মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ০১:০৫ অপরাহ্ন
Reading Time: 3 minutes
হারুন উর রশিদ সোহেল, রংপুর:
নানা জল্পনা কল্পনা শেষে ৫ নভেম্বর শনিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রংপুর জেলা যুবলীগের সম্মেলন। দীর্ঘ দিন পর সম্মেলন কে ঘিরে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে যুবলীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। সেই সঙ্গে সম্মেলনে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পদকে ঘিরে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে। কমিটিতে স্থান পেতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ৪২ নেতা দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছেন। এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় দফতরে জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন পদপ্রত্যাশীরা।
গত বৃহস্পতিবার সম্মেলন সফল করতে রংপুর জিল স্কুল মাঠে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেছে যুবলীগ। এতে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম মো: আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস মতিউর রহমান বাদশা, সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল পারভেজ, সহ-সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলাম মাসুদ, প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দী, কেন্দ্রীয় সদস্য রবিউল ইসলাম রেজভীসহ কেন্দ্রীয় ও রংপুর জেলা-মহানগর যুবলীগের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তারা সম্মেলন সফল করতে সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শনিবার সম্মেলনে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন এমপি ও শাহজাহান খান এমপি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, কোষাধ্যক্ষ এইচএন আশিকুর রহমান এমপি, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল হোসেন খান নিখিল, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য এ্যাড. হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়াসহ কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ ও যুবলীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। এদিকে রংপুর জেলায় যুবলীগের সম্মেলন ঘিরে তৎপরতা বেড়েছে পদপ্রত্যাশী বর্তমান যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃবৃন্দের। শীর্ষ পদ প্রত্যাশীরা ইতোমধ্যেই যুবলীগের কেন্দ্রীয় ও বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্তসহ রংপুরে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদের নেতাদের কাছে ধারণা দিচ্ছেন। বিভিন্নভাবে তদবির- লবিংয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। একারণে সব মিলিয়ে রংপুর যুবলীগের রাজনীতিতে চাঙ্গাভাব বিরাজ করছে। নগরীসহ জেলা জুড়ে পদ প্রত্যাশীদের বিলবোর্ড, ব্যানার, পোস্টারে ছেয়ে গেছে। তবে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সভাপতি-সম্পাদক পদে বর্তমান জেলা যুবলীগের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও ছাত্রলীগের সাবেক কয়েক নেতা আলোচনায় রয়েছে। এবারের কমিটিতে চমক আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে বির্তকিত কাউকেই পদ দেয়া হবে না বলে কেন্দ্রীয় দপ্তর জানিয়েছে। যুবলীগের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা জানান, বিগত দিনে তার ত্যাগ রয়েছে। বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের জ্বালাও পোড়াও আন্দোলনের বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর আর্দশ ও দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের প্রতি অবিচল। দলের দুঃসময়ের রাজপথের রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রাম ও দলীয় সকল কর্মসূচীতে সক্রিয়ভাবে ছিলেন। করোনাকালে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। স্বচ্ছ এবং ক্লিন ইমেজ রয়েছে। কর্মী বান্ধব, মাদক ও বির্তকিত নয় এমন নেতাকেই মূল নেতৃত্ব দেয়ার কথা জানান। তারা আরও জানান, যারা দীর্ঘ দিন থেকে ত্যাগ স্বীকার করে মুজিব আদর্শ ধারণ করে রাজনীতি করে এসেছে তাঁরাই যেন মূল্যায়িত হয়। এদিকে এর মধ্যে সভাপতি পদে রংপুর কলেজের সাবেক জিএস ওয়াসিমুল বারী শিমু, জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক লক্ষিণ চন্দ্র রায়, যুবলীগ নেতা মিজানুর রহমান মায়া, জেলা যুবলীগের সদস্য মাসুদ রানা বিপ্লব, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফখরুল হাসান লিউ, যুবলীগ জেলা কমিটির সাবেক প্রচার সম্পাদক হাসানুল কবীর তুহিন ও সাধারণ সম্পাদক পদে জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক কামরুজ্জামান শাহিন, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মেহেদী হাসান সিদ্দিকী রনি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান কানন, যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক ডা. লুৎফে আলী রনি, যুবলীগ নেতা ডিজেল আহমেদ, শহর ছাত্রলীগের সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক মাহফুজার রহমান বুলেট আলোচনায় রয়েছেন। সর্বত্র এখন আলোচনা করছেন, হচ্ছেন সভাপতি ও সম্পাদক। দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর রাশেদুন্নবী জুয়েলকে আহবায়ক ও মামুনুর রশিদ মামুন, লগ্নি চন্দ্র দাস, কামরুজ্জামান শাহিন, শেখ সাদি এবং ডা. লুৎফে আরা রনিকে যুগ্ম আহবায়ক করে ৪১ সদস্যের জেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। সেই সময় ৯০ দিনের মধ্যে সম্মেলন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো। ৫ বছর পরও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে না পারায় ও অগঠনতান্ত্রিকভাবে যুবলীগের কমিটি পরিচালনা করার অভিযোগে জেলা যুবলীগের কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। এ ছাড়া জেলা যুবলীগের আহবায়ককে ১৫ দিনের মধ্যে লিখিতভাবে কারণ দর্শাতে বলা হয়। ২০১৮ সালে মে মাসে তৎকালীন কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ হারুন স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে এ কথা জানানো হয়। এর মধ্যে ২০১৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিহাতীর এলেঙ্গার ভূঞাপুর সংযোগ সড়কের কাছে ট্রাক-পাজেরো সংঘর্ষে আহবায়ক রাশেদুন্নবী জুয়েল নিহত হন। পরবর্তী সময়ে কমিটি পুনর্বহাল করা না হলে তাদের দলীয় কার্যক্রমে ভাটা পড়ে। একারণে বর্তমান যুবলীগ নেতৃবৃন্দ ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা দেয়। এনিয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে কেন্দ্রীয় যুবলীগ ও রংপুর জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের নজরে পড়ে। এর পরেই ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর কেন্দ্রীয় যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল নির্বাচিত হয়ে রংপুর জেলা যুবলীগ কমিটি সচল করার উদ্যোগ নেন। কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যাগের অংশ হিসেবে চলতি বছরের ২৪ থেকে ২৭ জানুয়ারির মধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে জীবনবৃত্তান্ত কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এতে রংপুর জেলা যুবলীগের সভাপতি পদে ১৯ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ২৩ জন জীবনবৃত্তান্ত পাঠান। তার পর থেকে কমিটি ঘোষণার অপেক্ষায় থাকেন রংপুরের যুবলীগের নেতাকর্মীরা। এরই মধ্যে কেন্দ্র থেকে জেলা যুবলীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয় আগামী ৫ নভেম্বর শনিবার। সম্প্রতি জেলা কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মামুনুর রশিদ পদত্যাগও করেছেন। এদিকে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেছেন, বিতর্কিত কয়েকজন নেতা পদ পাওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। তারা বিভিন্ন মাধ্যমে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে তদবির করছেন। ম্যানেজ করার চেষ্টা করছেন। এনিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝেও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।