রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৪ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
শাহরিয়ার মিল্টন,শেরপুর:
শেরপুরের গারো পাহাড়ে প্রথমবারের মতো চাষ হচ্ছে কফি ও চকোলেট তৈরির কাঁচামাল কোকোয়া ফল। এই ফলটি মূলত: দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন উপত্যকার উদ্ভিদ। কোকো বা কোকোয়া মধ্য আমেরিকার আরো কয়েকটি দেশেও চাষ হচ্ছে। এছাড়া আফ্রিকার আইভরি কোস্ট, ঘানা, নাইজেরিয়া ও ক্যামেরুনেও এর আবাদ হচ্ছে। কোকোয়ার বোটানিক্যাল নাম থিওব্রোমা ক্যাকাও। পাকা ফলের ভেতরে পেঁপের মতো ফাঁকা আর কয়েকটি সারিতে ছোট ছোট বীজ থাকে। একটি গাছে শতাধিক ফল ধরে। যা খেতে অত্যন্ত মিষ্টি। এটি চিরসবুজ গাছ যা প্রায় তিন থেকে চার মিটার লম্বা এবং গাছটি দেখতে ছড়িয়ে থাকা ছাউনির মতো। এটিতে চকচকে পাতা রয়েছে যার সঙ্গে হলুদ-সাদা শিরা এবং ছোট, পুরু, হলুদ-সাদা ফুলের গুচ্ছ রয়েছে। কোকোয়া গাছ, দেখতে ঝোপাল, ৭ থেকে ৮ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। কাÐ ও ডালপালার গায়ে গুচ্ছবদ্ধ গোলাপি হলুদ রঙের ফুল ধরে। গাছের বয়স সাধারণত ৪ বছর হলে ফল ধরতে শুরু করে। ফুল থেকে পরিণত ফল হতে সময় লাগে প্রায় ৬ মাস। ফলের রং বাদামি, বাইরের আবরণ চামড়ার মতো শক্ত।
ঝিনাইগাতী উপজেলার বন্দবাটপাড় এলাকার কৃষক ও কোকোয়া ফল বাগান মালিক জালাল উদ্দীন বলেন, গুচ্ছ গুচ্ছ ফুল ফোটে কোকোয়া গাছের ডালে। ফুলগুলো আকারে ছোট, হালকা গোলাপি অথবা সাদা রঙের হয়। পাকা ফলের ভেতরে পেঁপের মতো ফাঁকা আর কয়েকটি সারিতে ছোট ছোট বীজ থাকে। একটি গাছে শতাধিক ফল ধরে। প্রতিটি ফলে ৩০ থেকে ৪০টির মতো বীজ থাকে। যা খেতে মিষ্টি।
জালাল উদ্দীন দীর্ঘ ১০ বছর মালয়েশিয়ায় প্রবাস জীবন-যাপন করে দেশে ফিরে আসার সময় সঙ্গে নিয়ে আসেন কোকোয়া বীজ। ওই বীজ থেকে চারা করে বাগান শুরু করেন তিনি। বর্তমানে এই বাগানে ফল এসেছে। একেকটি গাছে শতাধিক ফল আসে। বর্তমানে তার বাগানে প্রায় হাজারখানেক চারা রয়েছে। মালয়েশিয়া থাকাকালীন এই বীজ দিয়ে চকলেট, কফি, কেক, বিষ্কুট, আইসক্রিম তৈরি হয়। এমন একটি কারখানায় তিনি চাকরিও করেছেন। কোকোয়া বীজের প্রসেসিং সম্পর্কে জালাল উদ্দীন বলেন, পাকলে ফলের রঙ হয় লাল আবার কোনোটা হয় গাঢ় হলুদ। ফলের ভেতরের বীজ বের করে শুকাতে হয়। তারপর এটিকে গুঁড়া করতে হয়। এই থেকেই চকোলেট তৈরি হয়। বছরে ২-৩ বার ফল সংগ্রহ করতে হয়। কোকোয়া গাছ শীতল ও গরম হাওয়া কোনোটাই সহ্য করতে পারে না। তাই হালকা রোদ পড়ে এমন ছায়াযুক্ত জায়গায় ভালো হয়। তিনি আরও বলেন, কৃষি বিভাগ ও সরকারিভাবে এই বীজের বাজারজাত করতে পারলে কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক সম্ভাবনাময় খাত হবে এটি।
পুষ্টিবিদ খোকন আহমেদ বাদল বলেন, ‘কোকোয়ার বীজে আছে থিওব্রোমাইন, ক্যাফেন ও রঙিন বস্তু। সাবির্কভাবে বীজ উত্তেজক ও মূত্র রোগে বেশ উপকারী। থিওব্রোমাইন স্নায়বিক রোগের টনিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। হৃদজনিত রোগে এনজাইমা পেক্টোরিসর ব্যথা উপশম করতে পারে চকোলেটের ক্বাথ। এছাড়া চকোলেটের ফ্ল্যাভানল সমৃদ্ধ কোকোয়া মিল্ক ক্লান্তি দূর করতে, ইনসোমনিয়া প্রতিরোধে এমনকি শরীরের চামড়া টানটান রাখে, যা বাধর্ক্য দূর করতেও কাজ করে।বাগানে আসা শামসউদ্দিন বলেন, ‘আমি ফলটি খেয়েছি। এটি অত্যন্ত মিষ্টি এবং কাঁঠালের চেয়েও মিষ্টি। আমার বাচ্চাদের জন্য কিছু ফল কিনতে এসেছি।
ভয়েস অব ঝিনাইগাতীর আহŸায়ক জাহিদুল হক মনির বলেন, জালাল উদ্দীনের এই বাগান সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে পাহাড়ি এই অঞ্চলে অনেকেই কোকোয়া ফল চাষে আগ্রহী হবেন। এতে এই জনপদের মানুষের আর্থিকভাবে ব্যাপক উন্নয়ন হবে।ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন দিলদার বলেন, কোকোয়া বিদেশি ফল হলেও গত ১০-১২ বছর ধরে আমাদের দেশে চাষ হচ্ছে। এটি ছায়াযুক্ত জায়গাতেও হয়। কোকোয়ার বাগানে মিশ্র ফসল হিসেবে আদা, হলুদ ভালো ফলন হয়। এই ফল চাষে ও চারা উৎপাদনে জামাল উদ্দীনকে নিয়মিত পরামর্শ সেবা দেয়া হচ্ছে।জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সুকল্প দাস বলেন, আমরা দেশীয় ফলের পাশাপাশি লাভবান হওয়া যায় এমন বিদেশি ফল চাষেও কৃষকদের উদ্ভুদ্ধ করছি। কৃষি বিভাগ সব সময় তাদের পাশে রয়েছে।