শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:৪৫ পূর্বাহ্ন

News Headline :
মানববন্ধনের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন শ্যামনগরে গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে সড়কে ভ্যান চালকের মৃত্যু রাজশাহীর মোহনপুরে মদ পানে ৩ জনের মৃত্যু, গ্রেফতার ২ রাজশাহী মহানগর বিএনপি’র সাতটি থানার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা যানজট নিরসন দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে আরএমপি’র মতবিনিময় সভা শ্যামনগরে এবার কৃষকরা আমন ধানের আশানুরুপ ফলন পেয়েছে পাবনায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ জন নিহত ১জন আহত শাজাহানপুরে বিএনপি’র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করে ছাত্রদলের দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত মান্দায় বিল উন্মুক্তের দাবিতে জেলেদের সংবাদ সম্মেলন সভাপতির স্বৈরাচারী আচরন স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতিতে পাবনা শহর সমাজ সেবা কার্যালয়ের কার্যক্রম স্থবির

শীতের সাথে কনকনে বাতাসে কাহিল রংপুরের জনজীবন বাড়ছে অগ্নিদগ্ধের সংখ্যা

Reading Time: 3 minutes

@ বিপাকে দুঃস্থ ও নিম্ন আয়ের মানুষ @ শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানোর দাবি

হারুন উর রশিদ সোহেল,রংপুর :
রংপুর অঞ্চলে শীতের সাথে বইছে কনকনে ঠান্ডা বাতাস। গত কয়েকদিন থেকে ঘন কুয়াশার সঙ্গে শীতের তীব্রতা বেড়ে চলেছে। এতে কাহিল হয়ে পড়েছে রংপুরের জনজীবন। বেড়েছে নগরীসহ প্রত্যন্ত অঞ্চল ও চরাঞ্চলের দুঃস্থ ও নিম্ন আয়ের মানুষের দুর্ভোগ। একদিকে শীতের কারণে জীবিকায় নির্বাহ ব্যহত ও অন্যদিকে শীত বস্ত্রের অভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এতে বিপাকে পড়েছেন দুঃস্থ, শ্রমজীবি ও নি¤œ আয়ের মানুষেরা।
এদিকে দ্রুত সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা, বৃত্তবানদের শীর্তাতদের পাশে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন সচেতন মহল।
হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলমান শৈত্য প্রবাহের হাত থেকে রক্ষা পেতে খড়-কুটা জ্বালিয়ে আগুনের উত্তাপ নিতে গিয়ে গতকাল শনিবার সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত পাঁচজন রোগী রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এছাড়া গত কয়েকদিনে আগুনের উত্তাপ নিতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন দুইজন নারী। বর্তমানে ভর্তি রয়েছে ৫৮জন। এবার ডিসেম্বরেই দগ্ধ রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে।
রমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ওই ইউনিটে ৫৮ জন আগুনে পোড়া রোগী রয়েছে। এর মধ্যে শীতের হাত থেকে বাঁচতে খড়-কুটা জ্বালিয়ে উত্তাপ নেয়ার সময় রংপুর ও আশপাশ এলাকায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে ৩২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে দুইজন নারী মারা গেছেন। গতকাল শনিবার দুপুর পর্যন্ত পাঁচজন নারী-শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।এসব রোগী হাসপাতালের বিছানায় জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছটফট করছেন। এসব রোগীর মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। শীতের মাত্রা বাড়ার সাথে সাথে আগুনে পোড়া রোগীর সংখ্যা বাড়বে এবং প্রাণহানিও বাড়বে এমনটাই শঙ্কা করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল শনিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত সূর্যের মুখ দেখা যায়নি রংপুর নগরীসহ এ অঞ্চলে। গত কয়েকদিন থেকে ঘন কুয়াশার সঙ্গে শীতের তীব্রতা বাড়ায় এমন চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। এতে নগরীসহ জেলার পীরগাছা, কাউনিয়া ও গঙ্গাচড়া উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ চরাঞ্চল, মিঠাপুকুর, পীরগঞ্জ, বদরগঞ্জসহ রংপুর অঞ্চলের কুড়িগ্রাম, রাজারহাট, চিলমারী, উলিপুর, রাজিবপুর, রৌমারী, নাগেশ্বরী, লালমনিরহাটের তিস্তা, সদর উপজেলা, হাতিবান্ধা, পাটগ্রাম, আদিতমারী ও নীলফামারী সদর, ডিমলা, ডোমার, জলঢাকা, গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়িসহ রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা এবং নদী তীরবর্তী চরাঞ্চলের দুঃস্থ ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। শীত বস্ত্রের অভাবসহ চিকিৎসা ও নানা সংকট তৈরি হয়েছে। এদিকে শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডায়রিয়া, আমাশয়, নিউমোনিয়া, সর্দি-কাঁশি ও শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শীত নিবারণ করতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধের সংখ্যাও বেড়েছে। সবচেয়ে বেশী বিপাকে পড়েছে ছিন্নমূল্য, বস্তিবাসি, চরাঞ্চলের মানুষ। শীত থেকে রেহাই পাচ্ছে না পশুরাও। এছাড়াও বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও শিশুরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
গঙ্গাচড়ার বিনবিনার চরের কৃষক লুৎফর রহমান ও কুড়িবিশ্বা গ্রামের আব্দুল হালিম জানান, গত কয়েক দিন থেকে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। গরম কাপড়ের অভাবে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা চলছে। এমন শীত অব্যাহত থাকলে দুর্ভোগ বাড়বে।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার রতিগ্রাম বাজারের আমজাদ হোসেন ও সাজু মিয়া, জাকির হোসেনসহ বেশ কয়েকজন জানান, শীত আর বাতাসে তারা কাহিল। এমনিতেই কুড়িগ্রাম নদী এলাকা। বহু চরাঞ্চল। তাই এই এখানে শীত বেশি। এতে বৃদ্ধ-শিশুসহ দুঃস্থ অভাবী মানুষজন দুর্ভোগে পড়েছে। শীতবস্ত্র ও কর্মসংস্থানেরও অভাব দেখা দিয়েছে। কারণ কাজকাম করতে না পেরে অনেকেই বেকার অবস্থায় রয়েছে। এতে তারা অর্থিক সংকটে ভুগছে। তাই সরকার ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসলে কিছুটা দুর্ভোগ লাঘব হবে। পীরগাছার ছাওলার চরের নুর ইসলাম ও চর তাম্বুলপুরের শহিদুল ইসলাম জানান, যেভাবে শীত বাড়ছে তাতে জীবন আর চলছে না, কারণ শীতে কাজকাম ঠিক মতো করা যাচ্ছেনা। ঘরে গরম কাপড় কেনার মতো টাকাও নেই। গরীব মানুষ তাই বিপদে আছি। কাউনিয়ার চর চতুরা গ্রামের শিক্ষক আব্দুল মমিন কাজল বলেন, সকাল থেকেই শীতে কাহিল হয়ে পড়েছি। খুব কষ্ট হচ্ছে। আমার যদি এমন হয় তাহলে আরও চরের মানুষ কি অবস্থায় আছে তা ভেবে দেখেন? রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের প্রধান ডা. এম এ হামিদ জানান, এ পর্যন্ত আগুনের উত্তাপে দগ্ধ দুইজন রোগী মারা গেছেন। প্রতিবছরই আগুন পোহাতে গিয়ে নিহতের সংখ্যা বাড়ছে। এজন্য জনগণের সচেনতা প্রয়োজন।
রংপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত রংপুর জেলার জন্য ৫৫ হাজার পিস কম্বল বরাদ্দ হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রতি ইউনিয়নে ৪৯০টি করে বিভিন্ন উপজেলায় ৩৮ হাজার ৭১০টি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। সিটি কর্পোরেশন এলাকার জন্য রয়েছে ১৬ হাজার ২৯০টি কম্বল। রংপুর আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান বলেন, গতকাল শনিবার রংপুর অঞ্চলে স্থান ভেদে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় একই থাকলেও রাতের তাপমাত্রা আরও হ্রাস পেতে পারে।

Please Share This Post in Your Social Media

Design & Developed BY Hostitbd.Com