মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪১ অপরাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
মোঃ জহুরুল ইসলাম, কুষ্টিয়া :
আসছে ছুটে, বসবে মেলা, মেলা হবে মিলন মেলা, মিলন মেলা লাখো ভক্তদের মহামিলন! মনের টানে ছুটে মহামিলন বিশ্বে আর একটি খুঁজে পাওয়া কঠিন। মহামিলনের মহাগুরু বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইজি। লালন সাঁইজির ১৩২ তম তিরোধান দিবস পালন করতে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ার লালন মাজার প্রাঙ্গনে লাখো ভক্তদের পদচারনায় তিরোধান দিবস পালন উপলক্ষে ১৭ অক্টোবর থেকে ১৯ অক্টোবর তিন দিনব্যাপী লালন শাহের তিরোধান দিবসের স্মরণ উৎসব। স্মরণ উৎসব আলোচনা সভা, লালন মেলা ও সঙ্গীত অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এবং লালন একাডেমীর আয়োজনে এই স্মরণ উৎসব চলবে তিন দিন। অনুষ্ঠানকে ঘিরে ইতোমধ্যে লালন একাডেমির সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ছেঁউড়িয়া আঁখড়াবাড়ি লালন মাজারকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। আসতে শুরু করেছে হাজারো সাধু ভক্ত। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় থেকে লালন ভক্ত অনুসারীরা এসেছেন। তারা জানান, সাঁইজির তিরোধান দিবস উপলক্ষে আমরা এখানে এসেছি। এখানে আসলে আমাদের ভালো লাগে। সাঁইজির বানীগুলো কানে ভাসে। তাই আগেই চলে এসেছি। ছেঁউড়িয়া লালন মাজারের খাদেম মহম্মদ আলী শাহ জানান, ১২৯৭ বাংলা সনের ১ কার্তিক, ১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর এই আধ্যাত্মিক বাউল সাধক লালন শাহ’র মৃত্যু হয়। তার তিরোধান দিবসকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর ভক্তরা এ উৎসব পালন করতে সমবেত হয়ে থাকে। এসময় আখড়াবাড়ি দেশ-বিদেশ থেকে আগত লাখো প্রাণের পদভারে মুখরিত হয়ে ওঠে। লালন একাডেমির সভাপতি ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম জানান, ফকির লালন শাহ’র ১৩২ তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে এবারে তিন দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠান মালার আয়োজন করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই প্রায় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। প্যান্ডেলের কাজ কিছু বাকি আছে সেটাও হয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন, এবারে লালন মেলায় নিরাপত্তার জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। সেইসঙ্গে পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দা পুলিশ, আনসার সদস্য এবং লালন একাডেমির স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত থাকবে। তিনি আরো বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারেও লালন ভক্তদের জন্য বিকেলে অদিবাস, সকালে বাল্যসেবা ও দুপুরে পূর্ণসেবা ব্যবস্থা রয়েছে। এবারে ১৭ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে আয়োজন চলবে ১৯ অক্টোবর গভীর রাত পর্যন্ত। কুষ্টিয়া শহরের কোল ঘেঁষে কুমারখালী উপজেলার কালীগঙ্গা নদী। এ নদীর তীরেই ছেঁউড়িয়ায় লালন সমাধি। বাংলা ১২৯৭’র পয়লা কার্তিক ও ইংরেজি ১৭ অক্টোবর ১৮৯০ সালে এখানেই লালন শাহ’র শেষ শয্যা রচিত হয়। এরপর থেকে এ এলাকায় তার স্মরণোৎসব পালিত হয়ে আসছে। লালন গবেষকদের মতে, বাউল সাধক ফকির লালন শাহর জীবদ্দশায় দোলপূর্ণিমা উপলক্ষে পালন করা হতো দোল উৎসব। আর দোলপূর্ণিমাকে ঘিরেই বসতো সাধু সংঘ। লালনের সেই স্মৃতির ধারাবাহিকতায় লালন একাডেমীও প্রতিবছর এ উৎসবটিকে লালন স্মরণোৎসব হিসাবে পালন করে আসছে। তবে লালন অনুসারীরা দিনটিকে ‘দোলপূর্ণিমা’ উৎসব হিসাবেই পালন করে থাকেন। সাধুদের মতে, লালন অনুসারীরা দোলপূর্ণিমার এ রাতটির জন্য সারা বছর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন। সাঁইজির রীতি অনুসারে দোলপূর্ণিমার রাতের বিকেলে অধিবাসের মধ্য দিয়ে ২৪ ঘণ্টার দোলসঙ্গ শুরু হয়।