সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩০ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
মোঃ হেলাল উদ্দিন সরকার, ধুনট বগুড়া :
বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বেলগাছি গ্রামে গড়ে তুলেছেন সুন্দর দৃষ্টিনন্দন একটি কৃষি উদ্যান । উদ্যানটিতে সারিবদ্ধ ভাবে বারোমাসি ভিয়েতনামি মালটা গাছ , বারোমাসি কাটিমন আম গাছ , কাশ্মীরী আপেল কুল , পেয়ারা গাছ , আরও রয়েছে সারি সারি সুপারি গাছ ।
১১ বিঘা জমির উপর সুন্দর সুশৃঙ্খল ভাবে উদ্যানটি তৈরি করেছেন মোঃ গাজিউল হক তালুকদার এবং তার স্ত্রী মোছাঃ শাহনাজ বেবী । মোঃ গাজিউল হকের বাবা মৃত রফিকুল ইসলাম তালুকদার অত্র এলাকায় একজন সমাজসেবক ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিন সন্তানের জনক গাজীউল হক তালুকদারের ছোট থেকেই স্বপ্ন ছিল সুপরিকল্পিত ভাবে বাগান করে ফলমূলের চাষাবাদ করার। তারই ধারাবাহিকতায় তিন বিঘা জমির উপর গড়ে তোলেন চায়না-৩ লিচু বাগান। পরবর্তীতে কৃষি উদ্যান বিভাগের উপ-পরিচালক মোঃ আব্দুর রহিম সাহেবের পরামর্শ ও তত্ত্বাবধানে এগারো বিঘা জমির উপর গড়ে তুলেছেন বারোমাসি ভিয়েতনামি মালটা, বারোমাসি কাটিমন আম, চায়না-৩ লেবু , থাই-৫ পেয়ারা, এবং উন্নত জাতের সুপারি গাছের মিশ্র কৃষি উদ্যান। বর্তমানে উদ্যানটিতে ছয় জন কর্মী সার্বক্ষণিক কাজ করছেন। ১৪ মাস বয়সি প্রতিটি বারোমাসি ভিয়েতনামি মালটা গাছের সবুজ পাতার ফাঁকে ডালে ঝুলে রয়েছে আধাপাকা মালটা। ফলের ভারে নুয়ে পড়েছে গাছের ডালপালা। মালটা বাগানে এমন চিত্রই চোখে পড়ে।
গাজিউল হক বলেন, বিগত কয়েক বছর আগে বিভিন্ন জাতের ফলে ফরমালিন ব্যবহারের হিরিক পরে। যা মানব দেহের জন্য ক্ষতিকারক। মানুষ নিরাপদ ফল খাওয়ার কথা ভুলে গিয়ে ছিল। ভেজালমুক্ত ফল উপহার দেওয়ার কথা চিন্তা করেই কৃষি বিভাগের সহযোগীতা নিয়ে মালটা বাগান করেছি। অল্প পরিশ্রমে কম খরচে মালটা চাষ করে লাভবান হওয়া যায়। তার বাগানে বারোমাসি ভিয়েতনামি ৩০০টি মালটার গাছ রয়েছে। চারা রোপণের ১বছর পর ফলন শুরু করেছে। ২ বছর পর থেকে একটি গাছে পূর্ণাঙ্গরূপে ফল ধরা শুরু করবে বলে আশাবাদী তিনি। প্রতিটি গাছে ৩০০ থেকে ৪০০টি ফল আসে। তার বাগান দেখে অনেকেই মালটা চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ভিয়েতনামি মালটাঃ
কৃষি উদ্যানে চায়না-৩ জাতের লেবু গাছ রয়েছে ১১০ টি। লেবু গাছে থোকায় থোকায় লেবু ধরেছে। গত বছর চারা লাগানোর ১ম বছরে প্রায় এক লক্ষ টাকার লেবু বিক্রয় করেছেন। এবার লেবু গাছ প্রতি ১০০০ থেকে ১২০০ লেবু ধরবে বলে আশা করছেন। তেমনি লেবু বিক্রয় করে আয়ও বেশি হবে।
চায়না-৩ লেবুঃ
কৃষি উদ্যানটিতে বারোমাসি কাটিমন জাতের আম গাছ রয়েছে ১০০ টি ।এই জাতের আম গাছে বছরের সব সময়ই আম ধরে থাকে । এক বছরের মাথায় বাগানের প্রতিটি গাছেই প্রথম আম ধরেছে । বর্তমানে কাটিমন আমের দাম আট হাজার টাকা করে । সে হিসেবে তিনি এই খাত থেকে বেশ কিছু অর্থ আয় করবেন বলে জানিয়েছেন।
কাটিমনঃ
উদ্যানটিতে কাশ্মীরী আপেল কুল গাছ রয়েছে ২৩০ টি । এই জাতের কুল দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু। গত বছর প্রথম ফলন হিসেবে গাছ প্রতি ২০ থেকে ২২ কেজি করে ফল সংগ্রহ করে বাজারে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন । এবার গাছ প্রতি এক থেকে দেড় মণ ফল পাওয়ার আশা করছেন। উদ্যানটিতে থাই পেয়ারা-৫ গাছ রয়েছে ১৪০০ টি।প্রতিটি গাছেই প্রচুর পরিমাণে পেয়ারা ধরেছে । ফলের ভারে গাছগুলো নুয়ে পড়ছে। গত বছর এর মধ্যেই প্রায় দুই লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রয় করেছেন। আরো প্রায় তিন লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রয় করবেন বলে তিনি জানান।
থাই-৫ পেয়ারাঃ
এছাড়াও উদ্যানটিতে ১৮০০ উন্নত জাতের সুপারি গাছ লাগানো রয়েছে । এর মধ্যে ৪০০ সুপারি গাছে ফুল এসেছে ।
হর্টিকালচার সেন্টার বনানী, বগুড়া এর উপ-পরিচালক জনাব মোঃ আব্দুর রহিম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কৃষি উদ্যান করে মোঃ গাজিউল হক সফল হয়েছেন। সেখানে আমাদের বানিজ্যিক মিশ্র ফল বাগান প্রদর্শনী রয়েছে। হর্টিকালচার সেন্টার ও কৃষি বিভাগ সব সময় তাকে পরামর্শ দিয়ে থাকে। তার বাগানে গিয়ে দেখেছি উদ্যানের বিভিন্ন জাতের ফলগুলো পরিপক্ক না হওয়া পর্যন্ত বাজারজাত না করতে বলেছি। আমাদের পক্ষ থেকে গাজিউল হক এবং নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য সব সময় সুপরামর্শ ও সব রকম সাহায্য সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে ।