রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২৪ অপরাহ্ন
Reading Time: 3 minutes
নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর:
রংপুর নগরীতে আইআরডিপি (ইন্টিগ্রেটেড রুরাল ডেফলভমেন্ট প্রোগ্রাম) নামে একটি প্রতিষ্ঠান প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার বাজেট নিয়ে ১৭টি খাতে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মসূচি শুরু করেছে। সরকারের সাথে এ নিয়ে কোন অংশিদারিত্ব না থাকলেও সরকারী লোগো ব্যবহার করে প্রকল্প পরিচিতি পত্র প্রস্তুত করে বিতরণ করা হচ্ছে। সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নাকের ডগায় কি করে এমনি একটি রহস্যঘেরা ফাঁদ পেতে সংস্থাটি কাজ করছে এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রংপুর নগরীর গোমস্তপাড়ায় গোপন অফিস কার্যক্রম চালিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে স্বাস্থ্য খাতে এনজিওটি রংপুর বিভাগের ৫শ’ ৩৫টি ইউনিয়ন পরিষদের কমিউনিট ক্লিনিক (হেল্থ সেন্টার) নির্মাণ কাজ শুরু করা জন্য দরপত্র আহŸান করেছে। এ পদ্ধতিতে সংস্থাটি সাড়ে ৫শ’ কোটি টাকা মূলধন সংগ্রহ করার উদ্যোগ নিয়েছে। দরপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে রংপুর বিভাগের উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে দ্বিতল বিশিষ্ট হেল্থ কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি দরপত্র সংগ্রহের জন্য দরপত্র মূল্য ৪হাজার টাকা ও জামানত হিসেবে ৫লাখ টাকা জমা দিতে হবে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের জামানতের টাকা থেকে ওই মূলধন সংগ্রহ করা হবে। দরপত্র কোন পত্রিকায় ছাপা হয়েছে তা এই প্রতিবেদকের কাছে তা জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী মোস্তফা কামাল রাসেল। তিনি একাধারে প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী আবার রংপুর বিভাগের উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে দ্বিতল বিশিষ্ট হেল্থ কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক। তবে সংস্থাটি সম্পর্কে রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডাঃ এ,বি,এম আবু হানিফ জানিয়েছেন এ বিষয়ে তার দপ্তরে কোন তথ্য নেই। তিনি জানিয়েছেন বিধি অনুযায়ী স্বাস্থ্য-চিকিৎসা সেবা বা হেল্থ কমপ্লেক্স নির্মাণ ও কার্যক্রম পরিচালনা করতে হলে অবশ্যই স্বাস্থ্যমন্ত্রনালয়ের অনুমতি ও চুক্তি থাকতে হবে। তা না করে সংস্থাটি কি করে রংপুর বিভাগের মধ্যে এই বিপুল সংখ্যক উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে দ্বিতল বিশিষ্ট হেল্থ কমপ্লেক্স নির্মাণ ও চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম শুরু করেছে তা বোধগম্য নয়। তিনি জানিয়েছেন এটি বেঅইানি কার্যক্রম। এ ছাড়া একটি ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের নথিপত্রে বাংলাদেশ সরকারের লোগো ব্যবহার করা হচ্ছে তা নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে রংপুর পুলিশ রেঞ্জের একজন অতিরিক্ত ডিআইজির কাছে জানতে চাইলে তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, যেহেতু প্রতিষ্ঠানটি মেট্রোপলিটন এলাকায় অফিস স্থাপন করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে তাই তাদের দপ্তর থেকে এ নিয়ে কাজ করার সুযোগ নেই।
প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী মোস্তফা কামাল রাসেল আরও জানিয়েছেন তাদের ১৭টি প্রকল্প আছে এর ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। এ সব প্রকল্পের মধ্যে তারা প্রাথমিক পর্যায়ে স্বাস্থ্যখাতে কাজ শুরু করেছেন। এর পর ভুমিহীন প্রান্তিক ক্ষুদ্র কৃষকের জীবিকা ও আর্থসামাজিক উন্নয়ন, তাদের শস্য বহুমুখি করণ, পুষ্টির উন্নয়ন, হাঁস, মুরগি, পশু পালন, মাছ চাষ, কৃষকের কাছে সহজ শর্তে যন্ত্রপাতি সরবরাহ, জলবায়ু পরিবেশ, কৃষকের নায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি, নারী উন্নয়ন জেন্ডার বৈষম্য দূরিকরণ, বিধাব, স্বামী পরিত্যাক্তা, তালাকপ্রাপ্তা নারীদেও প্রশিক্ষণ কর্মসংস্থান, শিশুশ্রম বন্ধ, মাদক ব্যবহার বন্ধ, সহ ১৭ খাতে তাদের প্রকল্প আছে। এ জন্য তারা ১০হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করবেন। কি ভাবে এই বিপুল টাকা সংগ্রহ করবেন তার কোন উত্তর তিনি সরাসরি দিতে পারেননি। তবে তিনি জানিয়েছেন তাদের ১০ লাখ টাকা মূলধন নিয়ে তারা কাজ শুরু করেছেন। এ জন্য সহযোগী সংগঠন হিসেবে তাদের সাথে যুক্ত আছেন, তাদেও প্রচার পত্রে সে সব সংস্থার লোগো ব্যাহার করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে, বাংলাভিশন ট্যুর এÐ ট্রাভেল, পাওয়ার ফোর্স সিকিউরিটি সার্ভিস প্রাঃ লিঃ ও রামফা( রাসেল মিডিয়া এÐ ফার্ম) এবং সৌহার্দ নেটওয়ার্ক এর। কিন্তু কোন সংস্থার ঠিকানা ব্যবহার করা হয়নি। এমন কি রংপুর অফিসের কোন সাইনবোর্ড নেই, গোমস্তাপাড়ায় একটি গলির ভেতর প্রতিষ্ঠানটি অফিস কার্যক্রম চলছে। যে সব প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে তাদের মধ্যে গার্ড সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, ট্রাভেল এজেন্সি, বিজ্ঞাপনি সংস্থা অপরটির কোন ব্যাখ্যা সংস্থার প্রধান নির্বাহী জানাতে পারেননি। তার কাছে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, তারা দরপত্রের মাধ্যমে রংপুর বিভাগের বিভিন্ন উপজেলায় হেল্থ কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন, এ জন্য প্রতিটি হেল্থ কমপ্লেক্স এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৪ লাখ টাকা। এই টাকার উৎস কোথায় সে সম্পর্কে তিনি জানিয়েছেন, সহযোগি সংগঠগুলো টাকা সরবরাহ করবে। ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম সেচ্ছাসেবী ও অলাভজনক কি করে রংপুর বিভাগের ৫৩৫টি উপজেলা ও ই্উনিয়ন হেল্থ কমল্পেক্স এর জনবলের ও প্রতিষ্ঠানের খরচ চালানো হবে এ প্রসঙ্গে সংস্থার প্রধান নির্বাহী মোস্তফা কামাল রাসেল জানিয়েছেন আমরা বাণিজ্যমন্ত্রনালয়ের নিবন্ধন নিয়েছি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের জন্য।
সংস্থাটি সম্পর্কে অনুসন্ধানে আরও উদ্বেগজনক তথ্য পাওয়া গেছে, নথিপত্রে দেখা যায় এই প্রতিষ্ঠানটি প্রাথমিক পর্যায়ে গাইবান্ধা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে ঢাকা সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধনকৃত। সেখানে প্রতিষ্ঠানের নাম লেখা রয়েছে ‘আদর্শ যুব কর্মসংস্থা’(এ, জে, কে, এস), ঠিকানা লেখা রয়েছে গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার, কালিবাড়ী বাজার। তাদের শুধু গাইবান্ধা জেলায় কর্মক্রম পরিচালনার কথা ওই নিবন্ধনে লেখা রয়েছে। এরপর সংস্থাটি নাম পরিবর্তন করে ‘আদর্শ যুব কর্মসংস্থা ফাইন্ডেশন’ জয়েন্ট স্টক কম্পানি এÐ ফার্ম কর্তৃক নিবন্ধন করে। সমাজসেবা আইন ১৯৬১ সালের সেচ্ছাসেবী সমাজক্যল্যাণ সংস্থা সমূহ(নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রন) অনুযাীয় ৪৬ নম্বর অধ্যাদেশের আওয়তায় সমাজসেবা অধিদপ্তর নিবন্ধন দিয়ে থাকে। সেখানে স্পষ্ট করে উল্লেখ রয়েছে নিবন্ধকৃত নামের কোন পরিবর্তন ও এলাকার বাইরে কার্যক্রম পরিচালনা করা হলে সে নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে। এর পরও কি করে সংস্থাটি তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং রহস্যঘেরা প্রতারনা ফাঁদ পেতেছে তা নিয়ে কোন সরকারী সংস্থার নজরদারী নেই। এ নিয়ে জেলা প্রশাসনের দপ্তরের কোন তথ্য নেই বলে জানা গেছে। ( চলবে)
হারুন উর রশিদ সোহেল