বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩০ অপরাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
প্রবীর মৈত্র, প্রাক্তন কাউন্সিলর, প্যারামাটা সিটি কাউন্সিলার
কালিকা পুরান ও কৃত্তিবাস রামায়ন অনুযায়ী স্বয়ং রাম দুর্গার বোধন ও পূজা করেছিলেন।
একসময় বাঙালীর শ্রেষ্ঠ উৎসব এই দুর্গাপূজা শুধুমাত্র অবস্থাপনড়ব বা জমিদার বাড়ীগুলোতেই সীমাবদ্ধছিল। কিন্তু পরবর্তিকালে মূলত: বৃটিশ শাসনামলে দুর্গাপূজা সার্বজনীন হয়। সেই সময় থেকে দুর্গাপূজা উৎসবের চেহারা পেতে শুরু করে। তথ্য অনুযায়ী বারোয়ারি দুর্গাপূজার সূচনা ১৯৭০ সালে গুপ্তপাড়ায় (ঢাবুরিয়া, দক্ষিণ কলকাতা), অনেক অনেক পরে কলকাতায় ১৯১০ সালে প্র ম বারোয়ারি দুর্গাপূজার সূচনা হয়েছিল। তারপর তা ছড়িয়ে পড়ে সারা বাংলায়।বর্তমানে দুর্গাপূজা শুধুমাত্র বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ বা ভারতবর্ষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়-দেশের সীমানা,অতিμম করে প্রায় সারা পৃথিবীতেই ছড়িয়ে পড়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা
পেরিয়ে এই অষ্ট্রেলিয়া মাহাদেশেও বিপূল সমারোহে এই পূজা হয়। দুর্গাপূজা সাধরণত: বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী আশ্বিন মাসে বা ইংরেজী সেপ্টেম্বর/অক্টোবর মাসে উদযাপিত হয়ে থাকে। এই উৎসব ১০ দিন ব্যাপি তবে শেষ পাঁচদিন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।বাংলাদেশ বা ভারতে বিভিনড়ব মন্দির ছাড়াও অস্থায়ী প্যান্ডেল করে এই পূজা করা হয়। অষ্ট্রেলিয়াতে সাধারণত: বিভিনড়ব কাউন্সিলের কমিউনিটি হল বা স্কুল হলগুলোতে এই পূজা আয়োজিত হয়। দেশে পূজার এক মাস বা তারো অধিক আগে থেকে পূজো পূজো ভাব শুরু হয়। বাজারগুলো সাজে পূজার বিভিনড়ব পোষাক ও সরঞ্জাম নিয়ে। অনেকে কুমার বাড়ীতে দেখতে যায় তাদের মুর্তিগুলো বানানোর সময়। সারাদেশে ব্যবসা বাণিজ্য, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়। বাড়ীতে বাড়ীতে পরিস্কার পরিচ্ছনড়বতার জোয়ার আসে, সবার নতুন পোষাক হয়।এই দুর্গাপূজার এক বিশাল মাহাত্ম্য আছে-মা দূর্গা দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন করতে প্রতি বছর পৃথিবীতে আসেন। দুর্গাপূজাকে বলা হয় পৃথিবীর সচেয়ে বড় ঙঁঃফড়ড়ৎ ঋবংঃরাধষ এবং এই উৎসব Outdoor FestivalGes GB DrmeUNESCOGiIntangible Cultural Heritage List এও স্থান পেয়েছে।অনেক বছর থেকে দুর্গাপূজা উদযাপিত হয়ে আসছে সিডনিতে। তবে বাংলাদেশ থেকে আগত বাঙালীরা সম্ভবত ১৯৯৫ সালে সিডনিতে দুর্গাপূজা উদযাপন করে। সংগঠনটির নাম ছিল বাংলাদেশ পূজা এ্যাসোসিয়েশন সংক্ষেপে বি.পি.এ যা এখনো আছে। বর্তমানে প্রায় ১৫টি দুর্গাপূজা হয় সারা সিডনিতে। কমিউনিটি অনেক বড় হয়েছে এবং বিভিনড়ব এলাকায় ছড়িয়ে। তাই কােিলর প্রয়োজনেই এমনটা হয়েছে।আগে বলেছি প্রায় দশদিনব্যাপি এই দুর্গোৎসব চলে। তার প্র মদিন আমরা পালন করি মহালয়া। কথিত আছে দেবী দুর্গা মহিষাসুর বধ করার পর মহালয়ার দিন কৈলাস পর্বত হতে পৃথিবীর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন
তাঁর পতি শিব ও সন্তানদেরকে সাথে নিয়ে। ‘মহালয়া’ বাঙালীদের এক বিশাল উৎসব। ১৯৩১ সনে মহালয়া প্র ম প্রচারিত হয় আকাশবানী থেকে। অনুষ্ঠানটির মূল কণ্ঠই ছিলো শ্রী বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের। উনি মূল চন্দ্রী পাঠ ও বর্ণনা করেন এবং বাংলার অন্যতম সব শিল্পীগণ পরিবেশন করেন দেবীর বন্দনা সংগীতমালা। এখানেও মহালয়া অনুষ্ঠিত হয়। এখন আসি একটু অন্য প্রেক্ষাপটে। বেশ অনেক বছর ধরে বাংলাদেশে পূজা এলেই বেশ আতঙ্কে থাকতে হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের। পূজার আগেই শুরু হয় মূর্তি ভাঙ্গন, মন্দির ভাংচুর ইত্যাদি ঘটনা। একটা গোষ্ঠী চায় বাংলাদেশকে একটি ধর্মের মানুষের দেশ বানাতে। গত বছর দুর্গাপূজার সময় একটি সাজানো মিথ্যা ঘটনা ঘটিয়ে প্রায় সারা বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন করা হয়, অনেক হিন্দুকে খুন করা হয়। এর প্রতিবাদে দেশে ও সারা পৃথিবীতে হিন্দুরা প্রতিবাদ করে। কিন্তু এখনো অপরাধীদের বিচার হয় নি কারো শাস্তি হয় নি। ফলে এবছরও বিভিনড়ব জায়গায় মুর্তি ভাঙ্গা শুরু হয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা আতংকে আছে আবার কি ঘটে এই বছরে! উৎসব একটা দেশের উনড়বতিতে অনেক অনেক প্রভাব রাখে। তাই উনড়বত দেশগুলিতে প্রতিবছরই অনেক নূতন উৎসবের প্রবর্তন করা হয় যেমন মা দিবস, বাবা দিবস ছাড়াও অনেক দিবস। যা হয়তো আগে ছিল না। এর মাধ্যমে কেনাকাটা বাড়ে কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উনড়বতি হয়। পশ্চিমা দেশগুলোতে μিসমাস, ইষ্টার উৎসব ছাড়াও দীপাবলি, ঈযরহবংব ঘবি ণবধৎ, ঈদ ইত্যাদি নানান উৎসবকে নানান উৎসাহ দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী, প্রিমিয়ার সহ অনেক এম.পি শুভেচ্ছা বার্তা জানান। বাজারগুলো নতুন সাজ সজ্জায় মেতে ওঠে। সবাই উপকৃত হয় অনেকের কর্মসংস্থান হয়, অর্থনীতির উনড়বতি হয়। সবাই দেশটিকে নিজের ভাবতে শুরু করে।আশাকরি এগুলো খুব ভালোভাবে পর্যালোচনা করবেন আমাদের জন্ম ভূমির নেতা নেত্রীগণ। যে দেশে সংখ্যালঘুরা খুশী থাকে সেই দেশই বেশী সুখী।
সিডনী, অষ্ট্রেলিয়া