মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪৭ পূর্বাহ্ন

News Headline :
কুষ্টিয়ার নিখোজ ২ এএসআই এর লাশ পদ্মা নদী থেকে উদ্ধার এবার প্রকাশ্যে এলেন ইবি শিবিরের সভাপতি ও সেক্রেটারি গোদাগাড়ীতে বিপুল পরিমান গাঁজা-সহ গ্রেফতার মাদক কারবারী ডালিম আমরণ অনশনে রাবি আইন অনুষদের শিক্ষার্থীরা পুলিশ কর্মকর্তা বিজয়-উৎপলকে ধরলেই মিলবে কাজেম হত্যার উত্তর: দাবি চিকিৎসকদের সিরাজগঞ্জে ব্যবসায়ী হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে  বিক্ষোভ ও মানববন্ধন  দেশদ্রোহী খুনি হাসিনাকে দেশে এনে বিচার করতে হবে দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে–আহসান হাবিব লিংকন রংপুরে জমি লিখে না দেয়া মাকে বেধড়ক পেঠালো ছেলে ও ছেলের বউরা শ্রীবরদীতে যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এতিম ও অসহায়দের মাঝে খাবার বিতরণ মান্দায় মসজিদ উন্নয়ন প্রকল্পের সাড়ে ৩শো গাছ উপড়ে ও ভেঙ্গে ফেলার অভিযোগ

আবার কাজে ফিরতে হলো

Reading Time: 2 minutes

নিজস্ব প্রতিবেদক:

স্কুলের পড়া ছেড়ে দিয়ে ছেলেটি কাজ নিয়েছিল কামরাঙ্গীরচরের একটি আতর কারখানায়। স্থানীয় একটি বেসরকারি সংগঠনের প্রচেষ্টায় বছর দুই আগে ছেলেটিকে কাজ থেকে সরিয়ে সেখানকার সিদ্দিক মিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়। করোনার সংক্রমণে গত বছরের মার্চে বন্ধ হয়ে যায় স্কুল। করোনার ধাক্কায় শিশুটির অভাবী পরিবারে আর্থিক সংকট আরও তীব্র হয়। সংসারের অভাব সামাল দেওয়ার ভার পড়ে ১২ বছরের শিশুটির ঘাড়েও। সে এখন কামরাঙ্গীর চরের নুরবাগ এলাকায় কাজী প্লাস্টিক কারখানায় কাজ করে।

কী কাজ কর? জানতে চাইলে শিশুটি প্রথম আলোকে বলে, ‘প্লাস্টিকের খেলনা ফিটিং দিই।’ এর আগে কী কাজ করতে? ‘আতরের বয়ামের মুখ ফিটিং দিতাম।’ শিশুটি জানাল, তিন ভাইবোনের মধ্যে সে ছোট। বাবা রিকশাচালক। ১০০টি খেলনা ‘ফিটিং দিলে’ সপ্তাহে সে পায় ৮০০ টাকা। সকাল নয়টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত কারখানায় কাজ করে।

শ্রম থেকে সরিয়ে স্কুলে ভর্তি করা অনেক দরিদ্র শিশুকে করোনাকাল আবারও কাজে ঠেলে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সরকারি–বেসরকারি ব্যক্তিরা। দারিদ্র্যই এর কারণ বলে মনে করছেন তাঁরা।

বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) ৩৩ হাজার শিশু শ্রমিকের ওপর জরিপ করে জানিয়েছে, কাজ ছেড়ে স্কুলে ভর্তি হয়েছিল, এমন আড়াই হাজার শিশু করোনাকালে পরিবারকে সহায়তা করতে আবার কাজে ফিরে গেছে। আগের চেয়ে কম পারিশ্রমিকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত হয়েছে ২ হাজার ৪০০ শিশু। নতুন করে ৭ হাজার ৮০০ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত হয়েছে। এমজেএফ ‘শ্রমে নিয়োজিত শিশুদের সুরক্ষা কর্মসূচি (পিডব্লিউসি)’– এর আওতায় গত বছরের এপ্রিল থেকে এ বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ওই জরিপটি পরিচালনা করে। এমজেএফের ১১টি অংশীদারি সংগঠন ওই কর্মসূচির আওতায় তালিকাভুক্ত শিশুদের ওপর ঢাকা (কামরাঙ্গীরচর ও কেরানীগঞ্জ), কুমিল্লা, বরিশাল, যশোর ও খুলনায় জরিপটি পরিচালনা করে।

করোনাকালের এমন পরিস্থিতির মধ্যে আজ ১২ জুন পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস। এবারের জাতীয় প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘মুজিব বর্ষের আহ্বান, শিশুশ্রমের অবসান’।

করোনাকালে আর্থিক সংকট থেকে দরিদ্র পরিবারের শিশুরা নতুন করে শ্রমে যুক্ত হয়েছে কি না, জানতে চাইলে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব কে এম আবদুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এমন মনে করি না। কারণ, করোনাকালে সরকার যথেষ্ট ত্রাণ তৎপরতা চালাচ্ছে ও আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। স্কুল বন্ধ থাকা এবং করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভীত হয়ে দরিদ্র পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের কাজে ঠেলে দিতে পারে। তবে তথ্য–উপাত্ত সামনে নিয়ে এ ব্যাপারে কথা বলা উচিত। আমি মনে করি, স্কুল খোলার সঙ্গে সঙ্গেই এই শিশুরা আবার পড়াশোনায় ফিরে যাবে।’

মানুষের জন্য ফাউন্ডশনের শিশু সুরক্ষা বিভাগের সমন্বয়কারী রাফেজা শাহীন প্রথম আলোকে বলেন, কোভিড পরিস্থিতিতে মানুষ উদ্‌ভ্রান্ত হয়ে কাজ খুঁজছে। অনেক শিশুকে কাজ থেকে সরিয়ে স্কুলে ভর্তি করা হয়েছিল। কিন্তু সেই অর্জনটা ধরে রাখা গেল না। অনেক শিশুর জীবনযাপনের প্রক্রিয়া আগের চেয়েও খারাপ হয়েছে।

শিশুশ্রম কমাতে শর্তযুক্ত প্রশিক্ষণ শুরু হওয়া উচিত বলে মনে করেন শিশুশ্রম নিরসনে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা খসড়া কমিটির আহ্বায়ক এবং বেসরকারি সংস্থা ইনসিডিন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মাসুদ আলী। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, সর্বশেষ শিশুশ্রম জরিপের সঙ্গে আগের জরিপের তুলনা করলে দেখা যায়, শিশুশ্রম অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। তবে সে তুলনায় ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম কমার হার কম। মাত্র ১০ হাজার শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম থেকে সরানো গেছে। এ থেকে বোঝা যায়, সাধারণভাবে শিশুশ্রম মোকাবিলা করার উদ্যোগগুলো ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমে দ্রুত পৌঁছাচ্ছে না। তাই দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য এমন শর্ত দিতে হবে যে শিশুকে শ্রমে না দিয়ে পড়ালেখা করালেই তারা শিশুটির জন্য আর্থিক সহায়তা পাবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Design & Developed BY Hostitbd.Com