শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:৪৭ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
ন্যাশনাল ডেক্স :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট একটি আন্তঃসীমান্ত এবং আঞ্চলিক সমস্যা, সুতরাং এ মানবিক সঙ্কটের সমাধান করা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরই দায়িত্ব। ” নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে বুধবার রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় কথা বলছিলেন শেখ হাসিনা।তিনি বলেন, “গুরুতর এ সঙ্কট বিলম্বিত হলে আমাদের সবার নিরাপত্তাই হুমকির মুখে পড়বে। প্রত্যাবাসনের উদ্যোগে কোনো উন্নতি না হওয়ায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। তাদের অনেকে নানা অপরাধমূলক কাজে জড়াচ্ছে। তাদের অনেকের উগ্রবাদে জড়ানোর ঝুঁকিও তৈরি হচ্ছে। আমাদের পুরো অঞ্চলের জন্য এটা একটা হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।” আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে প্রধানমন্ত্রী আবারও মনে করিয়ে দিয়েছেন, দুর্দশায় পড়া রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ যা যা করছে, তার সবই সাময়িক। “আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের বন্ধু আর উন্নয়ন অংশীদারদের প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি, আমাদের এই চেষ্টায় সহযোগিতা করুন। রোহিঙ্গারা নিজেরাও তাদের বাড়ি ফিরে যেতে চায়। আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার আগে বাংলাদেশের পৃষ্ঠপোষকতায় ‘ফোরসিবলি ডিসপ্লেস মিয়ানমার ন্যাশনালস (রোহিঙ্গা) ক্রাইসিস: ইম্পারেটিভস ফর এ সাস্টেইনেবল সলিউশন’ শীর্ষক এই উচ্চ পর্যায়েল ভার্চুয়াল বৈঠক হয়।বক্তৃতার শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবারের জাতিসংঘ অধিবেশনে বিশ্ব নেতারা এসেছেন মহামারীর সঙ্কট থেকে মুক্তি আর টেকসই পুনর্গঠনের আশা নিয়ে। বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলও জরুরি অনেক বিষয়ে সমাধানের আশা নিয়ে এসেছে, যার একটি হল রোহিঙ্গা সঙ্কট।“গত চার বছর আমরা এই আশা ধরে রেখেছি যে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত এই নাগরিকরা নিরাপদে, মর্যাদার সঙ্গে তাদের মাতৃভূমিতে, তাদের নিজের বাড়িতে ফিরে যেতে পারবে। তাদের প্রত্যাবাসনের জন্য আমরা এই বিশ্বসভার ওপর, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর আস্থা রেখেছি। “কিন্তু আমাদের আহ্বানে সাড়া মেলেনি। আমাদের আশাও পূরণ হয়নি। আমরা এখন এ সঙ্কটের পঞ্চম বছরে। তারপরও আমরা একটি টেকসই সমাধানের আশা ধরে রেখেছি।”শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৭ সালে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত এই রোহিঙ্গারা যখন মিয়ানমারের রাখাইন থেকে দলে দলে আসতে শুরু করেছিল, বাংলাদেশের সামনে তখন দুটো পথ ছিল। হয় তাদের প্রাণ বাঁচানো, নয়ত সীমান্ত বন্ধ রেখে তাদের জাতিগত নিধনের শিকার হতে দেওয়া। মানবতার স্বার্থে তাদের প্রাণ বাঁচানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ।“২০১৭ সালে সঙ্কট শুরুর পর থেকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রতিটি অধিবেশনে আমি এ সমস্যার সমাধানের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব রেখে আসছি। আমার সরকার মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগ রেখেছে। আঞ্চলিক পর্যায়ে ভারত ও চীনের মত দেশকে আমরা এ আলোচনায় যুক্ত করেছি। আসিয়ান যাতে এ বিষয়ে আরও উদ্যোগী হয়, সেই চেষ্টা আমরা করেছি।” সেই সঙ্গে জাতিসংঘেও এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব রাখার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দুঃখজনকভাবে, অসহায়, ছিন্নমূল এই রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফিরিয়ে নিতে আমাদের এই চেষ্টায় কোনো ফল এখনও আসেনি। আজ পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাও তাদের নিজভূমে ফিরতে পারেনি।”শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যাবাসন আটকে থাকায় রোহিঙ্গারা যাতে সাময়িকভাবে বাংলাদেশে নিরাপদে থাকতে পারে, সম্পদের সীমাবদ্ধতার পরও সেই ব্যবস্থা সরকার নিয়েছে। কিন্তু বিপুল সংখ্যক মানুষের চাপ ওই এলাকার পরিবেশ ও প্রতিবেশের ওপর মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলছে। “কোভিড মহামারীর এই সঙ্কটের মধ্যেও রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা আর মঙ্গলের কথা আমরা ভুলে যাইনি। ‘সবাই নিরাপদ না হলে কেউ নিরাপদ হবে না’ এই বিশ্বাসে আমরা অটল থেকেছি। আমাদের জাতীয় টিকাদান কর্মসূচিতে রোহিঙ্গাদেরও আমরা অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছি।” কক্সবাজারের ক্যাম্পে রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে প্রতি বছর ৩০ হাজার নতুন শিশুর জন্ম হচ্ছে। এই চাপ সামলে রোহিঙ্গাদের আরও একটু ভালোভাবে থাকার ব্যবস্থা করতে তাদের একটি অংশকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগের কথাও প্রধানমন্ত্রী বলেন।