শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৩৬ অপরাহ্ন

News Headline :
পাবনা র‌্যাবের অভিযানে পর্নগ্রাফি মামলার পলাতক আসামী গ্রেফতার পিলখানা হত্যাকান্ড দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ধ্বংস করে দিয়েছে-রাকিন আহমেদ পাঁচবিবিতে বিএনপির দুই গ্রুপের প্রতিবাদ সমাবেশ ঘিরে প্রশাসনের ১৪৪ ধারা জারি শেরপুর জেলা আ’ লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি চন্দন কুমার পাল আটক পাবনায় মানবকল্যাণ ট্রাস্টের ৪ শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ রাজশাহী মহানগরীতে বিপুল পরিমান গাঁজা-সহ মাদক কারবারী গ্রেফতার পুনাক ও রাজশাহীর ক্ষদ্র উদ্যোক্তাদের পণ্য বিক্রয় কেন্দ্রের উদ্বোধন পাবনায় সাদ্দামের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী হামলায় ছুরিকাঘাতে ৩জন আহত একজনের অবস্থা আশংকাজনক সিরাজগঞ্জে ইজিবাইক চালককে হত্যা করে গাড়ি ছিনতাই আটক দুই কুষ্টিয়ায় র‌্যাবের অভিযানে হত্যা মামলার আসামী গ্রেফতার

রংপুর সিটিতে উৎসবের ভোট আজ ত্রিমূখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা

Reading Time: 7 minutes

@ সব ধরনের প্রস্তুতিসম্পন্ন
@ থাকবে কড়া নিরাপত্তা ও সিসি ক্যামেরা
@ নয়জন মেয়রসহ ২৬০ জন প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন
@ ঝুঁকিপূর্ণ ৮৬টিসহ কেন্দ্র রয়েছে ২২৯

হারুন উর রশিদ সোহেল,রংপুর:
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন আজ মঙ্গলবার। টানা সতেরো দিনের প্রচার প্রচারণায় ভোটের মাঠ সরগরম থাকার পর এখন উৎসবের ভোটের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন নগরবাসী। শুরু হয়েছে উন্নয়ন, বঞ্চনা ও পাওয়া-না পাওয়া এবং ভোটের হিসাব-নিকাশ। কে হচ্ছেন মেয়র এই আলোচনাই চলছে এখানকার সবার মুখে মুখে।
এবারের নির্বাচনে নয়জন মেয়র প্রার্থী অংশ নিলেও আওয়ামী লীগ প্রার্থী এ্যাড. হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা ও বহিস্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী লতিফুর রহমান মিলনের কথা সর্বত্র আলোচনা চলছে। অনেকেই বলছেন, নৌকা-লাঙ্গলের সাথে হাতির ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা করছেন অনেকেই।এই নির্বাচনে সোয়া ৪ লাখের বেশি ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) ভোটার মাত্র একজন।
মেয়র পদে অন্য প্রার্থীরা হলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমিরুজ্জামান পিয়াল (হাতপাখা), জাকের পার্টির খোরশেদ আলম খোকন (গোলাপ ফুল), জাসদের শফিয়ার রহমান (মশাল), খেলাফত মজলিসের তৌহিদুর রহমান রাজু (দেয়াল ঘড়ি), বাংলাদেশ কংগ্রেসের আবু রায়হান (ডাব) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মেহেদী হাসান বনি (হরিণ)। তবে সিটি নির্বাচনে সব প্রার্থীই বর্ধিত এলাকার উন্নয়নসহ সড়কের অবকাঠামো উন্নয়ন, সড়ক বাতি, শিক্ষা ও সংস্কৃতি, বিনোদন, স্বাস্থ্য, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও বস্তিবাসীর উন্নয়নসহ যানজট ও জলাবদ্ধতা দূরীকরণের প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন।

ভোটাররা বলছেন, প্রচারণা ও গণসংযোগে এগিয়ে ছিলেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। তার সাথে সমানতালে প্রচারণা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ্যাড. হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া এবং বহিস্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী লতিফুর রহমান মিলন। কর্মী-সমর্থক ও সার্বিক বিবেচনায় তিনজনই মাঠ চষে বেড়িয়েছেন। মেয়র পদে নয়জন মধ্যে এই তিন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন তারা।
তবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আমিরুজ্জামান পিয়ালের কর্মী-সমর্থকরা বলছেন, গত কয়েকদিন ধরে অব্যাহতভাবে প্রার্থী বিভিন্নস্থানে গণসংযোগ করেছেন। দলের কেন্দ্রীয় আমীর চরমোনাই পীর বেশ কয়েকটি পথসভা করেছেন। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। তাই জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের সাথে মূল প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নৌকার চেয়ে হাতপাখার এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা বেশি।
নগরীর জাহাজ কোম্পানী এলাকার আরিফ হোসেন ও সাজু মিয়া জানান, নগরীর প্রাণ কেন্দ্রে উন্নয়ন হলেও বিশেষ করে বর্ধিত এলাকাগুলো বঞ্চিত হয়েছে। তেমন কোন উন্নয়ন হয়নি। একারণে সাধারণ মানুষজনের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছেন। তাই এবারের নির্বাচনে এসব ভোটার যার দিকে যাবে তিনি নির্বাচিত হবেন। তবে তারা সরকার দলীয় প্রার্থীকে ভোট দেয়ার পক্ষে। কারণ হিসাবে তারা বলছেন, দেশ চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ। তাই উন্নয়ন পেতে হলে তাদের প্রার্থীকেই নির্বাচিত করা উচিত।
৩১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আপেল মিয়া ও আল আমিন জানান, কিসের সিটি কর্পোরেশন। রাস্তা নাই, ড্রেন নাই। সামান্য একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তায় পানি জমে থাকে। কাঁদা দিয়ে চলাচল করতে হয়। ছেলে-মেয়ে স্কুলে যেতে পারে না। তিনি বলেন, ‘ভোট আসে ভোট যায়, এলাকার কথা কেউ মনে রাখে না।’সবাই শুধু প্রতিশ্রæতি দেয়।
নগরীর ৩২নং ওয়ার্ডের আশরাফুল আলম, নুর ইসলাম, ১৪ নং ওয়ার্ডের লিটন মিয়া ও ৭নং ওয়ার্ডের মিলন মিয়াসহ বেশ কয়েকজন জানান, মূলত নৌকা-লাঙ্গল-হাতি প্রতীকের তিন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে লড়াই হবে। তাদেরও জয়ের সম্ভাবনা আছে। তবে তারা ভোট সষ্ঠু হবে বলে আশাবাদি।
এদিকে এরই মধ্যে নির্বাচন উপলক্ষে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ভোট কেন্দ্রগুলোতে নির্বাচনী সরঞ্জাম পাঠানো শুরু হয়েছে। ভোটকেন্দ্র ও কক্ষে বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নেওয়া হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ইভিএমের মাধ্যমে এই ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তবে শেষ মুর্হুতে নগরবাসী মনে করছেন ভোটের লড়াই হবে ত্রিমুখী। নির্বাচনে নয়জন মেয়রসহ ২৬০ জন প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। ঝুঁকিপূর্ণ ৮৬টিসহ কেন্দ্র রয়েছে ২২৯টি।
ভোটাররা বলছেন, এবারের নির্বাচনে বর্ধিত ১৮টি ওয়ার্ডের ভোটাররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন। এসব ওয়ার্ড সিটি করপোরেশনে যুক্ত হলেও তেমন কোনো সুবিধাই পাননি এখানকার বাসিন্দারা। তাদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। এই সব ওয়ার্ডের বাসিন্দারা যাকে ভোট দেবেন তিনিই হতে পারেন রংপুর সিটির তৃতীয় মেয়র। হাসবেন শেষ হাসি।
ভোটাররা বলছেন, প্রচারণা ও গণসংযোগে এগিয়ে ছিলেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। তার সাথে সমানতালে প্রচারণা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ্যাড. হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া এবং বহিস্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী লতিফুর রহমান মিলন। কর্মী-সমর্থক ও সার্বিক বিবেচনায় তিনজনই মাঠ চষে বেড়িয়েছেন। মেয়র পদে নয়জন মধ্যে এই তিন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন তারা। তবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আমিরুজ্জামান পিয়ালের কর্মী-সমর্থকরা বলছেন, গত কয়েকদিন ধরে অব্যাহতভাবে প্রার্থী বিভিন্নস্থানে গণসংযোগ করেছেন। দলের কেন্দ্রীয় আমীর চরমোনাই পীর বেশ কয়েকটি পথসভা করেছেন। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। তাই জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের সাথে মূল প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নৌকার চেয়ে হাতপাখার এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা বেশি।
সচেতন নগরবাসীরা বলছেন, জাতীয় পার্টির দূর্গ হিসেবে পরিচিত রংপুরে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী কিছুটা এগিয়ে থাকলেও বর্ধিত এলাকার উন্নয়ন, অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে দুদকে তলবসহ নানা কারণে ভোট কমে গেছে। অন্যদিকে বর্তমানে দেশ পরিচালনা করছে আওয়ামী লীগ, সে হিসাবে উন্নয়নের প্রতীক হিসেবে নৌকার সম্ভাবনার কথাও অনেকেই বলছেন। তবে দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও মনোনয়ন বঞ্চিতদের অসন্তোষ থাকায় প্রচার মাঠে তেমন সফলতা দেখা যায়নি। হাতেগোনা কিছু নেতাকর্মী নিয়ে প্রচার চালিয়েছেন। বড় কোন শোডাউনও করতে দেখা যায়নি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে হাতি মার্কার সম্ভাবনার কথাও বলছেন কেউ কেউ। কারণ হিসাবে অনেকেই বলছেন, তিনি প্রথম মেয়র শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুর ভাগ্নি জামাই। তিনি দীর্ঘদিন তার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে ছিলেন। এছাড়াও তিনি একজন কৃষি উদ্যাক্তা ও খামারী। ডেইরী এসোসিয়েশনের সভাপতি থাকায় নগরী ও জেলাজুড়ে তার খামারীদের সুসম্পর্ক রয়েছেন। সেই ভোট, আওয়ামী লীগের ক্ষোভের ভোট ও বিএনপি-জামায়াতের কিছু ভোটও তার পাবার সম্ভবনা রয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের ভোট বিভিন্ন প্রার্থীর বাক্সে ভাগাভাগি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এজন্য মান ভাঙ্গাতে কৌশলী ছিলেন প্রার্থীরাও।
মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতারা জানান, বর্তমান সরকারের অধীনে ভোট বর্জন করায় রংপুর সিটিতে কোনো প্রার্থী দেয়নি বিএনপি-জামায়াত। দল দুটির নেতারা দাবি করেছেন, নগরীতে তাদের প্রায় ৭০ হাজার ভোট রয়েছে। তবে তারা ভোট যেহেতু বর্জন করেছেন তাই ভোট প্রদানেও বিরত থাকবে।
এদিকে তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হবে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে ৯ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৮৩ জন, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৬৮ জনস সর্বমোট ২৬০ জন প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। এরমধ্যে ৩০নং ওয়ার্ডে একজন সাধারণ কাউন্সিলর বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তবে তা নিয়ে মামলা চলমান রয়েছে।
এদিকে সিটি করপোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ডের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। ভোটার চার লাখ ২৬ হাজার ৪৭০ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার দুই লাখ ১৪ হাজার ১৬৬ জন, পুরুষ ২ লাখ ১২ হাজার ৩০৩ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার একজন।

প্রস্তুত নির্বাচন কমিশন, থাকবে কড়া নিরাপত্তা ও সিসি ক্যামেরা
রংপুর সিটি কর্পোরেশন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। কেন্দ্রে কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করার পাশাপাশি ইভিএম ব্যবহার উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, পোলিং এজেন্টসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ইভিএম সম্পর্কে ধারণা প্রদানসহ ভোটদান প্রক্রিয়া তুলে ধরে শেষ করা হয়েছে দুদিনের মক ভোট।
গতকাল বেলা সাড়ে ১১টা থেকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে রংপুর পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠ থেকে কেন্দ্রগুলোতে ইভিএমসহ অন্য সরঞ্জামাদি পাঠানোর কার্যক্রম উদ্বোধন করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও যুগ্ম সচিব আবদুল বাতেন।  তিনি জানান, ভোট কেন্দ্রগুলোতে নির্বাচনী সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে। ভোটকেন্দ্র ও কক্ষে বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নেওয়া হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নির্বাচনী এলাকার ২২৯ কেন্দ্রের ১ হাজার ৩৪৯ কক্ষে নেওয়া হচ্ছে ইভিএমসহ অন্য নির্বাচনী সরঞ্জাম। এছাড়া নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত রয়েছেন প্রায় ৭ হাজার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। থাকছে র‌্যাব ও বিজিবির পাশাপাশি এপিবিএন ও পুলিশের টহল গাড়ি। এই নির্বাচনে ২২৯ কেন্দ্রের মধ্যে ৮৬টিকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে মাঠের পরিস্থিতি ঠিক রাখতে মাঠে ৪৯ জন নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করছেন। এর মধ্যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছে ৩৩ এবং ১৬ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট। এছাড়াও ১১ প্লাটুন বিজিবির সদস্যও কাজ করছেন।
ইতিমধ্যে মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর জারি করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। পুলিশের থাকছে র‌্যাব ও বিজিবির স্ট্রাইকিং ফোর্স। নির্বাচনের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মাঠ প্রশাসনকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ন্ত্রণের নির্দেশনা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

কেউ অনিয়ম করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা: রিটানিং কর্মকর্তা
রংপুর সিটি করপোরেশেনে (রসিক) মডেল নির্বাচন করতে চায় কমিশন। এজন্য নির্বাচনের সময় গোপন কক্ষে একজনের বেশি প্রবেশ করলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। গতকাল সোমবার ভোটপূর্ব সরঞ্জাম বিতরণকালে এসব কথা জানান রিটার্নিং অফিসার আব্দুল বাতেন।
এদিন রংপুর পুলিশ লাইনস মাঠে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পুলিশ কমিশনারের ব্রিফিংয়ে ভোটের পরিবেশ এবং বিধি নিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়। এরপর কেন্দ্রে কেন্দ্রে ইভিএম পাঠানো শুরু হয়। পুলিশি নিরাপত্তায় পৌঁছানো হচ্ছে ইভিএমসহ সব নির্বাচনী সরঞ্জাম।
আব্দুল বাতেন বলেন, ‘কেউ অনিয়ম করলে তার বিরুদ্ধে অতীতের চেয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ব্যক্তির দায় প্রতিষ্ঠান নেবে না।’
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন বলেন, আগামীকালের নির্বাচনও শান্তিপূর্ণ হবে। আমরা আপনাদের ওপর আস্থা রাখছি। এটি মডেল নির্বাচন হবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আপনারা এই নির্বাচনে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। দায়িত্বে অবহেলা হলে ডিপার্টমেন্ট কোনো দায় নেবে না, কাজেই নির্বাচনী বিধির মেনে সবাইকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। আর যদি কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের বিরুদ্ধে কোনো নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগ ওঠে, তাহলে কোন ছাড় দেওয়া হবে না।

দায়িত্ব অবহেলায় কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না: আরপিএমপি কমিশনার
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীর প্রতিটি সদস্যেদের নিয়ম মেনে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার নুরে আলম মিনা বলেন, যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগ ওঠে তাহলে ছাড় দেওয়া হবে না। বিগত নির্বাচনগুলোতেও দায়িত্ব অবহেলায় কাউকে ছাড় দেওয়া হয়নি, এবারও দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে পুলিশ। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া মাঠে সাদা পোশাকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নিয়োজিত থাকবে। নিরপেক্ষভাবে সার্ভিস রুল মেনে দায়িত্ব পালন করতে হবে। যদি কেউ এর ব্যতিক্রম ঘটানোর চেষ্টা করেন তার দ্বায়ভার প্রতিষ্ঠান নেবে না।
আরপিএমপি কমিশনার বলেন, নির্বাচনে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসার সমন্বয়ে প্রতিটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি মোবাইল ফোর্স থাকবে। এছাড়া প্রতি ৩টি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স এবং প্রতি থানায় একটি করে রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। আর প্রতি ২টি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি করে র‌্যাবের দল থাকবে। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ভোটকেন্দ্রের বাইরে র‌্যাব-পুলিশের টিম সংশ্লিষ্ট ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে। আর গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে ৪ জন অস্ত্রসহ পুলিশ, দুইজন অস্ত্রসহ অঙ্গীভূত আনসার ও ১০ জন লাঠিসহ অঙ্গীভূত আনসার-ভিডিপি সদস্য মোতায়েন থাকবে। এছাড়া ৩৩টি সাধারণ ওয়ার্ডে ৩৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ১৬ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।
পুলিশ সদস্যদের কারও কাছ থেকে কোনো খাদ্য গ্রহণ না করা আহ্বান জানিয়ে পুলিশ কমিশনার বলেন, এ ধরনের কোনো ছবি বা ভিডিও ভাইরাল হলে সেই সদস্যের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফাক্টর শ্রমিক, তরুণ ও বর্ধিত এলাকার ভোটাররা
রংপুর সিটি কর্পোরেশন (রসিক) নির্বাচনে ভোটের মাঠে ত্রিমূখী লড়াইয়ের সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। এবারের নির্বাচনে ফাক্টর হতে পারে অটো-রিকশা শ্রমিক, তরুণ ও বর্ধিত এলাকার ভোটাররা। অটো রিকশার লাইসেন্স দেয়া না দেয়াসহ বর্ধিত উন্নয়ন নিয়ে চাপা ক্ষোভ ও বঞ্চনার কারনে এবার তারা ভোট নিয়ে। অন্যদিকে অধিক সচেতন, দেশ প্রেম ও তথ্য প্রযুক্তির যুগে তরুণরাও বড় নিয়ামক হতে উঠতে পারেন। এছাড়াও র্নির্বাচনে প্রার্থী না দেয়ায় বিএনপি-জামায়াতের ভোট কার দিকে যাচ্ছে নাকি, বয়কট হচ্ছে তা এখনও বুঝা না গেলেও তারা বড় ফাক্টর। শ্রমিকরাও প্রভাব ফেলতে পারেন। এর ফলে এসব ভোট যার দিকে যাবে তিনিই নির্বাচিত হবে।#

রংপুর সিটির ভোট মনিটরিংয়ে থাকবে ১৮০৭ সিসিটিভি

রংপুর সিটি কর্পোরেশনের (রসিক) ভোট মনিটরিংয়ে থাকবে ১ হাজার ৮০৭টি সিসিটিভি ক্যামেরা। ভোটে কোনো অনিয়ম হলেই নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়া হবে। গতকাল সোমবার এ তথ্য জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আইডিইএ প্রকল্পের ডিপিডি কমিউনিকেশন স্কোয়াড্রন লিডার মো. শাহরিয়ার আলম।
তিনি জানান, ২২৯টি কেন্দ্রেই সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এজন্য ১ হাজার ৮০৭টি সিসিটিভি ক্যামেরা থাকবে।

রসিক নির্বাচন :ভুয়া প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আটক
রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনের ভোটগ্রহণের আগের দিন লাল্টু ইসলাম রানা নামে এক ভুয়া প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার বিকেলে নগরীর ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের মহিন্দ্রা এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়।
আটক লাল্টু ইসলাম রানা ঝিনাইদহ সদর উপজেলার এনতাজ জোয়ার্দারের ছেলে। তার কাছ থেকে ‘বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন আইনে যেকোনো সময় ভোট গণনা বন্ধ রাখতে পারেন প্রিসাইডিং অফিসার’ লেখা প্যাডের পাতা, আইডি কার্ড ও সিল উদ্ধার করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, সোমবার বিকেলে লাল্টু ইসলাম রানা মন্দিরা এলাকায় গিয়ে কাউন্সিলর প্রার্থী সুলতান আহমেদকে নির্বাচনে জয়ী করার কথা বলে টাকা দাবি করেন। এতে সন্দেহ হলে বিষয়টি তাৎক্ষণিক মাহিগঞ্জ থানা পুলিশকে অবগত করেন ওই কাউন্সিলর প্রার্থী। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মাহিগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, নগরীর ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের এক কাউন্সিলর প্রার্থীর মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে লাল্টু ইসলাম রানা নামে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। তিনি নিজেকে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা পরিচয় দিয়েছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদসহ বিষয়টি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Design & Developed BY Hostitbd.Com