বই প্রকাশ্যেই চলছে বিক্রি। বিভিন্ন শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে বইয়ের দোকানগুলোতে খোলামেলাভাবে চলছে এসব বইয়ের জমজমাট ব্যবসা। এ যেন নোট ও গাইড বইয়ের ছড়াছড়ি। এনিয়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সচেতন মহলে চাপা ক্ষোভ রয়েছে। সম্প্রতি রংপুরের কয়েকজন অভিভাবক এসব নিষিদ্ধ নোট ও গাইড বই বিক্রি বন্ধের পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে আবেদন করেছেন।
এদিকে নিষিদ্ধ গাইড ও নোটবই ছাপানো প্রতিষ্ঠানগুলো এলাকার স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে আঁতাত করে এসব বই শিক্ষার্থীদের কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব গাইড ও নোটবই না কিনে দিয়ে রেহাই পাচ্ছেন না কোনো অভিভাবকও। এমনকি ধারদেনা করেও বই কিনে দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। অনেক শিক্ষার্থীর পরিবার এসব নোট ও গাইড বই টাকার অভাবে কিনতে পারছেন না। এতে ওই পরিবারের শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
সচেতন অভিভাবকদের পক্ষে নগরীর শালবন এলাকার আফতাবুজ্জামান ও ফারুকের দেওয়া লিখিত আবেদন সূত্রে জানা গেছে, রংপুর পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি কর্তৃক নগরীর মনি লাইব্রেরি, মাহফুজা পুস্তকালয়, ফারুক লাইব্রেরি, বুকস ফেয়ার, হাবীব বই ঘর, জ্ঞানবিকাশ বই ঘর, আইডিয়াল লাইব্রেরি, ফ্রেডন্স লাইব্রেরিসহ রংপুর নগরী ও জেলার বিভিন্ন বইয়ের দোকান ও লাইব্রেরিতে নিষিদ্ধ নোট ও গাইড বই অবাধে বিক্রি করা হচ্ছে। নোট ও গাইড বই বিক্রির ফলে কোমলমতি সাধারণ শিক্ষার্থীরা মূল বই পড়া বাদ দিয়ে নোট ও গাইড বইয়ের দিয়ে ঝুঁকে পড়ছে। রংপুর নগরীর বিভিন্ন বইয়ের দোকান, লাইব্রেরিসহ বিভিন্ন উপজেলার বইয়ের দোকানে দেখা যায়, প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির বিভিন্ন প্রকাশনীর গাইড ও নোটবই প্রকাশ্যে বিক্রি করা হচ্ছে। এর মধ্যে পাঞ্জারী, জুপিটার, গ্যালাক্সী, লেকচার, অনুপম প্রকাশনীর গাইড বই উল্লেখযোগ্য। অভিভাবকদের অভিযোগ, নোট ও গাইড বইয়ের প্রবণতা বাড়তে থাকায় দেশে শিক্ষার মান দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মূল বইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে এসব নিষিদ্ধ বইয়ের কারবার বন্ধে অভিযান পরিচালনা জরুরি বলে মনে করছেন তারা। একইসঙ্গে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে বাজার থেকে সকল নোট ও গাইড বই তুলে নেওয়ার জন্য সরকারের দায়িত্বশীলদের প্রতি আহ্বান তাদের। নগরীর তামপাট এলাকার আশরাফুল আলম ও সাতমাথার আফজাল পাটোয়ারী নামের দুইজন অভিভাবক বলেন, গাইড বই প্রকাশনীর লোকজনের মুনাফা পেয়ে স্কুলের শিক্ষকরা সিলেবাসে নিষিদ্ধ গাইড বই তালিকাভুক্ত করেন। আর অভিভাবকরা চড়া দামে সেসব বই কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্ডার গার্ডেন স্কুলগুলোতে এর প্রবনতা বেশি। কেরানীরহাট এলাকার সাইফুল ইসলাম বলেন, গাইড বই নিষিদ্ধ হলেও তা বিক্রয় বন্ধে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এটা খুবই দুঃখজনক।
এদিকে সচেতন মহলসহ অভিভাবকরা বলছেন, সরকার ১৯৮০ সালে সকল নোটবই নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এরপর ২০০৮ সালে সরকারের নির্বাহী আদেশে নোট ও গাইড বই নিষিদ্ধ করে আইন প্রকাশ করা হয়। ২০০৯ সালে দেশের সর্বোচ্চ আদালত এক রায়ের মাধ্যমে সকল নোট ও গাইড বই নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।এত কিছুর পরও এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা আদালতের রায়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি অনুশীলনীমূলক বই নাম দিয়ে নোট ও গাইড বই অবাধে বিক্রি করে আসছে। কিন্তু ২০০৯ সালের রায়ে উল্লেখ করা হয়, যে কোনো বোর্ড বইয়ের রেফারেন্সে কোনো বই বের করলেই তা নোট ও গাইড বই বলে বিবেচিত হবে।
রংপুর নগরীর একটি প্রথম সারির স্কুলের প্রধান শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নতুন সিলেবাস ও শিক্ষা ব্যবস্থাতেও পরিবর্তন এসেছে। সৃজনশীল চিন্তাভাবনা এবং সৃজনশীল পড়ালেখার পদ্ধতির কারণে শিক্ষার্থীরা মূল বইয়ের দিকে ঝুঁকতে বাধ্য হবে। তবে এখন অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকই এই নতুন ধারার শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারছেন না। এ কারণে কিছু কিছু স্কুলের শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রকাশনী গাইড ও নোটবইয়ের বিক্রির সহযোগিতার অভিযোগ আছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে শিক্ষকরা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গাইড বইকে নিরুৎসাহিত করে আসছেন তারা। এদিকে রংপুর নগরী ও বিভিন্ন উপজেলার কয়েকজন বই বিক্রেতা বলেন, গাইড ও নোটবই শিক্ষার্থীদের উপকারে আসছে। গাইড ও নোট পড়ে না এমন শিক্ষার্থী খুঁজে পাওয়া যাবে না। সকল শিক্ষার্থী গাইড ও নোটবই চায়। আর দোষ হয় শুধু বিক্রেতাদের। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, এনসিটিবি প্রতিটি শ্রেণির জন্য কিছু সহায়ক বই নির্ধারণ করে দিয়েছে। ওই বইগুলো পড়লে গাইড ও নোটবইয়ের দরকার হয় না। তা ছাড়া সরকারিভাবে গাইড বই নিষিদ্ধ। সরকার নির্ধারিত বই ছাড়া কোনো বই পাঠ্য না করতে তারা প্রতিটি শিক্ষককে সতর্ক করেছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Design & Developed BY Hostitbd.Com