বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৩ অপরাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
এম আর রাসেল হোসাইন ঈশ্বরদী, পাবনাঃ
তিন দিন ধরে কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ থাকার কারনে সেবা না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সলিমপুর মাথালপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের দায়িত্বরত ব্যাক্তিদের উপরে বৃহস্পতিবার ১১ (আগষ্ট)সময় তখন দুপুর ১২টা ৫ মিনিট।কিন্ত দেখা যায়, কমিউনিটি ক্লিনিকের দরজায় তালা ঝুলছে।
সেবাগ্রহীতারা দরজায় তালা মাতা দেখে ফিরে চলে যাচ্ছেন। পায়ে হেঁটে দু-তিন গ্রাম পাড়ি দিয়ে এসে সেবা না পেয়ে বাসায় চলে যাচ্ছেন। তাদের চোখেমুখে রাগের ছাপ বেশ লক্ষ করা যাচ্ছে।
কমিউনিটি ক্লিনিকের দেওয়ালে স্পষ্ট অক্ষরে লেখা আছে ‘শুক্রবার ব্যতীত সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ক্লিনিক খোলা থাকে’। কিন্তু দুপুর ১২টায় ক্লিনিক বন্ধ দেখে অনেকেই হতভম্ব হয়ে ফিরে যান।
কমিউনিটি ক্লিনিকের পাশেই রয়েছে মাথালপাড়া জামে মসজিদ। এ মসজিদের ইমাম মো. ওলিউল্লাহ জানান, তিনদিন ধরে ক্লিনিকটি বন্ধ। চিকিৎসা সেবা নিতে এসে সবাই ফিরে যাচ্ছেন এটা দেখেছি । বুধবার (১০ আগস্ট) টিকা দিতে কিছু সময়ের জন্য ক্লিনিক খোলা হয়। তবে এ সময় অন্য কোনো চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়নি। চিকিৎসা নিতে যারা এসেছিলেন তারা ফিরে গেছেন। ক্লিনিকের সামনের বাড়ির গৃহবধূ বেবী বেগম জানান, হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার তন্নি শারমিন ছুটিতে থাকায় তিনদিন ধরে এখানে চিকিৎসাসেবা বন্ধ রয়েছে। তার পরিবর্তে অন্য কোনো সিএইচসিপি এখানে যোগদান করেননি৷ ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা চরমিরকামারী গ্রামের আক্তার বানু (৭০) বলেন, ‘এত দূর থেকে হেঁটে ক্লিনিকে এলাম, এখন দেখছি বন্ধ। এখানে এলে বিনা খরচে চিকিৎসা পাওয়া যায়। ওষুধপত্রও দেয়। কাছে তো টাকাও নেই যে কিনে খাব কার কাছে যাবো বুঝতে পারছি না। একই এলাকার আছিয়া বেগম বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে শরীরটা খারাপ। ঠান্ডা-জ্বরে ভুগছি। গরিব মানুষ। চিকিৎসা করার টাকা নেই। তাই বাধ্য হয়ে এখানে এসেছি। তবে বন্ধ দেখে চলে যাচ্ছি। বাজার থেকে যে অসুধ কিনে খাব সেই সামর্থ টুকু নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) তন্নি শারমিন মাতৃকালীন ছুটিতে থাকায় এখানে তিনদিন ধরে স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ রয়েছে। আর এ কারনেই সেখানে তালা ঝুলছে। খোলেনি ক্লিনিকের দরজা ।
সিএইচসিপি তন্নি শারমিনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘৮ আগস্ট থেকে মাতৃকালীন ছুটিতে রয়েছি। তিনদিন ক্লিনিকে যাওয়া হয়নি। আমি জানতে পেরেছি এখানে পার্শ্ববর্তী ক্লিনিকের সিএইচসিপি সাইফুল ইসলাম শিশিরকে সপ্তাহে তিনদিন চিকিৎসা সেবা দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি এখনো যোগদান করেননি।’
সাইফুল ইসলাম শিশিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি সলিমপুর ইউনিয়নের মিরকামারী কমিউনিটি ক্লিনিকে সিএইচসিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আমাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে মৌখিকভাবে সপ্তাহে তিনদিন মাথালপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত লিখিতভাবে কোনো নির্দেশনাপত্র দেওয়া হয়নি। লিখিত পত্র পাওয়ার পর আমি যোগদান করবো। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা এ এফ এম আসমা খানম জানান, ঈশ্বরদীতে ২৮টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। প্রত্যেকটি ক্লিনিকের জন্য একজন করে সিএইচসিপি রয়েছেন। অতিরিক্ত কোনো সিএইচসিপি নেই। তিনি বলেন, কোনো ক্লিনিকের সিএইচসিপি ছুটিতে থাকলে পার্শ্ববর্তী কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপিকে সেখানে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। মাথালপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি মাতৃকালীন ছুটিতে রয়েছেন। তার স্থলে মিরকামারী কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি সাইফুল ইসলাম শিশিরকে সপ্তাহে তিনদিন মাথালপাড়া ক্লিনিকে স্বাস্থ্যসেবা দিতে নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে। তিনি এখনো কেন যোগদান করেননি জানতে চাইলে আসমা খানম বলেন, ‘তিনি যে ক্লিনিকে রয়েছেন সেখানে অফিসিয়াল কাগজপত্র ঠিকঠাক করে আসতে হবে। সেজন্য তিনি এখনো যোগদান করেননি। তাকে দ্রুত যোগদানের জন্য আবারও নির্দেশনা দেওয়া হবে।