বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:৪৩ অপরাহ্ন
Reading Time: 4 minutes
ন্যাশনাল ডেক্স :
ভারতে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে করোনা (covid-19)। রাজ্যেও কোভিড পরিস্থিতি অত্যন্ত চিন্তাজনক। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ (covid-19 second wave) ছড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে অক্সিজেনের জন্য হাহাকার পড়ে গিয়েছে। অবস্থা এতটাই ভয়াবহ যে, সুস্থ মানুষও ভবিষ্যতের কথা ভেবে গোপনে নিজের বাড়িতে অক্সিজেনের সিলিন্ডার মজুত করে রাখছেন। এই কারণে বহু করোনা রোগী অক্সিজেন না পেয়ে মারা যাচ্ছেন। প্রতি দিনের কাগজ খুললেই অক্সিজেন না পেয়ে রোগীর মৃত্যুর ছবিগুলো দেখলে নিজেদের বড় অসহায় মনে হয়। এই পরিস্থিতিতে কেমন করে কাটানো উচিৎ তারই পরামর্শ দিলেন অ্যাপলো হাসপাতালের বিশিষ্ট চিকিৎসক হোম হেল্থকেয়ার ইউনিট অ্যাস কনসালটেন্ট পিজিকাল থেরাপিস্ট অনিরুদ্ধ কর।
এই সময় ডিজিটালের তরফে সাক্ষাৎকার নিলেন শ্রাবণী অধিকারী।
এই সময় ডিজিটাল: করোনাভাইরাসে অক্সিজেনের মাত্রা কী এবং তা ঘিরে সঙ্কট কোথায়? কতই বা তা থাকা উচিত?
ডাঃ অনিরুদ্ধ কর: করোনায় আক্রান্তদের ফুসফুস কমজোর হয়ে যাচ্ছে। ফলে অক্সিজেন নেওয়ার গতিও কমছে। রক্তে অক্সিজেন ঠিক কতটা আছে, তা মাপা যায়। সেই মাপকেই চিকিৎসার পরিভাষায় বলে শরীরের ‘অক্সিজেন স্যাচুরেশন’ বা অক্সিজেনের মাত্রা। এই বছর মানুষের মধ্যে একটা নতুন উপসর্গ দেখা যাচ্ছে সেটি হল অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়া। সেই সঙ্গে পালস রেটও অনেকটা বাড়ছে। তবে, এখন থেকে যদি সচেতন না হওয়া যায় ভবিষ্যতে আরও ভয়ঙ্কর পরিণতি হতে পারে।
আগের বছর এবং এই বছরের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে, গত বছরের ভাইরাসটা এতটা ব্যাপক হারে ছড়ায়নি, যেহেতু লকডাউন শুরু হয়ে গিয়েছিল। তাতে, মানুষের মধ্যে অ্যাকভিট রোগী ও সুস্থ মানুষের মধ্যে কমিউনিকেশন অনেকটা কম ছিল। কিন্তু এই বছর মানুষের মধ্যে একটা গাছাড়া ভাব দেখা যাচ্ছে। মাস্ক পরা, সেনিটাইজ করা, দূরত্ববিধি মেনে না চলা এবারের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
এই সময় ডিজিটাল:কোভিড আক্রান্ত হয়ে হোম আইসোলেশনে আছেন? হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হলে কী করতে হবে?
ডা: অনিরুদ্ধ কর: শ্বাসকষ্ট হলে কিছু ব্রিদিং এক্সারসাইজ করতে হবে। এটি করেও যদি দেখা যায় অক্সিজেনের মাত্রা ৯০-এর কম চলে এসেছে সে ক্ষেত্রে একটা অক্সিজেনের সিলিন্ডার একটা অবশ্যই বাড়িতে রাখা উচিত, যাতে অক্সিজেনের ঘাটতি না হয় তা তাঁরা প্রতিরোধ করতে পারবেন। এখন সহজেই অক্সিজেন পাওয়া যাচ্ছে না, সেক্ষেত্রে সকলেরই একটু এক্সারসাইজ করা উচিত। যোগা, মেডিটেশন এগুলি করলে আমাদের অনেকটাই অক্সিজেনের ঘাটতি মিটিয়ে দিতে পারবে। যাঁরা কোমরবিটির রোগী অর্থাৎ যাদের সুগার বা পেশার থাকলে সেক্ষেত্রে অগ্রিম সতর্কতা নেওয়া দরকার।
এই সময় ডিজিটাল: কিন্তু ফুসফুস যদি কমজোর হয়, তবে কৃত্রিম অক্সিজেন টানে কী করে? তাতে সাহায্যই বা হয় কেন?
ডা: অনিরুদ্ধ কর: করোনা (Coronavirus) রোগীদের ক্ষেত্রে অধিকাংশের ফুসফুসকে কমজোর করে দিচ্ছে ভাইরাস। অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিকের কাছাকাছি রাখতে চলছে চেষ্টা। তাই কৃত্রিম অক্সিজেনের প্রয়োজন বাড়ছে। কৃত্রিম অক্সিজেন দেওয়া হয় সি-প্যাপ বা বাই প্যাপের মাধ্যেমে। বাড়িতে অবশ্য এটি সম্ভব নয়, এক্ষেত্রে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে। যদি কারোর ফুসফুসের কোনও সমস্যা থাকে যেমন-COPD বা ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা থাকে তাহলে বাড়িতে একটা বাইপ্যাপ মেশিন রাখা দরকার। বাই প্যাপের মাধ্যেমে আমরা অক্সিজেনের মাত্রা বাড়িয়ে তুলি।
এই সময় ডিজিটাল:করোনা পরিস্থিতিতে শিশুরা ও বয়স্করা কতটা নিরাপদ?
ডা: অনিরুদ্ধ কর: এই যুদ্ধের বর্ম মাস্ক। এর পাশাপাশি হাইজিন মেনটেইন করতে হবে। শিশুদের আমরা নিজেরাই কন্ট্রোল করতে পারি। সামাজিক দূরত্ববিধি বজায় রাখা, বাইরে যতটা সম্ভব কম যাওয়া, মাস্ক ব্যবহার করা। প্রতিদিন যে মাস্ক পরা হবে সেটি চেঞ্জ করতে হবে। সর্দি-কাশি থাকলে টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং সেটি যথা স্থানে ফেলে দিতে হবে। বয়স্কদের প্রতিদিন কাচা জামাকাপড় পরতে হবে। পরে ডেটল জলে ধুয়ে চিকিৎসা পরিভাষায় ডিসইনফেক্ট করতে হবে।
এই সময় ডিজিটাল: ধূমপান করলে কোভিডে (Coronavirus) সংক্রমণের আশঙ্কা এবং তার ভয়াবহতা বেশি বলেই মনে করছে WHO, কেমন এমনটা মনে করছে WHO?
ডা: অনিরুদ্ধ কর: ধূমপায়ীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং ফুসফুসের দুরাবস্থা। এর আগে দেখা গিয়েছে যাঁরা ধূমপান করেন, তাঁদের শরীরে করোনার প্রভাব মারাত্মক। কারণ করোনা ভাইরাসের কবলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফুসফুস। আমাদের ফুসফুসের মধ্যে অ্যালভিওলি থাকে, অ্যালভিওলির মধ্যে থেকে যদি ধূমপান করি তাহলে সংক্রমণ তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে যেতে পারে। এর ফলে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাচ্ছে। করোনা লাং-এর মধ্যে দিয়ে ফুসফুসে সরাসরি আক্রমণ করে, প্রথমে ব্রংকিয়াসকে অ্যাটাক করে তারপর আস্তে আস্তে ফুসফুসে চলে যায়। ধূমপানের পাশাপাশি মদ্যপান করাও উচিত নয়। সপ্তাহে একদিন হয়তো করা যেতে পারে, তবে নিয়মিত একেবারেই নয়।
এই সময় ডিজিটাল: কাপড়ের মাস্ক না সার্জিক্যাল মাস্ক, সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে কোনটা বেশি ভালো?
ডা: অনিরুদ্ধ কর: আমার মতে সার্জিক্যাল মাস্ক প্রথম পছন্দের। তার সঙ্গে যদি দু’টো করে মাস্ক ব্যবহার করা হয়, সেটি আরও ভালো। মাস্ক পরার উদ্দেশ্য হল, শরীরে ভাইরাসটা যাতে না প্রবেশ করতে পারে। অনেকেই মাস্ক সঠিকভাবে ব্যবহার করছেন না। সেগুলো খেয়াল রাখতে হবে। মাস্ক যেন নাক এবং মুখ দুটোকেই ঢেকে রাখে। চোখের জন্য চশমা অবশ্যই ব্যবহার করুন।
সার্জিক্যাল মাস্কই ভালো। কাপড়ের মাস্কও ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে, N95 একেবারেই নয়। এখন দেখা যাচ্ছে N95 ১০০ শতাংশ জীবাণু রোধ করতে পারে না।
এই সময় ডিজিটাল: অতিমারির কারণ এখন বাড়ি থেকে বেরোনোর পরিমাণ কমে গিয়েছে, এই অবস্থায় বাড়ির ভিতরের পরিবেশে দূষণের মাত্রা বাড়ছে। কারণ দীর্ঘক্ষণ একই ঘরে কাটানো তাই ঘরের বাতাস যাতে দূষিত না হয় তার জন্য কী করা উচিত?
ডা: অনিরুদ্ধ কর: বদ্ধঘর একেবারেই নয়। যতটা সম্ভব AC কম ব্যবহার করা উচিত। ঘরের জানালা-দরজা খুলে রাখতে হবে। ঘরে যেন পর্যাপ্ত সূর্যের আলো প্রবেশ করতে পারে। যদি কোনও ব্যক্তি সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে হোম আইসোলেশনে থাকেন তবে তাঁর ঘরের জানালা খুলে রাখা উচিত। মনে রাখতে হবে আক্রান্ত ব্যক্তি যেন বোর ফিল না করেন। আমরা স্বাস্থ্যকর্মীরা তাঁদের সঙ্গে বেশি করে যোগযোগ রাখার চেষ্টা করি। এতে রোগীর পক্ষে ভালো, দ্রুত সেরে উঠতে পারবেন। যত কম ঘুম তত কিন্তু সমস্যা বেশি। তাই ঘুম আর ভেন্টিলেশন দু’টোই দরকার।
COVID ভ্যাকসিন নিয়ে তৈরি গুজবে কি আপনিও বিভ্রান্ত? জানুন আসল তথ্য…
এই সময় ডিজিটাল: কোভ্যাকসিন না কোভিশিল্ড কোনটা ভালো?
ডা: অনিরুদ্ধ কর: আমার মতে দু’টোই ভালো। দু’টোই দেওয়া যেতে পারে।
এই সময় ডিজিটাল: টিকা নিলে কতদিন পরে রক্ত দেওয়া যায়?
ডা: অনিরুদ্ধ কর: মাস খানেক বা মাস দু’য়েকের মধ্যে রক্ত দেওয়া যেতে পারে। এর মধ্যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে যায় এর পর রক্ত দেওয়া যেতে পারে।
এই সময় ডিজিটাল: থাইরয়েডের ওষুধ খেলে কিংবা ডায়াবিটিস ও অ্যালার্জির সমস্যা থাকলেও কি ভ্যাকসিন নেওয়া যায়?
ডা: অনিরুদ্ধ কর: As such নয় তেমন কোনও সমস্যা নেই এখন। যে কোনও মানুষই নিতে পারেন। যদি না তাঁদের এক্সটারনাল কোনও সমস্যা থাকে। যেমন COPD বা ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমানা থাকলে একটু সময় নিয়ে দেওয়া উচিত।
করোনা ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা মানুষের শরীরে কত দিন টিকে থাকবে?
ডা: অনিরুদ্ধ কর: এখনও কোনও নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। এমনও হয়েছে ভ্যাকসিনের দু’টো ডোজ নেওয়ার পরও তাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন। তবে, সেটা খুব কম মানুষের ক্ষেত্রে হয়েছে। বরং যদি কেউ ভ্যাকসিন না নিয়ে আক্রান্ত হন, তাহলে সংক্রমণ তাঁর ফুসফুসে গিয়ে বেশি ক্ষতি করতে পারে। টিকা নেওয়া পর আক্রান্ত হলে জটিল কোনও সমস্যা হবে না।
এখন আমাদের ভ্যাকসিনের দুটো ডোজ নিতে হচ্ছে, পরে হয়তো একটা ভ্যাকসিনেই সংক্রমণ রোধ করা যাবে।
এই সময় ডিজিটাল: হোমআইসোলশনে সাবধনতা কী হতে পারে?
ডা: অনিরুদ্ধ কর: একটা আলাদা ঘরে রাখা দরকার, যাতে আর কারোর মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে না পারে। পর্যাপ্ত আলো-বাতাস আছে এমন ঘরে থাকুন। দরকার হলে এসি চালাবেন। অন্য সময় ঘরে বাতাস চলাচল করতে দিন। ঘরে বাতাস বাহিত হলে রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা কমে।
এ ছাড়া একটু করে স্টিম নিন, দুধের সঙ্গে একটু হলুদ দিয়ে পান করতে হবে। গরম জল সেবন করুন। রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যেতে পারে। হালকা জ্বর-সর্দি-কাশি হলে প্যারাসিটামল, ভিটামিনের ডোজ নেওয়া যেতে পারে। প্রথম সাতদিন যদি বাড়িবাড়ি না হয় তবে, বাড়ি থেকেই চিকিৎসা করা যেতে পারে। রোগীতে সময় সময় খাওয়া উচিত। দিনে একটা করে ডিম খাওয়া যায়। ভেজটেরিয়ান হলে বেশি করে দুধ, শাকসবজি, সাইট্রাস ফল ফল খাওয়া দরকার।
সুত্র-এই সময় ডিজিটাল, করোনায় আক্রান্ত রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য কপি করা হলো।