সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৯ অপরাহ্ন
Reading Time: 3 minutes
হারুন উর রশিদ সোহেল, রংপুর ব্যুরো:
আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গত সোমবার প্রতীক বরাদ্দ হয়েছে । এর পরেই সারাদেশের মতো রংপুরেও প্রচারণা জমে উঠেছে।
রংপুরের ৬টি সংসদীয় আসনে প্রচারণায় মুখরিত পাড়া-মহল্লা হলেও প্রচারণায় পিছিয়ে রংপুর-৩ সদর আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। নির্বাচনী প্রচারণায় নীরব রয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের ও জাতীয় পার্টি নেতাকর্মীরা। অপরদিকে প্রচারণায় অনেকটাই সরব স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ারা ইসলাম রানী (ঈগল) মার্কা।
এদিকে জাতীয় পার্টির দূর্গখ্যাত রংপুর সদরে দলের এমন পরিস্থিতিতে হতাশ নেতাকর্মীরা। সাধারণ মানুষজন ও ভোটারও চরম ক্ষুদ্ধ।
দলটির নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রংপুর হচ্ছে জাতীয় পার্টির দূর্গ। এই আসনে প্রয়াত রাস্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ একাধিকবার এই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমানে তাঁর ছেলে রাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদ সংসদ সদস্য। এবার এরশাদের ছোট ভাই ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের নির্বাচন করছেন। অথচ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ, জমা ও প্রতীক বরাদ্দ সব কিছুতেই তিনি অনুপস্থিত। গত ৩দিন হলো প্রতীক বরাদ্দের। এর মধ্যে কোন নেতাকর্মী কিংবা সমর্থক কেউই প্রচারণায় মাঠে নামেনি। শুধু মাইকিংয়ে প্রচারণা সীমাবদ্ধ। এখনো পোস্টারও লাগানো কিংবা বিতরণ শুরু করা হয়নি। নেতাকর্মীদের নির্বাচন বিষয়ে কোন দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়নি। যা প্রার্থী ও দলের জন্য ক্ষতির কারণও হতে পারে বলে তারা মনে করছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, গত সোমবার প্রতীক বরাদ্দের পরপরই শুরু হয়েছে নির্বাচনী প্রচারণা। রংপুরের ৬টি আসনের ৫টি সংসদীয় আসনে প্রচারণা শুরু হলেও রংপুর-৩ আসনে দৃশ্যমান প্রচারণা চোখে পড়েনি এখনও। শুধুমাত্র জাতীয় পার্টি, জাসদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী রানীর মাইকিং করতে দেখা গেছে রংপুর নগরীতে। কোথাও এখন পর্যন্ত কারো পোস্টার দেখা যায়নি। দৃশ্যমান প্রচারণায় লিফলেট বিতরণ কিংবা আনুষ্ঠানিক প্রচারণায় শুধু দেখা গেছে তৃতীয় লিঙ্গের ঈগল প্রতীকের প্রার্থী আনোয়ারা ইসলাম রানীকে। তবে এখনো রংপুর সদর উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশনের বর্ধিত এলাকাগুলোতে প্রচারণা দেখা যায়নি বলে সাধারণ মানুষজন জানিয়েছে।
অন্যদিকে এই আসনের হেভিওয়েট প্রার্থী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা প্রয়াত রাস্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের আপন ছোট ভাই জিএম কাদের। তিনি নির্বাচনে অংশ নিলেও মনোনয়ন সংগ্রহ, জমা, প্রতীক বরাদ্দ পর্যন্ত রংপুরে আসেননি। এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে নেতাকর্মী ও ভোটারদের। এর আগে গত ১৭ ডিসেম্বর জোটগত আসন ভাগাভাগির কারণে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী তুষার কান্তি মন্ডল।
এদিকে প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত চলছে গণসংযোগ করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীক নিয়ে লড়ছেন তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি আনোয়ারা ইসলাম রানী। তার পক্ষে লিফলেট বিতরণ আর মাইকিংয়ের পাশাপাশি জোরেসরে চলছে গণসংযোগ। পাড়া মহল্লার প্রতিটি বাসা ও দোকানে গণসংযোগে চাওয়া হচ্ছে ভোট। স্থানীয় প্রার্থী দাবি করে দোয়ার পাশাপাশি ঈগল মার্কায় ভোট চাচ্ছেন এই প্রার্থী। চষে বেড়াচ্ছেন রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ড ও পাড়া মহল্লসহ সদর উপজেলা। তার প্রার্থী হওয়া নিয়ে সর্বত্র চলছে আলোচনা।
নগরীর বাহার কাছনা এলাকার মাহমুদুল হাসান মানিক বলেন, রংপুর বাসী বরাবরই অবহেলিত। ‘দীর্ঘদিন এই আসনে জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত হয়ে আসছে। যেই নির্বাচিত হয়, সেই ঢাকা চলে যায়। এবার নতুন মুখ তৃতীয় লিঙ্গের রাণী আপা দাঁড়িয়েছে, সঠিক ভোট হলে আমরা তাকেই সমর্থন করব।’ কারণ তিনি স্থানীয়। তাকে সব সময় পাওয়া যাবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রংপুর মহানগরী ও সদর উপজেলার কয়েকজন বলেন, ‘কবে আমরা ভোট দিতে পেরেছি, তা ভুলে গেছি। একজন দাঁড়ান, তিনিই জিতে যান। ভোট দেওয়ার দরকার হয় না।’ এবারের নির্বাচনে কী হবে তা তিনি জানেন না।
নগরীর মর্ডাণ মোড় এলাকার আনিছুল ইসলাম ও রবি মিয়া বলেন, রংপুর হচ্ছে জাতীয় পার্টির দূর্গ। এখানে এরশাদ আর লাঙল ছাড়া মানুষ কিছুই বুঝে না। ‘দলের (জাতীয় পার্টি) পক্ষে যাকে দাঁড় করানো হয়েছে তাকেই আমরা নির্বাচিত করব। আমরা বাকি প্রার্থীদের চিনি না। এখানে দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় পার্টির পক্ষে প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়ে আসছে, এবারও তা হবে।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ারা ইসলাম রানী বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে মানুষ নির্বাচন বিমুখ। নির্বাচনে ভোট দিতে আসতে চায় না। কিন্তু আমি যেখানেই যাচ্ছি, ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। ভোটারদের একটাই কথা, এবার ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার কোনো ইচ্ছে ছিল না। কেবল রানী আপাকে ভোট দিতেই কেন্দ্রে যাব। ভোটারদের আক্ষেপ, এখন পর্যন্ত কোনো প্রার্থীকে তারা দেখেননি। তাই মানুষের মাঝে একঘেয়েমি এসেছে। মানুষ এখন পরিবর্তন চাচ্ছে। এমপি নির্বাচিত হলে কৃষিভিত্তিক শিল্প কলকারখানা স্থাপন ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাসহ রংপুরের উন্নয়নে ২১টি প্রস্তাব বাস্তবায়নে জোর দেওয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, মনোনয়ন জমা দেয়া থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত এই আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী জিএম কাদের রংপুরে না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করে রানী বলেন, ওনারা এখনই আসার সময় পান না, তাহলে নির্বাচনের পর কখন আসবেন? আর কি সেবা করবেন, কি উন্নয়ন করবেন, তা বোঝা যায়।
এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের নির্বাচনে সমন্বয়কারী সদস্য ও কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির সাংস্কৃতিক সম্পাদক আজমল হোসেন লেবু সাংবাদিকদের জানান, ২১ ডিসেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু হবে। আজকে নির্বাচনী এলাকায় পোস্টার সাটানোর জন্য বিতরণ করা হবে। তবে কবে নাগাদ প্রার্থী জিএম কাদের প্রচারণায় যুক্ত হবেন সে বিষয়ে তিনি জানাননি। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির সর্বস্থরের নেতাকর্মী ও মানুষজন জিএম কাদেরকে জেতাতে প্রস্তুত। শুধু ভোটের অপেক্ষা।